
পলাশ বড়ুয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে ফিরে…
দেশের সীমান্ত উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ে চা শিল্পের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই শিল্পের বিকাশে একক ভাবে স্বপ্ন দেখেছেন নুরুল আলম কোম্পানী। তিনি ব্যক্তি মালিকানায় ৫০ একর জায়গার উপর সৃজন করেছেন চা বাগানটি। এই বাগান থেকে পুরো এলাকার চা’য়ের চাহিদা পুরণ হচ্ছে এখন। কৃষিজাত এ শিল্পের বিকাশে দরকার সরকারি পৃষ্টপোষকতা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা। তবেই জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবে এমনটি জানিয়েছেন সচেতনমহল।
পাশাপাশি এই চা বাগানকে ঘিরে পর্যটন খাতেও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়ের সুযোগ রয়েছে। শীতের শুরুতে ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক আসা শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর থেকে প্রায় ১৩ কি:মি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সীমান্ত এলাকায় সবুজের সমারোহে গড়ে উঠেছে সম্ভাবনাময়ী এই চা বাগান।
নিজ উদ্যোগে বাগানটি করেছেন নুরুল আলম কোম্পানী। দৈনিক ভিত্তিতে বাগানে নিয়মিত অর্ধ শতাধিক নারী-পুরুষ কাজ করেন। দরকার শতাধিক অভিজ্ঞ শ্রমিক।
পাহাড়ের কোলঘেঁষা সারি সারি সবুজ চা গাছে প্রকৃতির যেন অনন্য রূপে সেজেছে। চারপাশ জুড়ে ছোট বড় উঁচু-নিচু টিলা আর হরেক রকম গাছ-গাছালি। টিলার পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা সড়ক। সড়কের কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু। যেনো দেশের ভেতর অন্যরকম এক দেশ। এছাড়াও সেখানে ভালো লেবু চাষ হয়েছে। এর মাধ্যমে ভিটামিন সি’র চাহিদা পূরণ করছে প্রতিনিয়ত।
ঘুরতে আসা পর্যটক বিশ্বজিৎ বড়ুয়া বলেন, এখানে চা শিল্পের বিকাশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো দরকার। এই শিল্পের সঠিক উন্নয়ন হলে স্থানীয় চাহিদা পুরণের পাশাপাশি রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এছাড়াও বহু কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
জয়নাল আবেদীন নামে আরেক পর্যটক বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও মালিকপক্ষকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি চা চাষে ব্যাপক সফলতা আসবে।
বাগানের ম্যানেজার এমবিএম জাহিদুজ্জামান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রায় ৫০ একর ভূমিতে বিস্তৃত এ চা বাগান। আরো কিছু জমিতে চা চাষ সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
তিনি আরো বলেন, অভিজ্ঞ জনবলের অভাবে পর্যাপ্ত ডেভেলপিং করতে পারিনি। এছাড়া সরকার সুদৃষ্টি দিলে ভালো মতো এগিয়ে নিতে পারতাম।
তিনি এও বলেন, প্রফারলি মেইনটেইন্যান্স করলে প্রতি বৎসর ৬০/৭০ হাজার কেজি চা উৎপাদন সম্ভব।
বাগান মালিক নুরুল আলম কোম্পানী বলেন, ২০১২ সালে বাণিজ্যিক ভাবে চা চাষ করা হয়েছে। সেই সাথে প্রক্রিয়াজাতের একটি মিনি ফ্যাক্টরী স্থাপন করা হয়েছে। গত তিন বৎসর চা উৎপাদন হলেও লাভের মুখ দেখিনি।
তিনি বলেন, চা বোর্ডের রেজিষ্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে এখনো অনুমোদন হয়নি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ইনামুল হক জানিয়েছেন, চা চাষের জন্য ওই এলাকার পরিবেশ খুবই উপযোগী। ব্যক্তিমালিকানা গড়ে উঠা বাগানটির জন্য সরকারি পরামর্শ কিংবা সহায়তার জন্য কখনো কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ করেনি বাগান মালিক। তবুও কয়েকবার সার বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি এও বলেন, এই বাগানের উৎপাদিত চা থেকে পার্শ্ববর্তী পুরো এলাকার চায়ের চাহিদা পূরণ হয়। এছাড়াও চা শিল্পের বিকাশে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
পাঠকের মতামত