ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

কক্সবাজার মহকুমা সংগ্রাম কমিটির ট্রেজারার এডভোকেট মওদুদ আহমদ আজিজুল হক বিন খলিলুর রহমান

প্রকাশ: ২০১৪-১১-০২ ১৬:০৫:৪৪ || আপডেট: ২০১৪-১১-০২ ১৬:০৫:৪৪

Ad. Moudud
মওদুদ আহমদ। বাড়ি মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী এলাকায়। পেশায় প্রথম জীবনে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা, পরে আইনজীবী। মুুক্তিযুদ্ধকালীন কক্সবাজার মহকুমা সংগ্রাম কমিটির ট্রেজারার হিসেবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে একজন নিবেদিত সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। দীর্ঘদিন মহকুমা আওয়ামী লীগ এর প্রভাবশালী নেতা ও স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাসদ প্রতিষ্ঠা হলে আওয়ামী লীগ ছেড়ে জাসদে যোগ দেন এবং কেন্দ্রিয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পরে বিভন্ন পদে অধিষ্ট হয়ে জাসদেই আমৃত্যু রাজনীতি জীবন অতিবাহিত করেন।
কক্সবাজার জেলায় যে ক’জন সাহসী পুরুষ নিরলসভাবে সমাজ সেবা, রাজনীতি ও নানা জনহিতকর কাজে নিয়োজিত তাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। বিভিন্ন বিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষকতার পর গণমানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকারে ১৯৬৫ সালের ২৫ নভেম্বর কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ লাভ করেন এবং আমৃত্যু আইন পেশায় সততার সাথে নিয়োজিত ছিলেন। আইন পেশায় যুক্ত হয়ে অসংখ্য গরীব ও অসহায় মানুষের পক্ষে বিনা পারিশ্রমিকে আইনী লড়াই করেছেন। বিগত ষাটের থেকে শুরু করে আমরণ নিরলসভাবে রাজনৈতিক কর্মতৎপরতার মধ্য দিয়ে কক্সবাজার জেলায় ও জাতীয় রাজনীতিতে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।
এড. মওদুদ আহমদ ছাত্র জীবনে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি তৎকালিন পাকিস্তান নেজামে ইসলাম পার্টি সমর্থিত ‘পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সমাজ’ এর সদস্য ছিলেন। তিনি তৎকালিন পাকিস্তানের আইয়ুব খাঁন বিরোধী আন্দোলনে সম্মিলিত বিরোধীয় পার্টির সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সমাজ কল্যাণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ কমান্ড কাউন্সিলের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সমন্বয়কারি ও কক্সবাজার এরিয়া মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা পরিষদের ট্রেজারার ছিলেন। এর আগে নেতৃত্ব দেন ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন ও ১৯৬৬ সালের ৬ দফা কর্মসূচির আন্দোলনে। ৬ দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজার মহকুমায় শুরু হয় বিভিন্ন সভা মিছিল। এ সময়- এডভোকেট নুর আহমদ, তৎকালিন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক এডভোকেট জহিরুল ইসলাম, এডভোকেট মওদুদ আহমদ, ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী, একেএম মোজাম্মেল হক, শমসের আলম চৌধুরী, বাদশা মিয়া চৌধুরী, কামাল হোসেন চৌধুরী, ছাত্রনেতা নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও ছুরুত আলম সহ আরো অনেকে ছয় দফা দাবির সমর্থনে কক্সবাজার মহকুমায় মিছিল সভাবেশ করে। ওই সময় জনগণের পক্ষে বিপুল সাড়াও পান।
৬ দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টিতে মওদুদ আহমদের নিজের জন্মস্থান মহেশখালীতে একটি জনসভার আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক মওদুদ আহমদ নির্ধারিত তারিখের এক দিন আগে মহেশখালীতে গিয়ে ছয় দফার পক্ষে মাইকিং শুরু করে। পরদিন এডভোকেট নুর আহমদ ও এডভোকেট জহিরুল ইসলাম ছয় দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে বড় মহেশখালীস্থ মওদুদ আহমদের বাড়িতে পৌছে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে বড় মহেশখালী মাঠের সমাবেশস্থলে নুর আহমদ ও জহিরুল ইসলামসহ আরো অনেক অতিথি যান। এডভোকেট মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে সভা