ঢাকা, সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

“এক বহুরূপী গল্প”

প্রকাশ: ২০১৫-০৪-০৪ ২১:৫১:৫১ || আপডেট: ২০১৫-০৪-০৪ ২১:৫১:৫১

এম. দুলাল মিয়া
আট মাস বয়সী জরিনা। পৃথিবীতে ভূমিষ্ট হওয়ার পর জরিনার বাবা মারা যায়। জরিনার পরিবারে রয়েছে দুই ভাই ও জরিনাসহ তিন বোন। বাবা মারা যাওয়ার পর জরিনার পরিবারে পিতার হাল ধরেন বড়ভাই রহমত। তখন রহমত আলীর খুব অল্প বয়স। তিনি সবেমাত্র সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। জরিনার বাবা মারা যাওয়ায় তাদের সুখের সংসারে নেমে আসে করুন দূর্বিসহ যন্ত্রণা। তখন তাদের নুন আনতে পানতা ফুরায়।

এমন কষ্টের দূর্দিনে বড় হতে থাকে জরিনা। পরিবারের সবার ছোট্ট মেয়ে হিসাবে সবাই তাকে আদরও করে একটু বেশি। জরিনার বয়স যখন সাত বছর পূর্ন হয় তখন ভর্তি হয়, বাড়ির পাশের মাদ্রাসায়। জরিনা যখন ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ে তখন তার বড় বোন হাসিনার বিয়ে হয় পাগলা গ্রামের প্রতিবন্ধী টোড়া আবুলের সাথে। জরিনার পরিবারে আলোর শিখা জ্বলে ওঠে। এক সময় এলাকার মায়া মমতাবান মানুষের হাত ধরে জরিনার বড় ভাই রহমত বিদেশে পাড়ি জমায়। ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে থাকে জরিনার পরিবারের ভাগ্যের চাকা। উচ্চ স্বপ্নে পা বাড়ায় জরিনার অর্থলোভী মা রহিমা বিবি। জরিনার দুলাভাই টোড়া আবুল জরিনাকে খুব বেশী ভালবাসত। যখন দুলা ভাই বেড়াতে আসত স্বাদের শাশুড়ির বাসায়, তখন

মিষ্টি,জিলাপি,বাদামভাজা,চিনাবাদাম আরো কত কিছু নিয়ে আসত আদরের শালির জন্য। বিনিময়ে শালির ছিল দুলাভাইয়ের প্রতি অকৃতিম ভালবাসা। ২০০৮ সাল দুলাভাই টোড়া আবুল আদরের শালী জরিনাকে দেখার পর বললÑহায় শালী কেমন আছো ?

শালী-ভালো আছি দুলাভাই।

টোড়া আবুল(দুলাভাই)-শালী তোমার জন্য না মন কাঁদছে, তাই ছুটে আসলাম।

শালী- থ্যাংক ইউ দুলা ভাই। তুমি না সত্যিই আমার অনেক আপন মনের মানুষ।

দিন যত ঘনিয়ে আসে ও দুলা ভাইয়ের একে অপরের প্রতি গড়ে ওঠে মায়া মমতার বন্ধন। জরিনার অর্থলোভী মা রহিমা বিবি ও বড় মেয়ের জামাই হিসেবে টোড়া আবুলকে বেশী কদর করত। জমে ওঠে বেশ বিশ্বাসতা। জরিনার দুলাভাই আবুল প্রতিবন্ধী হলেও খুবই চালাক। ঘন ঘন চলে আসে শাশুড় বাসায়। কারন শালীকে তার অনেক বেশী ভাল লাগত।

মাদ্রাসার বার্ষিক পরীক্ষা এর মধ্যে কোন এক মন দেওয়া নেওয়ায় শালী ও দুলা ভাইয়ের মধ্যে জমে ওঠে প্রেম প্রেম ভাব। দুলাভাই একদিন শালীকে বললÑ

আরে শালী জীবন খালী,

তুমি ছাড়া আঙ্গুলহীন আমার হাতে বাজেনা তালি।

হ্যা..হ্যা…হ্যা…দুলাভাই

কি আর চাই..তুমি ছাড়া জীবন গড়া, খুব কষ্ঠের দায়।পাগল হয়ে যায় শালীর কথা শুনে দুলাভাই।

