ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

সেকেন্ড হোম বানাতে বাংলাদেশও পারবে

প্রকাশ: ২০১৪-০৮-১৭ ১৩:১৭:৫৪ || আপডেট: ২০১৪-০৮-১৭ ১৩:১৭:৫৪

এসএম মুকুল::

জনশ্রুতি আছে, এ দেশের সমৃদ্ধির বারো আনাই খেয়ে ফেলে দুর্নীতি। সরকারি কাজে দুর্নীতির ঠেলায় নীতিবানদের চরম দুর্দশার শেষ নেই। বেসরকারি খাতেও এই রোগ ছড়িয়ে গেছে ক্যান্সারের মতো। আমাদের সরকারগুলোর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, স্বেচ্ছাচারিতা আর ক্ষমতার অপব্যবহারে কলুষিত হয়ে দেশ দুর্নীতির ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নীতিভ্রষ্টতা রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে ছড়িয়ে গেছে সর্বসাধারণের মাঝে। এর ফলে ধ্বংস হয়েছে সব প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চলছে নিয়ম ভাঙার মহোৎসব।

মাই সেকেন্ড হোমের গল্প দিয়েই শুরু করি। অবাক হওয়ার বিষয় হলেও ঘটনা সত্য। দুই বছর আগেও যেখানে ‘মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রাম’-এ শীর্ষ ১০-এর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল তৃতীয়, এখন তা এসে দাঁড়িয়েছে দ্বিতীয়তে। জানা গেছে, অন্তত ৪ হাজার বাংলাদেশির ‘সেকেন্ড হোম’ এখন মালয়েশিয়া! মালয়েশিয়া সরকারের ‘মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রাম’-এর সুযোগ নিয়ে ইতোমধ্যে সেদেশে প্লট বা ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন তারা।
সাম্প্রতিক খবরে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় ৪ হাজার প্লট-ফ্ল্যাট কিনেছেন বাংলাদেশের রাজনীতিক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন পেশার মানুষ। এভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। আর সেকেন্ড হোমের সুবিধা নেয়ার প্রয়োজনে ৬ হাজার কোটি এবং সরাসরি প্লট বা ফ্ল্যাট কেনা বাবদ ৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। গত ১০ বছরে এ ধরনের পুঁজি পাচার করেছেন বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে বিপুল অর্থ বিদেশে নেয়ার সুযোগ না থাকায় পুরো অর্থই পাচার হয়েছে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে। দেশের টাকায় বিদেশ সাজে_ দেশের সরকার কি ঘুমায়! বাংলাদেশ ব্যাংক কি ঘুমায়!!
বলতে আর দ্বিধা নেই, দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে গোটা বাংলাদেশ। দুর্নীতির দুর্নামে বিশ্বের তালিকায় বাংলাদেশের নাম উঠেছে বেশ কয়েকবার। অফিসের কেরানি থেকে বিগ বস; বিদ্যুৎ, শিক্ষা, ওয়াসা, ভূমি অফিস থেকে শুরু করে সব দপ্তর, অধিদপ্তর, প্রশাসক অফিস; সচিবালয় থেকে ইউনিয়ন কাউন্সিলর পর্যন্ত দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এমন কথারও প্রচলন আছে_ কোনো কোনো অফিসের চেয়ার-টেবিলও নাকি ঘুষ খায়। আমাদের মন্ত্রী-এমপি, তাদের পুত্ররা, প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীপুত্ররা, উপদেষ্টা মহাশয়রা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার খবর হামেশা প্রকাশিত হয়। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সব পেশার মানুষ। তারপরও কি সৎ মানুষ নেই! হয়তোবা সংখ্যাধিক্যে সৎ-নিষ্ঠাবান মানুষই বেশি। কিন্তু অসৎ-দুর্নীতিবাজদের দাপটে তারা আর কতকাল কোণঠাসা হয়ে থাকবে।