চলার অল্প কিছুক্ষণ পর আছরের আজান দিলে জনসভা কিছুক্ষণের বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয়। জনসভা চলাকালে কি হয়েছিল তা জানতে ওই সময়ে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি এডভোকেট জহিরুল ইসলাম রচিত বাংলাদেশের রাজনীতি : আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি’ নামক গ্রন্থে তিনি এভাবেই ব্যাখ্যা করেন- ‘আছরের আযার হলে এড. মওদুদ সাহেব বললেন, নামাজের পরেই মিটিং শুরু হবে। সভাস্থলে মাইক টাঙানো হলো এবং নামাজ শেষে মুসল্লিরা বেরিয়ে আসছে দেখে কিছু ছাত্র-যুবা-জনতার দৃষ্টি আকর্ষণ এবং সভা সফল করার লক্ষ্যে শ্লোগান তুলল, ‘জয় বাংলা, জয় বাংলা’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব’, ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা।’ শ্লোগানে শ্লোগানে যখন সভাস্থল মুখরিত হচ্ছিল, তখন লক্ষ্য করলাম লাঠি হাতে মোল্লা গোছের (মাওলানা আমজাদ আলির নেতৃত্বে) ৫-৭ জন লোক সভা মঞ্চের দিকে ছুটে আসছে সভা পন্ড করে দেওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে। (উল্লেখ্য, বইটিতে মওলনা আমজাদ আলির নাম উল্লেখ না থাকলেও আমি (লেখক) প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে নাম উল্লেখ করলাম।) তাদের অনুরোধ করলাম তারা যেন মঞ্চের দিকে না আসে এবং জানতে চাইলাম আমাদের অপরাধ কী? একজন চিৎকার করে জবাব দিল এখানে আমার নেতা তোমার নেতা শেখ মুজিব শ্লোগান দেয়া যাবে না। শ্লোগান দিতে হবে ‘আমার নেতা তোমার নেতা বিশ্বনবী মোস্তফা।’
আমি তাদের উদ্দেশ্যে বললাম, ‘তাঁরা মৌলভী ফরিদ আহমদ, খতিবে আজম মৌলানা ছিদ্দিক আহমদ, চৌধুরী মো. আলী এদেরকে নেতা বলেন এবং তাদের নামে জিন্দাবাদ ধ্বনি উচ্চারণ করেন। সেটি যদি অপরাধ না হয়, তাহলে আমাদের নেতা শেখ মুজিব শ্লোগান হলে তা নিয়ে প্রতিবাদ হবে কেন? আমি বললাম, বিশ্বনবী মোস্তফা রাহমাতুললিল আলামীন আল্লাহু তাকে সৃষ্টি জগতের রহমত হিসেবে নাযিল করেছেন। সেই মহান পুরুষকে রাজনীতিক মাঠের নেতার পর্যায়ে আনার চেষ্টা করা হলে এতে করে আল্লাহুর রসুলকে অপমাণিত করা হবে, তাঁকে ছোট করা হবে। কিন্তু তারা আমার কথা না শুনে ক্রমশ মাইকের কাছে চলে এসেছে। ওই সময় বন্ধু এডভোকেট মওদুদ আহমদ হঠাৎ আমার হাত থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় অকথ্য গালিগালাজ করে ওই সমস্ত লোকদের বললেন, এক পা এগুলে, তাদের মাথা ভেঙে যাবে।’
মওদুদ সাহেবের শোরচিৎকারে তখন অনেক লোক সভাস্থলে সমাবেত হয়েছে এবং উপস্থিত জনগণও আমাদের কথা শুনতে আগ্রহী এটা বুঝতে পেরে মুসল্লিরা পশ্চাদপরন করতে শুরু করল। মওদুদ সাহেবকে মাইক ছেড়ে দিয়ে আমাকে ও নুর আহমদকে বক্তৃতার সুযোগ করে দিতে বললে তিনি বললেন, আপনার বসে থাকেন। আমি বক্তৃতা করব। মওদুদ সাহেব তাঁর জীবনে প্রথমবারের মতো মঞ্চে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশ্যে দীর্ঘক্ষণ জ্বালাময়ী বক্তৃতা করলেন। আগে তাকে কোন সভা সমাবেশে বক্তৃতা করতে বললে তিনি রাজি হতেন না।’’ আছারের নামাজের পর শুরু হওয়া জনসভা রাত প্রায় ১০টায় শেষ হয় এবং প্রায় ৭/৮ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল উক্ত জনসভায়।
ছয়দফা আন্দোলনের পর উনসত্তরের গণঅভূত্থান, অসহযোগ আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ বাঙালির আত্মসংগ্রামের জন্য লড়াই করেছেন।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালিন ভিপি আ.স.ম আবদুর রব স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন। এর রেশ ধরে স্বাধীনতার স্বপক্ষে ৩ মার্চ কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক জনসভার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই দিন এ.কে.এম মনসুর উল হক, আল মামুন শামসুল হুদা, সুনীল কৃষ্ণ দে (জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃতি ফুটবলার), ফরিদুল আলম চৌধুরী, টেকপাড়ার ছুরত আলম (সাবেক জেলা দলের গোলকিপার), আবদুল কাদের, মোহাম্মদ আলী, প্রিয়তোষ পাল পিন্টু (দৈনিক সংবাদ ও দৈনিক পূর্বকোণের কক্সবাজার সংবাদদাতা এবং স্থানীয় দৈনিক আজকের কক্সবাজারের নির্বাহী সম্পাদক ও বার্তা বিভাগের প্রধান) প্রমুখের নেতৃত্বে কক্সবাজারে প্রথম পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয় সভাস্থলে। ওই সভায় একেএম মোজাম্মেল হক, এডভোকেট জহিরুল ইসলাম, এডভোকেট মওদুদ আহমদ, নুর আহমদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বিশেষ অতিথি ছিলেন।
