ঢাকা, শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

সভাপতির পদ নিয়ে তালবাহনা, বেতন পাচ্ছেন না ২৭ শিক্ষক, ব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম

প্রকাশ: ২০২২-০৬-৩০ ০০:৫৪:৪২ || আপডেট: ২০২২-০৬-৩০ ০১:১০:২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার উখিয়ায় রাজাপালং এমদাদুল উলুম ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় গভর্ণিং বডির সভাপতির পদ নিয়ে নানা তালবাহনা শুরু হয়েছে। যার ফলে বেতন পাচ্ছে না ২৭ জন শিক্ষক-কর্মচারী। এ পরিস্থিতিতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। অনিশ্চয়তায় ১৪শ শিক্ষার্থীর জীবন। এদিকে প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করছে সচেতন মহল।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ এ.কে.এম আবুল হাসান আলী স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটারের ভিত্তিতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গভর্ণিং বডির সভাপতি মনোনীত হয়েছেন। তিনি জামায়াতের সাবেক আমির।

এ খবরে তার বিরুদ্ধে স্মারক এবং স্বাক্ষর জালিয়াতি, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা অভিযোগ এনে জেলায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষকবৃন্দ।

একই ভাবে একদিন পর সাবেক অধ্যক্ষ আবুল হাসান আলীও তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট দাবী করে পাল্টা একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সভাপতির পদ-পদবীর নিয়ে এসব অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের কারণে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। পাশাপাশি পড়ালেখার মান নিয়ে আশংকা করেছেন স্থানীয়রা। তাদের একজন উখিয়া কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক শহীদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, শত বছরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলমান থাকলে, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে। এমনকি যে, কোন মূহুর্তে অত্র প্রতিষ্ঠানের ১৪’শ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়তে পারে।

দৈনিক কালেরকণ্ঠের বিশেষ প্রতিবেদক তোফায়েল আহমদ তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, “অচলাবস্থায় রাজাপালং মাদ্রাসা। ২৩ শিক্ষকের ২০ জনই মেনে নিচ্ছেন না গভর্নিং বডির নতুন সভাপতি বিদায়ী অধ্যক্ষ আবুল হাছান আলীকে। তারা লুটপাট ও দুর্নীতির তদন্ত চান।”

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল হক বলেন, সদ্য বিদায় অধ্যক্ষ আবুল হাছান আলী গত ২৮ ফেব্রুয়ারী
অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু মাদ্রাসার অফিশিয়ালি কোন ডুকমেন্ট কিংবা কাগজ পত্র বুঝিয়ে না দিয়ে, উল্টো আমার স্বাক্ষর এবং প্রতিষ্ঠানের স্মারক জালিয়াতির মাধ্যমে সংসদ সদস্য শাহিন আক্তারের ডিও লেটার নিয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোনীত হয়েছেন। যা এখনো প্রথম সভা হয়নি এবং সভাপতি হিসেবে অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।

তাছাড়া তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে থাকাকালীন স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দূর্ণীতির কারণে মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝের ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।

তাই এই রকম একজন মিথ্যাবাদী সভাপতির প্রত্যাহারের দাবী ছাড়া আমাদের পক্ষে আর কোন পথ নেই।

ওই প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক মুহিব উল্লাহ জানান, সাবেক অধ্যক্ষের সভাপতি হওয়া নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার কারণে ২৭ জন শিক্ষক-কর্মচারির বেতন বন্ধ রয়েছে। যার কারণে অনেকের সংসার খরচ চালাতে খুবই হচ্ছে। এদিকে বেতন পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে আসন্ন ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে টেনশনে দিন কাটাচ্ছে সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীরা।

সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ঈদের আগে বেতন ছাড় করা না হলে অনেকেই এবার কোরবান করতে পারবেন না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদ্য মনোনীত গভর্ণিং বডির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ এ.কে.এম আবুল হাছান আলী বলেন, আমি সংসদ সদস্য শাহিন আক্তারের ডিও লেটার নিয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির স্বাক্ষরে সভাপতি মনোনীত হয়েছি। এখানে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। আমাকে যারা জামায়াতের আমির বলে আখ্যা দিয়ে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ তুলেছেন আসলে তারা কারা? আপনারা একবার খোঁজ নিয়ে দেখুন। দেখবেন তাদের ব্যাপারে অনেক অনিয়ম দূর্ণীতি তথ্য বেরিয়ে আসবে।

তিনি আরো বলেন, আমি কেন শিক্ষকের বেতন বন্ধ রাখবো। তারা বেতন সিট নিয়ে আমার কাছে আসুক। আমি ১’শ বার তাদের বেতন বিবরণীতে স্বাক্ষর করতে সম্মত আছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, সভাপতির পদ নিয়ে রাজাপালং মাদ্রাসার সৃষ্ট জটিলতা সমাধানের জন্য মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছি। আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত আসলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।