৭ম শ্রেণীর প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। জরিনার চোখে মুখে ঘুরে দাড়াঁনোর স্বপ্ন। পড়া লেখায় মন দেওয়ার চেষ্টা কিন্তুু প্রেমের আঘাত দুলাভাইয়ের চিন্তা মনের ভেতর উকি দিূেয় জরিনাকে খুব বেশি কষ্ট দিচ্ছে। হঠাৎ করে দুলা ভাই টোড়া আবুল ও বিদেশে পাড়ি জমায় বেচে থাকার তাগিদে। পরিবর্তন আসে জরিনার স্বপ্নে। ভালোতো জরিনা কিছুতেই হতে পারছেনা। কারন তার সর্বনাশা দুলাভাই আবুল ও সিকদার তার সাজনো পবিত্রতাকে অপবিত্র করে দিয়েছে। তার পর ও প্রেম যুদ্ধে ঠিকে থাকতে চেষ্টা করলেন নষ্টা জরিনা। মাদ্রাসায় নিয়মিত আসা যাওয়া করতে লাগল। মাদ্রসায় আসা যাওয়ার পথে দেখা হয় ভালবাসা গ্রামের অশিক্ষত যুবক ফরহাদের সাথে। ফরহাদ পেশায় একজন সিএনজি চালক। নষ্টা মেয়ে জরিনাকে প্রথম দর্শনে তার খুবই ভাল লাগে। কিছু একটা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফরহাদ। ২য় সাময়িক পরীক্ষা শুরু হতে কিছু দিন বাকি। জরিনা ভালবাসার অফার পায় বেকার শিক্ষিত যুবক এম.এ কলিমের। কলিম প্রেম বলতে তেমন কিছু চিনেনা। কলিমের বন্ধু রহিম তাকে প্রেম করা শিখিয়ে দিল। এর ফাকে জরিনা গভীর প্রেমে পড়ে যায় সিএনজি চালক ফরহাদের। কী করবে জরিনা দ্বি-মুখী প্রেম চালিয়ে যেতে থাকে জরিনা। এর মধ্যে মোবাইল ফোনে প্রেম চলে জরিনার। আবেগের তাড়নায় জরিনা ফরহাদকে রোজার ঈদের দিন তাদের বাসায় রাতের বেলায় দাওয়াত দেয়। জরিনা কৌশলে ফরহাদকে নিজের বেড রুমে নিয়ে গিয়ে গোপন প্রেমে মেতে ওঠে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস,এলাকাবাসী জরিনার বেড রুম থেকে আপত্তিকর অবস্থায় দু,জনকে আটক করে। কষ্টে ভোগে জরিনা ফরহাদ। কিন্তু এর পরে ও জরিনার দ্বি-মুখী প্রেম চলছিল শিক্ষিত বন্ধু কলিমের সাথে। কলিম এতিম মেয়ে ভেবে জরিনাকে পাশে টানে। ভালো পথে এগিয়ে নিতে স্বপ্ন দেখায়। পড়া লেখার তাগিদ দেয়। ভাল ফলাফল ও করে। তখন ও চলে নষ্টা জরিনার চতুর্মুখী প্রেম। এলাকায় জরিনার অনেক দূর্নাম ছড়িয়ে পড়েছে। জরিনাকে দেখলে এলাকার যুবক,বৃদ্ধ এমন কি সকল শ্রেণীর লোকেরা হু হু করে হাসে এবং নষ্টা মেয়ে হিসেবে মন ভরে ঘৃনা করে। তার পরও বিশ্ব বিখ্যাত প্রেমবাজ জরিনার মনে কষ্টের দাগ কাটেনি। একপর্যায়ে গাড়িচালক ফরহাদও জরিনাকে ভালবাসার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। মুহুর্তের জন্য ও কষ্ট পায়না জরিনা। কারন জরিনাতো বহুরুপি। তার দুলাভাই তাকে ১০বছর বয়সে ভালবাসায় ও প্রেমে পাকা বানিয়ে ফেলেছে। হঠাৎ করে জরিনার মনে কষ্ঠ চলে আস্।ে মায়ের মোবাইল ফোন নিয়ে কল দেয় কলিমের ফোনে।

জরিনা- হ্যালো আপনি কি কলিম?

কলিম- আমি কলিম, আপনি কে?

জরিনা- আমি আপনার সেই জরিনা।

কলিম-অ-মাই গড! তুমি কেমন আছো জরিনা?