৭ মার্চের ভাষণের পর কক্সবাজারে স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারা আরো বেগবান হয়ে উঠে। ওই সময়ের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নেতার মধ্যে অনত্যম এডভোকেট মওদুদ আহমদ। ১০ মার্চের দিকে মুক্তি সংগ্রাম পরিচালনার লক্ষ্যে একটি সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। এডভোকেট মওদুদ আহমদ উক্ত কক্সবাজার মহকুমা সংগ্রাম পরিষদ কমিটির ট্রেজারার নিযুক্ত হন এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন।
১৯৭১ সালের মার্চের শুরু থেকেই কক্সবাজার মহকুমায় আওয়ামী লীগের দু’টি অফিস ছিল। একটি সাংগঠনিক অফিস ও অন্যটি কন্ট্রোল রুমে। সাংগঠনিক অফিসে এডভোকেট মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ মানুষ প্রদত্ত সাহায্য-সহযোগিতা গ্রহণ করতেন।
’৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে যুদ্ধ শুরু হলেও মহেশখালীতে থানায় হানাদার বাহিনী আসেন ৭ মে এবং প্রথমে আগুন দেন জেটি ঘাটের রাখাইনদের মন্দিরে। ঐ দিন বড় মহেশখালীর নতুন বাজারে হানাদার বাহিনীর নির্দেশে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। ঐ দিন জুহুরের নামাজের পর নতুন বাজারের উত্তর পার্শ্বের মসজিদ গেইটে মাওলানা মুফতি মোজাফ্ফর আহমদ লুটপাটকারীদের সম্পর্কে বলেন, ‘কোন যুদ্ধে জয়ী হয়ে হিন্দুদের ধন সম্পদ লুট করছ?’
এডভোকেট মওদুদ আহমদ স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর জাসদ প্রতিষ্ঠা হলে প্রতিষ্ঠাতা কেন্দিয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। পরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার আহবায়ক, কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ও জাতীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি আজীবন রাজনীতি ও আইন পেশায় থেকে গণমানুষের উপকার করে গেছেন।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের ১ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এডভোকেট মওদুদ আহমদ কক্সবাজার-মহেশখালী আসন থেকে জাসদ প্রার্থী হিসেবে মশাল প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী খান বাহাদুর মোশতাক আহমদ চৌধুরীর (বর্তমানে কক্সবাজার জেলা পরিষদ প্রশাসক) বিরুদ্ধে নির্র্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জনগণের বিপুল সমর্থন আদায়ে সক্ষম হন। ওই নির্বাচনে ড. আনছারুল করিম কুঁড়ে ঘর মার্কা নিয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর প্রার্থী হিসেবে একই আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। (উল্লেখ্য, আনসারুল করিম সম্পর্কে এডভোকেট মওদুদ আহমদের শ্যালক।) তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর কাছে সামান্য ভোটে হেরে যায়। এড. জহির তাঁর উল্লেখিত গ্রন্থে উল্লেখ করেন- প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রবল চাপের মুখে সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষে অনেকটা প্রকাশ্যে কাজ করতে বাধ্য করা হয়।
এড. মওদুদ আহমদ তাঁর রাজনৈতিক জীবনে গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় কারাবরণ করেন। এমনকি যে আওয়ামী লীগের জন্য তিনি জীবনবাজি রাখতে প্রস্তুত ছিলেন সে আওয়ামী লীগ সরকারও তাকে কারাগারে পাঠায়।
জীবনী
১৯৩৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মহেশখালীর বড় মহেশখালী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।
তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব মোহাম্মদ জহির এবং মাতার নাম কমল জান। তাঁর দ্বিতীয় মাতার নাম মনছুর জান। ১৫ সন্তানের মধ্যে এড. মওদুদ আহমদ দ্বিতীয় সন্তান। ১৫ ভাই-বোনের মধ্যে ৬ জন ছেলে ও ৯ জন মেয়ে।
