ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফ্লাইওভারের নীচে তরুণীকে ধর্ষণ, পুলিশকে জানানো রিকশাচালক পেলেন পুরস্কার

প্রকাশ: ২০২২-০৭-২০ ২২:২০:২২ || আপডেট: ২০২২-০৭-২০ ২২:২০:২২

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রামঃ

চট্টগ্রামে তরুণীকে (২৬) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করে জড়িত তিন জনকে ধরিয়ে দিতে সহায়তা করা রিকশাচালক মো. আব্দুল হান্নানকে পুরস্কৃত করেছে পুলিশ।

বুধবার (২০ জুলাই) দুপুর ১টায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) দামপাড়া কার্যালয়ে কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় রিকশাচালকের হাতে পুরস্কারের অর্থ তুলে দেন।

পুলিশ কমিশনার বলেন, রিকশাচালক মো. আব্দুল হান্নানের এই মানবিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কৃত করা হয়েছে। যাতে অন্যরাও এ ধরনের মানবিক কাজে উৎসাহিত হয়।

জানা গেছে, রবিবার (১৭ জুলাই) দিবাগত রাত ২টার দিকে এক তরুণীকে রিকশা থেকে নামিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। খুলশী থানাধীন জিইসি বাটা গলির পাশে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের নীচে একটি টং দোকানের ভেতর এই ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতে কারখানায় কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে ওই তরুণীকে রিকশা থেকে নামিয়ে নিয়ে যায় ছয় যুবক। পরে তাকে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের নিচে নিয়ে ধর্ষণ করে তারা। এ অবস্থায় রিকশাচালক মো. আব্দুল হান্নান কিছু দূর গিয়ে জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯-এ নম্বরে কল করে বিষয়টি জানালে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকি তিন জন পালিয়ে যায়।

খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, রবিবার খুলশী থানা এলাকায় সংঘটিত ধর্ষণের বিষয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে জানান রিকশাচালক মো. আব্দুল হান্নান।

তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে নগরীর খুলশী থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে এবং ধর্ষণের অভিযোগে তাৎক্ষণিক তিন জনকে গ্রেফতার করে। রিকশাচালক মো. আব্দুল হান্নানের এই মানবিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে পুরস্কৃত করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার।

রিকশাচালক আব্দুল হান্নান বলেন, ওই দিন রাতে আমি জিইসি মোড় ফ্লাইওভারের মুখে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। জিইসি মোড় থেকে রিকশায় করে এক মেয়ে রাতে বাসায় ফিরছিলেন। রিকশাটি আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের নীচে এলে ৫-৬ জন যুবক রিকশাটির গতিরোধ করে। তারা ওই মেয়ের সঙ্গে কী যেনো বলে। এভাবে ৫ থেকে ১০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রিকশাটি পেছনে নিয়ে ফ্লাইওভারের নীচে অন্ধকারে একটি টং দোকানে নিয়ে যায়।

বিষয়টি আমার সন্দেহ হয়। পাঁচ মিনিট পর দেখলাম ওই রিকশাচালক একা ফিরে আসে। আসার পর তার সঙ্গে আমার কথা হয়। সে বলে মেয়েটিকে জোরপূর্বক আটকে রেখে তাকে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। ওই মেয়েটির সঙ্গে খারাপ কিছু করার চেষ্টা করছে। তখন আমি ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে জানাই।

তিনি বলেন, ফোন করার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর আমার দেওয়া ঠিকানায় পুলিশ চলে আসে। এরপর ওই রিকশাচালক রাকিবসহ মেয়েটিকে যেখানে নিয়ে গেছে সেখানে যাই। ঘটনাস্থলেই পুলিশ তিন জনকে আটক করে। উদ্ধার করা হয় ভিকটিম মেয়েটিকে।

রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা এই মানুষটি বলেন, আমি লেখাপড়া তেমন করিনি। প্রাইমারি স্কুলে পড়েছি। তবে বিভিন্ন গাড়ির পেছনে থাকা ৯৯৯-এর বিষয়ে আমি আগে থেকে অবগত আছি। বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে থাকি নগরের শেরশাহ এলাকায়।

খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা আরো বলেন, রিকশাচালক হান্নানের কারণেই ঘটনায় জড়িত তিন জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে গ্রেফতার তিন জনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে।

সিএসবি-টুয়েন্টিফোর;২০/৭ঃঅ+৯৪(স-০০১০২)