ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে গুরুত্ব দিন

প্রকাশ: ২০১৪-১১-০১ ২২:১৮:৪১ || আপডেট: ২০১৪-১১-০১ ২২:১৮:৪১

doctor
সিএসবি২৪ ডটকম॥
দেশে চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমনি ভুল চিকিৎসা কিংবা চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগও প্রচুর। এর অন্যতম কারণ, সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা মানহীন ক্লিনিক, চিকিৎসকদের অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক মনোভাবাপন্ন হয়ে পড়া ও চিকিৎসাসেবার মান নিয়ন্ত্রণে সরকারের সীমাহীন ব্যর্থতা। এই অবস্থায় প্রচুর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। রোগীর মৃত্যুর পর তাঁর স্বজনরা আবেগতাড়িত হয়ে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের ওপর হামলা করছে। হাসপাতালের মূল্যবান সরঞ্জাম ভেঙে দিচ্ছে। আবার চিকিৎসক বা হাসপাতালের কর্মচারীরা মিলে রোগীর স্বজনদের ওপরও পাল্টা হামলা করছেন। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে সরকার দুটি আইন করার চিন্তা করছে। একটি ‘রোগী সুরক্ষা আইন’, অপরটি ‘স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন’। আইন দুটির খসড়াও তৈরি হয়েছে। মতামতের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরপর মন্ত্রিসভা হয়ে আইনটি যাবে সংসদে। কিন্তু খসড়ায় স্পষ্টতই দেখা যায়, দুটি আইনেই রোগীদের চেয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে, এমনকি একই ধরনের অপরাধে শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রেও তারতম্য করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ রকম আইন হলে চিকিৎসাসেবার মান আরো নিম্নগামী হবে এবং চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকরা আরো স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠবেন।

এমনিতেই আমাদের দেশে চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে কোনো নিয়মকানুনের বালাই নেই বললেই চলে। একজন চিকিৎসকের যে সময়ে পাঁচজন রোগীর বেশি দেখার কথা নয়, দেখা যায় সেই একই সময়ে একজন নামকরা চিকিৎসক ২০ জন রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে দেন। রোগী তাঁর অসুবিধাগুলো বলার আগেই চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র লেখা শেষ হয়ে যায়। আবার একজন চিকিৎসককে দেখা যায় একাধিক ক্লিনিকের সঙ্গে যুক্ত থাকতে। এমনকি একজন শল্য চিকিৎসক বা সার্জনকেও দেখা যায় বেশ কয়েকটি ক্লিনিকের সঙ্গে যুক্ত থাকতে। ফলে একজন রোগীর অস্ত্রোপচারে যে পরিমাণ সময় দেওয়া প্রয়োজন, যে ধরনের সাবধানতা নেওয়া প্রয়োজন, আরেক ক্লিনিকে যাওয়ার তাড়া থাকায় তা তিনি করতে পারেন না। দ্রুত অপারেশন সেরে বেরিয়ে যান। এত তাড়াহুড়ায় ভুল হওয়াটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। উন্নত বা সভ্য দেশে এসব ক্ষেত্রে অনেক নিয়মকানুন রয়েছে এবং তা মানা হয়। ব্রিটিশ ন্যাশনাল ফর্মুলারি অনুযায়ী, একজন রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার আগে তাঁর রেনাল, হেপাটিক ও অ্যালার্জিক সেনসিটিভিটি দেখা বাধ্যতামূলক। দেখা প্রয়োজন কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি রোগী রেজিস্ট্যান্ট কি না। এর কিছুই না করে অধিকাংশ চিকিৎসক অন্ধভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করে থাকেন। আর ওষুধের দোকানে তো অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে কোনো প্রেসক্রিপশনও লাগে না। এই অরাজক অবস্থায় আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও যদি দুর্বলতা থাকে, তাহলে তা হবে চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকদের জন্য সোনায় সোহাগা স্বরূপ। আশা করি, আইনের খসড়া চূড়ান্ত করার আগে জনস্বার্থের বিষয়টি আরো গুরুত্ব সহকারে ভাবা হবে।