ব্যক্তিগত জীবনে এড. মওদুদ আহমদ অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। তিনি নীতির প্রশ্নে আপোষহীন ছিলেন। তিনি অত্যন্ত বিনয়ী, মিষ্টভাষী, সহজ সরল ও উদার হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। ছাত্র জীবনে এডভোকেট মওদুদ আহমদ একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে ব্যাপক সুনাম কুঁড়িয়েছিলেন। তিনি প্রাথমিক কুরআন শিক্ষা অর্জন করেন আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ মাওলানা ফজল আহমদের কাছে। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় বড় মহেশখালী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তিনি মহেশখালী এইচ.ই স্কুল (বর্তমান মহেশখালী মডেল হাই স্কুল) হতে ১৯৫১ সালে ঢাকা বোর্ডের অধিনে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিকুলেশান, ১৯৫৩ সালে পটিয়ার কানুনগো পাড়া স্যার আশুতোষ কলেজ হতে ইন্টারমিডিয়াট ও ১৯৫৬ সালে বিএ এবং ১৯৬৬ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটির অধীনে চট্টগ্রাম ’ল কলেজ হতে এলএলবি পাশ করেন। উল্লেখ্য, তিনি মহেশখালী উপজেলার প্রথম এডভোকেট। এড. মওদুদ আহমদ ১৯৫৬ সাল হতে ১৯৬৬ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তিনি খুরুশকুল হাই স্কুল, উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রত্মাপালং উচ্চ বিদ্যালয় ও চকরিয়ার ইলিশিয়া জমিলা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কক্সবাজার সরকারি কলেজের অবৈতনিক শিক্ষক ছিলেন।
এড. মওদুদ আহমদ ১৯৮৬ সাল হতে ১৯৯০ সালের ২ নভেম্বর পর্যন্ত সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) হিসেবে সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। তিনি কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির ১৯৭২ সালে সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৮৭ সালে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এড. মওদুদ আহমদ কক্সবাজারস্থ সোনালী ব্যাংক এর আইন উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আদালতের মাধ্যমে অনেক ঘটনার বিচার করা কষ্টকর ব্যাপার হওয়ায়, তা শালিশের মাধ্যমে সমাধান দিত। শালিশ করার আগে তাঁকে বলতে শুনেছিÑ ‘আমি বিচার করবো না, বিচার করবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ’। আমি শুধু মিমাংসাই করবো।
এড. মওদুদ আহমদ একজন ধর্মপ্রাণ শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক ছিলেন। তিনি মহেশখালী জুনিয়র হাই স্কুল (বর্তমান মহেশখালী আইল্যান্ড হাই স্কুল), মহেশখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মহেশখালী ডিগ্রী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা ও দাতা ছিলেন। সম্প্রতি মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নে মরহুমের নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
তিনি ১৯৯০ সালের ২ নভেম্বর শুক্রবার রাত ১টা ৫৭ মিনিটে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র
১। কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি কর্তৃক গৃহিত শোক প্রস্তাবের কপি, ১১ নভেম্বর ১৯৯০।
২। অধ্যাপক নুর আহমদ এডভোকেট, কক্সবাজারের ইতিহাস, অক্টোবর ২০০৫, কক্সবাজার।
৩। অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশের রাজনীতি : আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি’ ফেব্রুয়ারি ২০১২, অঙ্কুর প্রকাশনী ঢাকা।
৪। কালাম আজাদ, জাতীয়তাবাদী মুক্তির সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজার, ২৮মার্চ ২০১০, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ/কালাম আজাদ, মহান মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজারের শহীদ ও দালাল, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় (অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন চৌধুরী সম্পাদিত), ১৬ ডিসেম্বর ২০০৯, উখিয়া মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা।

লেখক ঃ মরহুমের ঘনিষ্ট সহচর ও রাজনৈতিক কর্মী।