একটি দারিদ্র্যপীড়িত দেশে ব্যাংক থেকে ঋণের নামে যথেচ্ছভাবে অর্থ লুটপাট হয়। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে টাকা ফেরত না দেয়াটা একটা দম্ভের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে ঋণ খেলাপির সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। জনগণের টাকা নিয়ে বাড়ি-গাড়ি, বিত্ত-বৈভবে আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন খেলাপিরা। দেড় লাখ খেলাপির ঋণের পরিমাণ কত হতে পারে? বাদ থাক সে কথা। এসব ঋণখেলাপিকে বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হয় না বলেই দুর্নীতি কমে না। দুর্নীতি আর লুটেরাবাণিজ্যের মাধ্যমে দেশের এক শ্রেণির কিছু মানুষের কাছে চলে গেছে সব টাকা। তারা দেশে সাত পুরুষের ভোগ-বিলাসের অঢেল সম্পদ মজুদ রেখেও যেন তৃপ্ত নন। দুর্নীতির অভিযানে ধরা খেয়ে মারা পড়ার ভয়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে গড়ে তুলছেন বাড়ি এবং ব্যবসাপাতি।
জনশ্রুতি আছে, এ দেশের সমৃদ্ধির বারো আনাই খেয়ে ফেলে দুর্নীতি। সরকারি কাজে দুর্নীতির ঠেলায় নীতিবানদের চরম দুর্দশার শেষ নেই। বেসরকারি খাতেও এই রোগ ছড়িয়ে গেছে ক্যান্সারের মতো। আমাদের সরকারগুলোর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, স্বেচ্ছাচারিতা আর ক্ষমতার অপব্যবহারে কলুষিত হয়ে দেশ দুর্নীতির ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নীতিভ্রষ্টতা রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে ছড়িয়ে গেছে সর্বসাধারণের মাঝে। এর ফলে ধ্বংস হয়েছে সব প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চলছে নিয়ম ভাঙার মহোৎসব।
প্রকাশিত এক খবরে জানা গেছে, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অঢেল গোপন অর্থ আছে ক্যারিবীয় অঞ্চলের ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে। বলা হয়েছে, ওই দ্বীপাঞ্চলে অর্থ রেখে ব্যবসার তালিকায় বাংলাদেশের কমপক্ষে ২০ জন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী রাজনীতিকের নাম আছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেখানে সারা বিশ্বের ব্যবসায়ী-পুঁজিপতিরা নিজ দেশে কর ফাঁকি ও দুর্নীতির টাকা লগি্ন করেছেন।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সু্ইস ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত ‘ব্যাংক ইন সুইজারল্যান্ড-২০১২’ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের অন্তত ২২ কোটি ৯০ লাখ সুইস ফ্রাঁ (যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৯০৮ কোটি টাকার সমান) জমা আছে।
আমাদের দেশে বাজেট এলেই আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয় কালো টাকা। অথচ কালো টাকার বলয়ে আবর্তিত আমাদের পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র। মন্ত্রী-সাংসদ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি-আমলা-ব্যবসায়ীদের মাঝে কালো টাকার সাদা বেশধারী মানুষের সংখ্যা অনেক। এই বলয়ের মধ্য দিয়েই আমাদের দেশে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে তৈরি হচ্ছে কালো টাকা। সমাজ, এমনকি রাষ্ট্রযন্ত্রকে প্রভাবিত করছে এই কালো টাকা।
দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্যানুসারে, ভারতে ১৯৮৩ ও ১৯৮৪ সালে বস্ন্যাক রুপির পরিমাণ ছিল তাদের দেশজ মোট উৎপাদনের ১৯ ও ২১ ভাগ। সেখানে কালো টাকার মালিকরা ২৪ দশমিক ৫ লাখ কোটি কালো রুপি বিদেশে পাচার করেছে। বলা হয়েছে, এই বস্ন্যাক রুপির অর্ধেক পরিমাণও যদি স্বাভাবিক অর্থনীতিতে যুক্ত হতো, তাহলে ভারত সরকার বছরে দুই হাজার বিলিয়ন রুপি অতিরিক্ত রাজস্ব পেত।
বাংলাদেশের কালো টাকার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরে জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে প্রথমবারের মতো ৭০ কোটি কালো টাকা সাদা হয়। এরপর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে দুই দফায় ১৯৮৮-৮৯ সালে ২০০ কোটি এবং ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে ২৫০ কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়। পরবর্তী বিএনপি সরকার ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং প্রশংসিত হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে