ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

৫ বছরেও একজন রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন হয়নি, নিজ ”ওয়াতুনে” ফিরতে আগ্রহী তারা

প্রকাশ: ২০২২-০৮-২৪ ২৩:১১:০১ || আপডেট: ২০২২-০৮-২৪ ২৩:১১:০১

# ২৫ আগস্ট ১০টি স্থানে সমাবেশ করবে রোহিঙ্গারা।

পলাশ বড়ুয়া::
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার কর্তৃক নির্যাতন-নিপিড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ৩৪টি ক্যাম্পে এসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয় এসব রোহিঙ্গা। যা বর্তমানে ১৩ লাখ ছাড়িয়েছে। বিশাল এই জনগোষ্টি আশ্রয়ের ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। তবে পাঁচ বছর গত হলেও একজন রোহিঙ্গা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফরকালীন নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে কাজ করছে জাতিসংঘ। এমনটি জানিয়েছেন জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক দূত নোয়েলিন হেজার।

রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্প প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে দিবসটিকে বিশেষ ভাবে স্মরণ করতে ক্যাম্প সমূহে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে রোহিঙ্গারা।

এবারও ২৫ আগস্ট আহুত রোহিঙ্গা সমাবেশের নেতৃত্ব দেবেন নিহত মাস্টার মুহিব উল্লাহর হাতেগড়া সংগঠন এআরআইপিএইচ (আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিচ এন্ড হিউম্যান রাইটস)। যার নেতৃত্বে ২০১৯ সালে ২৫ আগস্ট এ সংগঠনটি ব্যানারে কয়েক লাখ মানুষের অংশগ্রহণে সমাবেশ হয়েছিল। পরে তিনি দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছে।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জুবাইর জানিয়েছেন, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ৩৪টি ক্যাম্পের দশটি স্থানে সমাবেশ করার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের জন্য নির্ধারিত পোষাক, ব্যানার, পেষ্টুন, প্লে-কার্ড প্রস্তুত করা হয়। একই কথা জানিয়েছেন ক্যাম্প-৪ এর সমন্বয়কারী নুরুল কবির, ক্যাম্প-১ এর ডা: মোহাম্মদ তৈয়ব, মোহাম্মদ হোছনসহ আরো কয়েকজন।

এআরএইচপিএস নেতারা বলছে, নিহত মাষ্টার মুহিব উল্লাহ’র নেতৃত্বে রোহিঙ্গারা মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমারের ইন্ধনে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করেছে। যার ফলে গত ৫ বছরে একজন রোহিঙ্গাও নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারেনি।

বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে রোহিঙ্গা নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯টি শর্ত সাপেক্ষে তারা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। অন্যথায় বাংলাদেশ ছেড়ে যাবে না।

মিয়ানমারের মংডুর গারতবিলের বাসিন্দা বর্তমানে কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্প ১ ইষ্টে অবস্থানরত সিকান্দর (৭২) বলেন, রোহিঙ্গা হিসেবে গত ৫ বছর ভালো ভাবে কাটিয়েছি। এজন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, নিজ ওয়াতুনে ফিরতো চাই অর্থাৎ নিজ দেশে ফিরতে চাই। ক্যাম্পে নয়। মিয়ানমার সরকার নাগরিকত্বসহ নিজেদের জায়গা-জমি ফিরিয়ে দিলে যাবো। অন্যথায় যাবো না।

একই ধরণের কথা বলেছেন, মোহাম্মদ ছিদ্দিকের ছেলে নুর মোহাম্মদ (৩৫)। তিনি এও বলেছেন, আমাদের ১৯ দফা দাবী-দাওয়া পূরণ হলে আমরা ফিরে যাবো। কারণ মিয়ানমারের সরকারের কাজের সাথে কথার কোন মিল নেই।

ক্যাম্পে সমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ক্যাম্পের ব্লক মাঝি মোহাম্মদ আইয়ুব কোন মন্তব্য করতে চাননি। তবে লোকমুখে শুনেছি সমাবেশ হবে তিনি এমনটি জানিয়েছেন।

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই আমাদের শেষ লক্ষ্য। যখন তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে, তখনই চুড়ান্ত সাফল্য আসবে। এই প্রক্রিয়া চলমান। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে। সব ঠিক করে যখন দিন ধার্য্য করা হবে, তখই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো দায়িত্ব আমার। প্রত্যাবাসন শুরু না হলেও ক্যাম্পে চাপ কমাতে এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচর স্থানান্তর করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা সেখানে নেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত থানায় ১ হাজার ৯০৮টি মামলা হয়েছে। খুনের ঘটনা ঘটেছে ৯৯টি। যদিও বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে ১২০টি বেশি হত্যাকান্ড ঘটেছে।

তিনি বলেন, খুনোখুনি, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অগ্নিসংযোগসহ ১৪ ধরণের অপরাধের জন্য এসব মামলা হয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এর অধিনায়ক সৈয়দ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, এখন ক্যাম্পের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গারা ১৫টি ক্যাম্পে সমাবেশ করার কথা রয়েছে। এ জন্য এপিবিএন সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে। সমাবেশ করার অনুমতির বিষয়ে তিনি জানাতে পারেননি।