ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও তৃণমূলে প্রস্তুতি নেই বিএনপির , সাড়া নেই জামায়াতের

প্রকাশ: ২০১৪-০৮-০১ ১২:৩২:৩৬ || আপডেট: ২০১৪-০৮-০১ ১২:৩২:৩৬

Jamaat-_1
বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ঈদের পরে সরকারবিরোধী আন্দোলন আপাতত হচ্ছে না। বিভিন্ন ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়ে জোট নেত্রী ঈদের পরে সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও বিএনপির তৃণমূলে প্রস্তুতি না থাকায় আন্দোলন হচ্ছে না।

এ ছাড়া জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামেরও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে জোট সূত্রে জানা গেছে।

জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, ‘আন্দোলন নিয়ে আমাদের এক ধরনের বিভ্রান্তি আছে। আন্দোলন মানেই মনে করা হয় গাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ। কিন্তু এসবই কি আন্দোলন? আসলে দেখা দরকার আমরা মৌলিক দাবি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কের দাবি থেকে সরে এসেছি কিনা। বেগম জিয়া কি এ দাবি থেকে সরে এসেছেন? না আসেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তার মানে এ দাবিতে আন্দোলন চলছেই। তবে, আন্দোলনের কৌশল কী হবে এ নিয়ে কথা হতে পারে। আন্দোলনের কৌশল নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জোট নেতাদের কোনো আলোচনা হয়নি। তবে শিগগিরই হবে। পরিবর্তিত বিশ্ব ও বর্তমান বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে শিগগিরই জনগণ নতুন ধারার আন্দোলন প্রত্যক্ষ করবে। যে আন্দোলনে সরকারের ভিত নড়ে যাবে।’

লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘ঈদের ছুটি তো এখনও শেষ হয়নি। অচিরেই ২০ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকেই আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ করে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেওয়া হবে। আর সরকার যদি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তোয়াক্কা না করে তাহলে জনগণ যেকোনো উপায়ে সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়ে রাস্তায় নামবে।’

বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ‘প্রস্তুতি ছাড়া হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামলে তো হবে না। খালেদা জিয়ার উচিত ২০ দলের সাথে বসে আলোচনা করে তার পর মাঠে নামা।’

জোট সূত্র আরও জানায়, জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী এখনই সরকারবিরোধী আন্দোলনে যেতে চাচ্ছে না। তারা এখন দল পুনর্গঠনকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আগে সরকারবিরোধী কর্মসূচি দিতে জামায়াতের পক্ষ থেকে বিএনপিকে চাপ দিলেও এখন বিএনপির ডাকে সাড়া দিচ্ছে না দলটি। জামায়াত চাচ্ছে সরকার বিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার আগে পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে।

এদিকে, সরকারের সঙ্গে জামায়াতের আঁতাত হয়েছে বলেও কথা উঠছে বিভিন্নভাবে। যদিও আঁতাতের বিষয়টি নাকচ করে দিচ্ছেন জামায়াত নেতারা।

এ ব্যাপারে জামায়াত নেতাদের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

বিএনপি সূত্র জানায়, দলকে গুছিয়ে নিয়ে জোটগতভাবেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে যেতে চান খালেদা জিয়া। এ ক্ষেত্রে কোনো অপূর্ণতা রাখতে চাননা তিনি।

এ ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য নিতে তার মোবাইলে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে, বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলীয় কাযালয়ে গিয়ে ঈদ পরবর্তী সরকার পতনের আন্দোলন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করেই সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করা হবে।’

আর এজন্য বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ারও কথা বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ। যাতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে।’

এ ব্যাপারে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘মাত্র ঈদ গেল। আন্দোলনের ধরন কেমন হবে তা বসে ঠিক করা হবে। এছাড়া আন্দোলনের তো বিভিন্ন গতি প্রকৃতি আছে। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন তো বিভিন্নভাবে হচ্ছেই।’

সদ্য সমাপ্ত রমজানে ২০ দলীয় জোটের শরিকদের ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া একাধিকবার ঈদের পরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা দেন। আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দিতে আওয়ামী লীগকে বাধ্য করার কথা বলেন।

এদিকে ঈদের দিন মঙ্গলবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিশিষ্ট নাগরিক ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে খালেদা জিয়া নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবিলম্বে দেশে জাতীয় নির্বাচনের দাবি করেন।

ঈদের পরে আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক।’

বিএনপি ও জোট সূত্র জানায়, ঈদের পরে আন্দোলন কখন হবে এবং আন্দোলনের কৌশল কী হবে, এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জোটগুলোর সঙ্গে জোটের নেতার। কৌশলগত কারণেই বিএনপি নেত্রী ঈদের পরে আন্দোলনের আগাম ঘোষণা দিয়েছেন। আর এ ব্যাপারে বিএনপির তৃণমূলেরও তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আহমদ আযম খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বিএনপি আন্দোলনে ছিল, আন্দোলনে আছে। এ জন্য আলাদা কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন নাই। আগে আমাদের আন্দোলন ছিল যেনতেন প্রকারে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত একটি সরকারের বিরুদ্ধে। এখন আমাদের আন্দোলন একটি অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ আগের আন্দোলনেও সাড়া দিয়েছে, সামনের আন্দোলনও তারা সফল করবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই এ অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো হবে।’-দ্য রিপোর্ট