প্রায় প্রতি বছরই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়। ফলে সেই সরকারের আমলে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার মতো কালো টাকা সাদা হয়। পরবর্তীকালে চারদলীয় জোট সরকার বিনিয়োগের শর্তে ২০০১-০২ অর্থবছরে ৪০০ কোটি, ২০০২-০৩ অর্থবছরে ১০০০ কোটি এবং ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৪৬০৩ কোটি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়। ২০০৭-০৮ সালে এক/এগারোর কেয়ারটেকার সরকার দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অঙ্কের কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়, যার পরিমাণ ৯৬৭৭ কোটি টাকা। এক হিসাবে দেখা গেছে, স্বাধীনতার পর গত ৪০ বছরে বাংলাদেশ সরকার মাত্র ১৮ হাজার কোটি কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে ১৪০০ কোটি টাকা কর আকারে আদায় করেছে, যার পরিমাণ এই ৪২ বছরে বেড়েছে বৈকি।
এই যদি হয় কালো টাকা সাদা করার কাহিনী, তাহলে প্রশ্ন_ কালো টাকার পরিমাণ আসলে কত? অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে অঘোষিত বা কালো টাকার পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের ৮০ শতাংশ, যার পরিমাণ ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। আরেক হিসাবে দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর ৭০ হাজার কোটি টাকার কালো টাকা অর্জিত হয়, যার মধ্য থেকে ২০ হাজার কোটি কালো টাকা কোনো না কোনো উপায়ে সাদা নামে বৈধ হয়। অনেকের ধারণা, সরল হিসাবে সর্বনিম্ন হার ধরলেও দেশে মোট কালো টাকার পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা।
অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, কালো টাকার উৎস বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়াই সর্বোত্তম উপায়। তবে কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে দেশের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে বেছে নেয়া যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দেশে ২৩ হাজার ২১২ জন কোটিপতি আছে। তারা সবাই কি ট্যাক্স দেয়? জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যানুসারে, ২০১১-১২ অর্থবছরে এক লাখ টাকা ব্যক্তি আয়কর দেয়ার মতো এক হাজার ব্যক্তিও দেশে নেই। তাহলে বোঝা গেল, টাকাওয়ালাদের ধরতে পারছে না সরকার। সুতরাং শুধু কালো টাকা সাদা করা নয়, সব টাকাওয়ালার ট্যাক্স ফাঁকি বন্ধ করা উচিত। ট্যাক্স আদায়ে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলেই সুফল পাওয়া যাবে।
সাম্প্রতিক টাকা পাচারের আরেক কাহিনীর নাম সুইস ব্যাংক। বিভিন্ন প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশি আমানতকারীরা সুইস ব্যাংকে ৩৭২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাংক আমানত হিসেবে রেখেছেন। এই আমানত ২০১৩ সালে রাখা ১ দশমিক ৩২ ট্রিলিয়ন সুইস ফ্রাংক আমানতের তুলনায় যৎসামান্য। দেশের সাধারণ মানুষ বিদেশে অর্থ রাখার কারণ হিসেবে অবৈধভাবে টাকার লেনদেন, পুঁজি পাচার, রাজনৈতিক দুর্নীতি বৃদ্ধি, মানি লন্ডারিং, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা, দুর্বল সুশাসন, এমনকি আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যে আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিং ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলছেন।
ইউএনডিপি সূত্র বলছে, ১৯৭০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে বাইরে পাচার হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি সূত্র দেখিয়েছে, ২০০২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাইরে চলে গেছে। আচ্ছা, আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কী করে?
