
বার্তা পরিবেশক:
রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন দাবি ও এনজিও-আইএনজিও সংস্থা কতৃক ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বসবাসরত স্থানীয়দের জমি দখল করে রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন ঘর নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে নাগরিক অধিকার পরিষদ পালংখালী।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সকাল ৯টায় উখিয়া উপজেলার থাইংখালী স্টেশন চত্বরে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগী, স্থানীয় সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনসাধারণ।
মানববন্ধনে বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরে নাগরিক অধিকার পরিষদের নেতৃবৃন্দ। সেখানে তারা দাবি জানায়- রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিলম্ব হলে অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পূর্বে স্থানীয় শিক্ষিতদের চাকরি নিশ্চিত করতে হবে, এনজিও-আইএনজিওতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে, ক্যাম্পে এনজিও-আইএনজিওতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরিতে নিয়োগ দিতে হবে, কাঁটাতারের বেড়ার ভেতর স্থানীয়দের দখলীয় জমির উপর জবরদখল ও স্থানীয়দের উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে, উজাড়কৃত বনভূমিতে পুনরায় বৃক্ষরোপণ নিশ্চিত করতে হবে, ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে টমটম, সিএনজি ও ডাম্পার চালক রোহিঙ্গা শ্রমিকদের তৎপরতা বন্ধ করতে হবে বলে দাবি জানায়।
মানববন্ধনে নিজেদের কথা তোলে ধরে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোও। ভুক্তভোগীরা প্রত্যেকে ক্যাম্প অভ্যন্তরে নিজ জমি দখল ও ব্যবহারে ক্যাম্প প্রশাসন ও এনজিও-আইএনজিও কতৃক বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তোলে।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নানা হয়রানির মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে বলে অভিযোগ করে তারা। পাঁচ শতাধিক স্থানীয় পরিবার উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বসবাস করে। সেখানে প্রতিনিয়ত ক্যাম্পে দায়িত্বরত ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) কর্তৃক হয়রানি হয় বলে অভিযোগ তোলে।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল করিম রিয়াদের সঞ্চালনায় আহ্বায়ক তাহিজুল আক্তার জুয়েলের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতা এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবতার খাতিরে বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় প্রদান করে। যার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পালংখালীর স্থানীয়রা। পরবর্তীতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের সেবার নামে তাদের আত্মীয়স্বজনদের চাকরি দিয়ে স্থানীয়দের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। সম্প্রতি ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বসবাসরত স্থানীয়দের জমিতে ঘর নির্মাণ করে উচ্ছেদের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। যার ফলে প্রায় পাঁচ শতাধিক স্থানীয় পরিবার ভিটে-মাটি হারানোর আতঙ্কে রয়েছে৷
তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পের দায়িত্বরত এপিবিএন পুলিশের অনৈতিক কর্মকাণ্ড, অত্যাচার এবং নির্যাতনের কারণে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে স্থানীয়রা। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। অন্যথায় ক্যাম্পে অপরাধ কর্মকাণ্ড দিন দিন বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বক্তব্যে অনতিবিলম্বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চালু করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান মোজাফফর আহমদ, ইউপি সদস্য মিছবাহ উদ্দিন সেলিম, নাগরিক অধিকার পরিষদ কমিটির নিয়ন্ত্রক ও নির্বাচক তারেকুর রহমান, সহকারী নিয়ন্ত্রক শফিউল্লাহ তুহিন, সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসাইন বাপ্পি, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, শাহরিয়ার শাকিল।
মানববন্ধনের শুরুর দিকে বক্তব্য রাখেন ফাহিম উদ্দিন ফরহাদ, মোঃ ইব্রাহিম, আব্দুল গফুর মুন্না, মাহবুল আলম রুবেল, আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর বাপ্পি, বোরহান উদ্দিন, নুরুল আবছার শাহীন, শামুশুল আলম জিাহাদী, আব্দুল ওয়াহিদ মানিক, আমিরুল ফয়েজ প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, নাগরিক অধিকার পরিষদ হল রোহিঙ্গা ক্যাম্প অধ্যুষিত এলাকার স্থানীয়দের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সদ্য গঠিত হওয়া একটি সংগঠন। যেটি বর্তমানে আহ্বায়ক কমিটি দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। গত ২৬ মার্চ ১১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয় যা আগামী ৩১ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে জানা যায়।
পাঠকের মতামত