জরিনা-ভালো। প্লিজ একবার বলোনা আই লাভ ইউ।

কলিম- অকপটে বলে ফেলে আই লাভ ইউ জরিনা। কারন কলিম তো কোনদিন প্রেম করেনি। জানেনা প্রেম কি? কলিম জরিনাকে পড়ালেখায় সহযোগিতা করতে থাকে। ৭ম শ্রেনীর বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলে জরিনা মেধা তালিকায় স্থান করে নেয়। তাক লাগিয়ে দেয় সবাইকে। জরিনার মা রহিমা বিবি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। কারন তার নষ্টা মেয়ে জরিনা যে এতো ভালো ফলাফল করবে তা রহিমা বিবি কোনদিন আশা করেনি। এলাকার মানুষের সাথে জুহুরা বিবি মাথা উচু করে কথা কলতে শুরু করল। যাই হোক জরিনা মোটামুটি ক্লাশের ভাল ছাত্রী। ছাত্রী হিসেবে ভাল হতে পারলেও ভাল হতে পারেনি প্রেমিকা হিসেবে। অনেক ছেলেদেরে সাথে প্রেম নিবেদন ও টাংকিমারা জরিনার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। ভাত না খেতে পারে, প্রেম না করে থাকতে পারেনা জরিনা। জরিনার বহুরুপি ভালবাসার কথা টের পায় শিক্ষিত যুবক কলিম। আস্থে আস্থে জরিনার জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে থাকে। কলিম নিজে ও কষ্ট পায়, তার পরও ভুলে যায় বহু রুপি জরিনাকে। কারন কলিমের জানা হয়ে গেছে বহুরুপি জরিনার গুণ বলতে কিছু নেই। রুপই একমাত্র জরিনার ভালবাসার সম্বল। এই রুপকে পুজি করে মা- মেয়ে ভালবাসার হাট বসায়। শেষ পর্যন্ত জরিনার পরিনতি কোনদিকে গড়ায় তা কেউ জানেনা। এত কিছুর পরও জরিনার মনে কোন কষ্ট নেই। প্রেম ভালবাসা জরিনার কাছে সস্তা অসময়ের মুলার মত। জরিনাকে ক্লাস মেইট ছেলে মেয়ে ও এলাকার লোকজন অনেক ঘৃনা করে। কিন্তু তাতে কি? জরিনার মা ও জরিনা সব কথা সহজে পাশ কাটিয়ে দিতে পারে। এর পরও জরিনা প্রেমের সাথে রঙ লাগিয়ে চলাফেরা করে। শিক্ষিত বন্ধু কলিমের হাত ধরে ক্লাসের ভাল ছাত্রী হয় জরিনা। কলিম জরিনাকে ভাল পথে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে কিন্তু বহুরূপীয়তার কারণে ব্যার্থ হয় । তারপরও জরিনার বাক মেইল থেকে রক্ষা পায়না যুবক ছেলেরা। এত কিছুর পরও জরিনা ভাল হওয়ার স্বপ্ন গুণে। ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়। গতবছর পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে লাভ গ্রেডে পাশ করে জরিনা। ভর্তি হয় পেমপুর কলেজে। কলেজে পড়া কালীন সময়ে জরিনা তিন ডজন খানেক ছেলের সাথে টাঙ্খি মারে। তবে এত প্রেম করল বিয়ে করতে পারেনি একজন শিক্ষিত মেট্রিক পাশ যুবককেও। প্রেম পুর কলেজ থেকে আই এ পাশ করার পর জরিনা স্থানীয় একটি প্রেম শিখন কেন্দ্রে চাকুরী করে। বিয়েও করে একজন বিদেশী বন্ধুকে। বিদেশী বন্ধু মহব্বত জরিনাকে প্রথম দর্শনে স্ট্রোক করার মত খুশি হয়। সে মনে মনে বলতে থাকে জীবনে যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। বিদেশ থেকে আয় করার টাকা দিয়ে খুব সুন্দর করে সংসার সাজাবো, এই আশাই ছিল মহব্বতের। সংসার চলতে থাকে মহব্বত-জরিনার। সংসারের ২/১ মাস যেতে না যেতে জরিনার জীবনে নেমে আসে বিষন্নতার কালো ছায়া। কারণ জরিনার স্বামী মহব্বতকে জরিনার আগের ভালবাসার তিন ডজন খানেক প্রেমিক জরিনার অপকর্মের কথা জানিয়ে দেয়। স্বামী মহব্বত এই কথা শুনে রীতিমত হিমশিম খায়। মারধর করতে থাকে জরিনাকে। জরিনা বাবার বাড়িতে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। গ্রাম্য বিচার সালিশে জরিনা স্বামীর বাসায় ফিরে আসে। কিন্তু মাতাল জীবন উপহার নেয় জরিনার স্বামী মহব্বত। এত অপকর্মের দায় থেকে নিজে বেচে থাকতে জরিনাকে তালাক দেয় স্বামী মহব্বত। ফলে জরিনার জীবন সংসার চারিদিকে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। স্বামীর কারনে চাকরীও হারাল। বিয়ের পর পরেই জরিনার মা মারা যায়। সে সমাজে কোথাও ঠাই পাচ্ছেনা। সমাজের সবাই থাকে ঘৃনা করে। চেহেরা দেখলে থু থু ছিটে। সর্বনাশা জরিনা একূল, ওকূল দু’কূল হারিয়ে ফতুর হয়ে গেল। ঘর থেকে বের হয় গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার উদ্দ্যেশে। শেষ পর্যন্ত জরিনার ঠাই হয় দেশের নামকরা এক পতিতালয়ে। সর্বনাশ! জরিনার জীবন, সর্বনাশ! জরিনার ভালবাসা, সর্বনাশ! জরিনার স্বপ্ন। কিছুই করতে পারেনি লম্পট দুলাভাই টোড়া আবুল ও অর্থ লোভী মা রহিমা বিবির কারণে। গল্পটি লেখকের নিজস্ব মতামতে সাজানো। কোন বিশেষ প্রেম ও ভালবাসার সাথে অত্র গল্পের কোন মিল নেই। লেখক +৮৮০১৮১৩-২৪৭৭৮১