
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার শহরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। কাল সোমবার একই সময়ে, একই স্থানে জেলা বিএনপি ও যুবলীগের কর্মসূচী দেওয়ার কারণে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শহীদ সরণিস্থ জেলা বিএনপির কার্যালয় ও কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার এলাকার দুইশত গজ ব্যাসার্ধ জুড়ে যে কোন ধরনের সভা-সমাবেশ এবং মিছিল-মিটিংসহ জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল ৮ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত প্রশাসনের এ নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।
বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ‘সু-চিকিৎসা ও মুক্তির’ দাবিতে জেলা বিএনপি মহাসমাবেশ এবং বিগত জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান সরকারের ৩ বছর পূর্তি উপলক্ষ ”বিজয় উৎসব’ আয়োজনকে ঘিরে উদ্ভুদ পরিস্থিতিতে প্রশাসন এ নির্দেশনা জারি করেছে।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় এ নির্দেশনা জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান।
এর আগে সারাদেশে কেন্দ্রিয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গত ৩০ ডিসেম্বর কক্সবাজারে জেলা বিএনপির মহাসমাবেশ অনুষ্টিত হওয়ার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ইংরেজী নববর্ষকে কেন্দ্র করে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগম বিষয়টি বিবেচনায় জেলা বিএনপি তা পিছিয়ে ৩ জানুয়ারী সমাবেশের দিন ধার্য করে।
অন্যদিকে বিগত জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান সরকারের ৩ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে গত ৩০ ডিসেম্বর কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরীর শহীদ দৌলত ময়দানে ‘বিজয় উৎসব’ পালনের কর্মসূচীর ঘোষণা দেয় জেলা যুবলীগ। কিন্তু গত ২৮ থেকে ৩০ ডিসেম্বর শহীদ দৌলত ময়দান ‘মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা’ অনুষ্টিত ওই কর্মসূচী পিছিয়ে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ৩ জানুয়ারী কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে ওই কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আবু সুফিয়ান বলেন, কক্সবাজার শহরে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ গজ দূরুত্বে একই সময়ে দুইটি রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মসূচী ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এতে অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা দেখা দিলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছেন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, “প্রশাসনের জারি করা নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘটনাস্থলে ও মাঠে ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ ও র্যাব সহ আইন-শৃংখলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ”
প্রশাসনের নির্দেশনা যারা অমান্য করবে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান আবু সুফিয়ান।
এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে, সোমবার বিকালে জেলা বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সড়কের নির্মাণ করা হচ্ছে মঞ্চ। সমাবেশ সফল করতে রোববার সকাল বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মিরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। এ দৃশ্য দেখা দেখা গেছে রাত পৌণে ৯ টা পর্যন্তও। আর দলীয় কার্যালয়ে আনাগোনা রয়েছে অসংখ্য দলীয় নেতাকর্মির। সমাবেশের মঞ্চ ঘিরে অবস্থান করছে এসব নেতাকর্মিরা।
অন্যদিকে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে সোমবার বিকালে জেলা যুবলীগের ‘বিজয় উৎসব’ এর কর্মসূচী ঘোষণা দেওয়া হলেও অনুষ্ঠান আয়োজনের কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। দেখা যায়নি সংগঠনটির নেতাকর্মিদের আনাগোনাও।
তবে যুবলীগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সোমবার সকাল থেকে শহীদ মিনারের উৎসবস্থলে মঞ্চ তৈরী ও অনুষ্ঠান আয়োজনের কাজ শুরু করা হবে। কর্মসূচী সফল করতে প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে।
এ নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রিয় মৎস্যজীবি বিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজার সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশের মত জেলা পর্যায়ে কক্সবাজারেও মহাসমাবেশ আয়োজনের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু আগত পর্যটকদের দূর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনা তা পিছিয়ে ৩ জানুয়ারী দিন নির্ধারণ করা হয়।
” সমাবেশ আয়োজনে শহরের বাহারছড়া এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মাঠ (গোল চক্কর), কেন্দ্রিয় ঈদগাহ ময়দান ও কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরীর শহীদ দৌলত ময়দানের মধ্যে যে কোন একটি বরাদ্ধের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়। কিন্তু প্রশাসনের কাছ থেকে কোনটি বরাদ্ধের অনুমতি পাওয়া যায়নি। ”
বিএনপির এ কেন্দ্রিয় নেতা বলেন, ” শেষ পর্যন্ত সোমবার জেলা দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন মঞ্চ তৈরীসহ সমাবেশ সফল করতে সবধরণের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ”
প্রশাসন কর্মসূচীস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করলেও যে কোন মূল্যে সমাবেশ সফল করা হবে বলে জানান লুৎফুর রহমান কাজল।
সরকার বিএনপির সমাবেশে মানুষের জনসমাগমকে ভয় পেয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি চরিতার্থ করতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে বলেও দাবি করেন বিএনপির এ কেন্দ্রিয় নেতা।
এ ব্যাপারে জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমেদ বাহাদুর বলেন, জেলা যুবলীগের কর্মসূচী পূর্ব-ঘোষিত ও পূর্ব-নির্ধারিত ছিল। এই কর্মসূচী গত ৩০ ডিসেম্বর কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরীর শহীদ দৌলত ময়দানে অনুষ্টিত হওয়ার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সেখানে বিজয় মেলার অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকায় তা পিছানো হয়। পরে ওই কর্মসূচী পালনের জন্য ৩ জানুয়ারী দিন ধার্য করে স্থান হিসেবে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারকে নির্ধারণ করা হয়।
” এখন পূর্ব কোন ঘোষণা ছাড়াই বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে কথিত মহাসমাবেশ ঘোষণা দিয়ে বসেছে। সমাবেশ আয়োজনের জন্য বিএনপি যে পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন ছাপিয়েছে তাতে কোন স্থানের উল্লেখও করা হয়নি। ”
যুবলীগ সভাপতি বলেন, ” বিএনপি জ্বালাও পোড়াও রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তারা সমাবেশের নামে কক্সবাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করে রাজনৈতিক ইস্যু বানাতে যুবলীগের কর্মসূচী বানচালে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ”
যুবলীগের নেতাকর্মিরা কর্মসূচী সফল করতে সবধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানান সোহেল আহমদ বাহাদুর।
পাঠকের মতামত