ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

চলমান এসএসসি পরীক্ষায় ভুয়া প্রশ্নপত্রের ফাঁদ

প্রকাশ: ২০২১-১১-১৪ ১৮:৪৮:৪৪ || আপডেট: ২০২১-১১-১৪ ১৮:৪৮:৪৪

সিএসবি টুয়েন্টিফোর ডেস্কঃ

প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার সময় কিছু অসাধু চক্র টাকা হাতিয়ে নিতে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার চেষ্টা করে এবং তাতে ব্যর্থ হলে প্রশ্নফাঁস করার নামে প্রতারণার জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ নিয়ে ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক মাধ্যমগুলোতে প্রচারণা চালায়। এমনই দুটি প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ।

রবিবার (১৪ নভেম্বর) বিকালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান হাফিজ আক্তার এই তথ্য জানান।

ঢাকার উত্তরা, গাজীপুরের পূবাইল থানা এলাকা এবং নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। চক্রটি পরীক্ষার প্রশ্ন দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো‑ কালিমুল্লাহ, আল-রাফি ওরফে টুটুল ও আব্দুল্লাহ আল মারুফ ওরফে তপু।

তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৩টি স্মার্টফোন, ২টি বাটন ফোন, নগদ ১২ হাজার টাকা এবং ৬টি মোবাইল সিম। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ডিবি পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান।

তিনি বলেন, যে কোনও পাবলিক পরীক্ষার আগে আমাদের সাইবার পেট্রোলিং বৃদ্ধি করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এই দুটি প্রতারক চক্রকে গ্রেফতার করা হয়।

ডিবির সূত্র জানিয়েছে, এই চক্রটি মূলত বিভিন্নভাবে বেনামে ফেসবুক একাউন্ট খুলে মেসেঞ্জারে এবং ফেসবুকে শতভাগ নিশ্চয়তা সহকারে বিভিন্ন বোর্ডের সকল বিষয়ের প্রশ্নফাঁস করার বিজ্ঞাপন দিয়ে পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করে।

প্রশ্নফাঁসের এই চক্রের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার জন্য পরীক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদেরকে প্রাথমিকভাবে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে সদস্য হতে হয়। প্রতিটা প্রশ্নের জন্য তাদের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো চক্রটি।

এই চক্র বিভিন্ন পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরকে জানাত, ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলা এবং জেলা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন বহনকালে দায়িত্বশীলদের একজন কৌশলে একাধিক প্রশ্ন সরিয়ে রেখে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবে। সেই ছবি তারা বিভিন্ন জনকে মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাফে এবং জিমেইলে সেন্ড করে দিবে। এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা নগদ, বিকাশ, রকেটের মাধ্যমে পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কারিমুল্লাহ টঙ্গী সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, আল রাফি টুটুল মোহনগঞ্জ সরকারি কলেজের মানবিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং আব্দুল্লাহ আল মারুফ ঢাকার হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজর অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা বলে তারা যেসব মেসেঞ্জার, ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে প্রতারণা করতো সেগুলো হলো- কোশ্চেন ব্যাংক, এসএসসি কোশ্চেন ২০২১, এইচএসসি কোশ্চেন ২০২১, কোয়েশ্চন্স লিক, পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি- All Exam Helping Zone এবং এসএসসি ২০২১ সকল বোর্ড ইত্যাদি। সবগুলো পেজ ও ম্যাসেঞ্জারে থাকা সদস্য ও চক্রগুলোর তথ্য সংগ্রহ করেছে ডিবি।

এ প্রতারক চক্রের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপের ফলোয়ারের সংখ্যা ৪ হাজার ৭০০ জন।

পাবজি খেলায় পটু আল রাফি ও টুটুল সাইবার সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ে যথেষ্ট ধারনা রাখে। আল-রাফি ওরফে টুটুল ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য “আলমগীর হোসেন” নামে একটি ফেক আইডি খুলে। আইডিটি খোলার জন্য সে একটি টেম্পোরারি মেইল আইডি নিদিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে। এই ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও টেম্পোরারি মেইলটি দুই থেকে তিন দিন সক্রিয় থাকার পরে অটোমেটিক্যালি ডিঅ্যাক্টিভেটেড হয়ে যায়।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতরা আসলে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। তাদের পক্ষে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা অসম্ভব। কিছু ছাত্র এবং অভিভাবক পড়াশোনাতে মনোযোগ না দিয়ে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ক্রয়ের জন্য ব্রাউজ করতে থাকে। গ্রেফতারকৃত প্রতারকরা মূলত এদেরকেই টার্গেট করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার নানা রকমের আকর্ষণীয় প্যাকেজের কথা বলতো।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের বিরুদ্ধে ম্যানুয়ালি এবং সাইবার পেট্রোলিংয়ের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসে জড়িতদেরকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, “যে সকল ছাত্র এবং অভিভাবক ওই চক্রের সঙ্গে প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা করে তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।”