একটি ব্যাপার ভালো হয়েছে_ সুইস ব্যাংক এখন আর আগের মতো নেই। এখন তারা গোপনীয়তা ছিন্ন করে বিভিন্ন চাপে দেশভিত্তিক জমা টাকার খবর সরবরাহ করে। সেই সূত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশের নাগরিকদের সুইস ব্যাংকে আমানত (ডিপোজিট) ছিল ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা।
পত্রিকান্তরে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় মাই সেকেন্ড হোম প্রকল্পের মতো কানাডায় নাকি বেগমপাড়া নামে নতুন কেন্দ্র গজিয়ে উঠেছে। এছাড়া ব্রিটেন-হংকং-সিঙ্গাপুরেও আছে বাংলাদেশের বিনিয়োগ। আরেকটি কাগজের রিপোর্টে দেখা যায়, গত এক দশকের মধ্যে ২০১৩ সালে বাংলাদেশিদের আমানত ছিল সর্বোচ্চ। গত এক বছরে এর পরিমাণ বেড়েছে ৬২ শতাংশ। ইংরেজি কাগজ গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ২০০২ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার (এক বিলিয়ন সমান শতকোটি)। এই হিসাবে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। তার মানে, ৮০ টাকা দরে এর মোট অঙ্ক হয় ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। বছরে গড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
কালো হোক, ভালো হোক, দেশের টাকা বাইরে যেতে দেবে কেন সরকার। আমার দেশের কালো টাকায় অন্য দেশ যদি সেকেন্ড হোম-বেগমপাড়া গড়ে তুলতে পারে, তাহলে আমাদের দেশে কেন গ্লোবাল সিটি-মার্কেট-শিল্প গড়ে তোলা যাবে না। কালো টাকা বলে দূর দূর করে তাড়িয়ে হারাবেন_ সরকারের রাজস্ব এবং দেশের টাকা। তার চেয়ে পদ্মাপাড়ে সিটি গড়ে তুলতে, রেলওয়ের উন্নয়নে এবং স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও পর্যটন খাতসহ দেশীয় শিল্প বিকাশে সহজ শর্তে বিনিয়োগের সুযোগ দিন। এতে অন্তত দেশের টাকা বাইরে যাওয়ার প্রবণতা কমবে, সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। পাশাপাশি দুর্নীতির পথ বন্ধ করার উদ্যোগ নিন। অর্থনীতির জটিল হিসাব ছাড়াই বলতে পারি, যে হারে, যে পরিমাণে টাকা পাচার হচ্ছে, দেশের মাটিতে যদি সেই টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়, মালয়েশিয়ার মতো উন্নত দেশ হতে ১০ বছর সময়ও লাগবে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, এই টাকার মালিকদের খুঁজে বের করা হবে এবং আইনের আওতায় আনা হবে। আদৌ এটা সম্ভব হবে কিনা, আল্লাহ মালুম।
ড. কামাল বলেছেন, দেশে কালো টাকার কথা বলা হয়। সেই টাকাকে আমরা ডাকাতির টাকা বলতে পারি। কারণ, এ দেশে ৪ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক কেলেঙ্কারি হয়। অথচ সারা বিশ্বে ৪ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে লুটে খাওয়া হয় না।
মোদ্দা কথা হলো, দুর্নীতি ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে আমাদের কিছু করা দরকার। কারণ, এই দুর্নীতি আর সামাজিক অবক্ষয়ই বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত এত টাকার কাহিনী থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কেন উন্নয়নশীল হয়ে পড়ে থাকবে। এসব টাকাকে ব্যবহার করা গেলে ২০২১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন নেই। তার আগেই বাংলাদেশ আধুনিক ও উন্নত দেশের তালিকায় ঠাঁই করে নিতে পারবে। কথা হলো, কোন সরকার, কিভাবে এই বিশাল দুর্নীতির টাকা বা কালো টাকা আর পাচার হওয়া টাকা ব্যবহার করতে পারবে? আদৌ কি পারবে?

এসএম মুকুল: কলাম লেখক ও উন্নয়ন গবেষক
[email protected]