ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

বাবার খুনীদের শাস্তির জন্য ছেলে যখন আইনজীবী

প্রকাশ: ২০২২-০৭-২৬ ০৯:৫১:৫৯ || আপডেট: ২০২২-০৭-২৬ ০৯:৫১:৫৯

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ

বাবা নুরুল কবিরকে যখন খুন হন, তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন হোছাইন মোহাম্মদ এরশাদ। বাবার মৃত্যুর পর একপ্রকার অথৈ সাগরে পড়ে তাঁর পরিবার। ঘরে নিত্য অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। ওই অবস্থায় মামলা চালানো দূরে থাক, পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল এরশাদের। তবে থেমে যাননি তিনি। অব্যাহত রাখেন পড়ালেখা। বাবার খুনীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে আইন বিভাগের উপর ডিগ্রি নেন।

অদম্য প্রচেষ্টার ফল অবশেষে পেয়েছেন হোছাইন মোহাম্মদ এরশাদ। প্রায় ২২ বছর পর আজ সোমবার হত্যা মামলার রায় হয়েছে। চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আর সে মামলায় আইনজীবী হিসেবে নিজেই লড়েছেন এরশাদ। আসামিদের শাস্তি হওয়ায় উৎফুল্ল তিনি। খুশি তাঁর মা খালেদা ইয়াসমিনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা।

আদালত সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালের ৬ ডিসেম্বর সকালে লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর রুস্তমের পাড়ার আজলা পুকুরের পাড়ে নুরুল কবিরকে (৪৫) হত্যা করা হয়। আপন বড় ভাই ও তিন ভাতিজার হাতে খুন হয়েছিলেন সৌদিপ্রবাসী নুরুল কবির। মৃত্যুর সময় রেখে গিয়েছিলেন স্ত্রী, পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে।

এ ঘটনায় নিহত নুরুল কবিরের স্ত্রী খালেদা ইয়াসমিন বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ২০০০ সালের ২১ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। অভিযোগ গঠন হয় ২০০৩ সালের ১৩ জানুয়ারি। মামলায় ১৭ জন সাক্ষী ও ৩ জন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে সোমবার রায় দেওয়া হয়। রায়ে নুরুল ইসলাম এবং তাঁর তিন ছেলে ওসমান গণি, সরোয়ার কামাল ও আব্বাস উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

বাবা হত্যার কারণ প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, ‘সৌদি আরবে থাকার সময় তাঁর জেঠাত ভাইকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন বাবা। কিন্তু সে টাকা ফেরত দিতে তালবাহানা শুরু করেছিলেন জেঠা ও তাঁর ছেলেরা। একপর্যায়ে বিদেশ থেকে চলে আসেন বাবা। টাকা পরিশোধ নিয়ে শালিস-বৈঠক হয়েছিলো। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করে উল্টো বাবাকে খুন করেন তাঁরা।

বাবার মৃত্যুর পর পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল বলে জানান এরশাদ। তিনি বলেন, বড় ভাই মো. আইয়ুব এলাকায় একটি মুদি দোকান দেন। এরপর অন্য তিন ভাই বিদেশ চলে যান। পরে বড় ভাইও বিদেশে যান। এতে পরিবারের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। নিজের জন্য একবার কাতারের ভিসা এলেও পড়াশোনার জন্য রয়ে যান দেশেই।

তবে একটা সময় এমনও গেছে, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ আইনজীবীর ফি পরিশোধের সামর্থ্যও ছিল না বলে জানান তিনি। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মামলা লড়ে গেছেন। এ অবস্থা দেখে ২০০৭ সালে নিজের আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছা জাগে তাঁর। এরপর মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম থেকে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি নেন। এরপর বাবা হত্যা মামলায় আইনজীবী হিসেবে নিজেই অংশ নেন।

মামলায় চারজনের শাস্তি হওয়ায় অনেক শান্তি লাগছে উল্লেখ করে হোছাইন মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, ‘আশা করেছিলেন অন্তত একজনের মৃত্যুদণ্ড হবে। এরপরও যে রায় হয়েছে তাতে খুশি। এখন রায়ের কপি পাওয়ার পর আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো।

সিএসবি-টুয়েন্টিফোর;২৬/৭ঃস/-১১৯(১অ+০০১২৮)