
# প্রকল্পের স্বচ্ছতা আনতে উপজেলায় অভিযোগ বাক্স স্থাপন।
# শ্রমিকদের রাস্তায় নামার হুমকি।
# সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগ এনজিও সুশীলনের বিরুদ্ধে।
পলাশ বড়ুয়া ও শহীদুল ইসলাম ॥
কক্সবাজারের উখিয়ায় “অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান (ইজিপিপি)” কর্মসূচীর ১ম পর্যায়ের মজুরির টাকা ৪০ দিনেও না পাওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিকদের কেউ কেউ তাদের ন্যায্য পাওনার দাবীতে রাস্তায় নামার হুমকি দিচ্ছেন। দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে কাজ করেও মজুরির টাকা না পাওয়ায় অনেক শ্রমিকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করতে দেখা গেছে। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস বলছে দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের টাকা পাবেন শ্রমিকরা। অপরদিকে জনপ্রতিনিধিরা বলছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কর্মসৃজনে দায়িত্ব প্রাপ্ত এনজিও সংস্থা সুশীলন। এনজিও সুশীলন উপকারভোগীদের তালিকায় তথ্যের গড়মিল থাকায় শ্রমিকের টাকা পেতে বিলম্ব হচ্ছে।
উখিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: আল মামুন জানিয়েছেন, অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে (ইজিপিপি) অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। হয়ত: কিছু কিছু জায়গায় তথ্যের অমিল দেখা দেয়ায় একটু বিলম্ব হচ্ছে। বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কাজ চলছে। এছাড়াও প্রকল্পের যে কোন অনিয়ম সম্পর্কে জানাতে উপজেলায় হটলাইন নাম্বার সম্বলিত (০১৭৩৩৩৭২০৫/০১৮৮২১৬০০২) একটি অভিযোগ বাক্স বসানো হয়েছে।
সরেজমিনে উখিয়ার জালিয়াপালং, রত্নাপালং, হলদিয়াপালং, রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় নতুন করে বেশ কিছু গ্রামীণ সড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। আবার কোন কোন স্থানে শ্রমিকদের নাম তালিকায় থাকলেও কার্যত: অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ইতোপূর্বে জালিয়াপালং ইউনিয়নের ৮২৬ জন শ্রমিক, পালংখালী ১৬১৬ জন, রতœাপালং ৪৬৫ জন, হলদিয়াপালং ১১৯৩ জন ও রাজাপালং ১০৫৯ জন মোট ৫ হাজার ১৫৯ শ্রমিক নিয়োগ করা হয়।
এবার ২০২১-২০২২ সালের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে উখিয়া উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ৪৫টি ওয়ার্ডে ব্যাপক গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রকল্পের ১ম পর্যায়ে ৫১৫৯জন শ্রমিক দৈনিক ৪০০টাকা করে ৫৮ দিনে প্রায় ১২ কোটি টাকা পারিশ্রমিক পাবেন।
পালংখালী ইউপি সদস্য নুরুল হক বলেন, দরিদ্র শ্রমিকরা দীর্ঘ এক মাস কাজ করেও তাদের মজুরির টাকা পাচ্ছে না। এভাবে বিলম্বিত হতে থাকলে আগামীতে প্রকল্প বাস্তবায়নে শ্রমিক পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ইউপি সদস্য সুশীলনের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন কাজ না করে হাজিরা দিলেই টাকা পাবে শ্রমিকরা। একই কথা বলেছেন বেশ কিছু শ্রমিক। মজুরির টাকা না পেয়ে শ্রমিকরা বলতে শোনা গেছে, তাদের ধার-দেনার পরিমাণ গলাগলা হয়ে গেছে। সংসারের খরচ চালাতে কষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে রাস্তায় নামতে হবে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন বলেছেন, কক্সবাজারের ৭১টি ইউনিয়নে চলমান কর্মসৃজন প্রকল্পের কোন শ্রমিকের টাকা পায়নি। দায়িত্ব প্রাপ্ত এনজিও সংস্থা সুশীলনের চরম গাফেলতি ও একঘেয়েমির কারণে শ্রমিকরা টাকা পেতে বিলম্বিত হচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে এনজিও সুশীলন। তিনি এও বলেন, এটা সুশীলন নয় কুশীলন। সংস্থাটির লোকজন শ্রমিকদের বলে বেড়াচ্ছে মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কারণে মজুরির টাকা পাচ্ছে না।
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ ভালো ভাবে চলছে। শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য মাষ্টাররোল ইতোমধ্যে জমা হয়েছে। তবে সমন্বয়হীনতার কারণে দরিদ্র শ্রমিকরা টাকা পেতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
এদিকে কর্মসৃজন প্রকল্পের অধীনে মাসব্যাপী কাজ করেও বেতন না পেয়ে হতাশায় ভুগছে সাধারণ শ্রমিকরা। অপরদিকে কর্মসৃজনে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ শ্রমিক তালিকায় তথ্যের অমিল, হাজিরায় গড়মিল, কাজে ধীরগতি, দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিও সুশীলনের অনিয়ম ও ট্যাগ অফিসারদের সমন্বয়হীনতাকে দুষলেন মাঠ পর্যায়ের শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে জানতে কর্মসৃজন প্রকল্পে দায়িত্বপ্রাপ্ত এনজিও সুশীলন এর সহকারী পরিচালক আবদুল আলীম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মূল কাজ হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের। কর্মসৃজন প্রকল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের। সুশীলন শুধুমাত্র উপকারভোগীদের তথ্য ও মোবাইল নাম্বার যাচাই-বাছাই ও দৈনিক হাজিরার রিপোর্ট করে। সর্বশেষ অবস্থা জানতে তিনি সুশীলনের কার্তিক চন্দ্র দে এর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সহায়তা ফার্ম সুশীলনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর কার্তিক চন্দ্র বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে কক্সবাজার সদর, রামু ও কুতুবদিয়া শ্রমিকরা মজুরির টাকা পাবেন। পরবর্তীতে অন্যান্য উপজেলার আরো ২৫ হাজার শ্রমিক পর্যায়ক্রমে টাকা পাবেন। উখিয়ার শ্রমিকদের মাষ্টাররোল যাচাই-বাছাইয়ের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে শুদ্ধরূপে ঢাকায় প্রেরণ করা হবে।
তিনি এও বলেন, উখিয়ায় শুধুমাত্র দুইজন কর্মী নিয়ে তাদের মাঠ যাচাই করা হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকরা দ্রুত সময়ের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাবে। এ প্রকল্পে অনিয়ম হওয়ার কোন সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। যদি কেউ অনিয়ম করে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পাঠকের মতামত