
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধিঃ
[ আর্টিকেলটি চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিস্থ নান্দীমুখ নাট্যদলের সদস্য আশীষ নন্দী’র ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত। পাঠকের সুবিধার্তে তা হুবহু তুলে ধরা হলো। ]
সময় মধ্য রাতের দিকে চলেছে। বাসায় ফিরতে হবে। দরদামে না মেলাতে রিক্সাতে না গিয়ে গণপরিবহণে যাবোই ভাবলাম। তেমন লোক সমাগম নেই। যারা দাঁড়িয়ে আছে তারা একটু দূরের যাত্রী। দুটো টমটম দাঁড়িয়ে। একবারে খালিটাতে উঠে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর এক দশ এগারো বছরের শিশু উঠে পড়লো টমটমে আমার সহযাত্রী হয়ে। বসলো আমার মুখোমুখি। হাতে তার দুপুরের খাবার নিয়ে আসার বক্স ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী। দেখেই বোঝা যাচ্ছে শ্রমজীবী শিশু।
সমস্ত ছাপাখানা বা মুদ্রণ সহায়ক সমস্ত কার্যক্রম এই এলাকায় অবস্থিত। এখানে ওর মতো অনেক শিশু কাজ করে। কাজ শেষে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করাতে উত্তরে জানলাম বাবা নেই মা আছে। মনটা কিছুটা খারাপ হলেও বাস্তব সত্য হলো আমাদের দেশের বাস্তবতায় এই শিশু শ্রম বা শ্রমিকরা আছে।
মায়াবী মুখটা দেখে আমার শিশু সন্তানটির মুখ মনে পড়লো। সে হয়তো ডেস্কটপে গেইম খেলছে নতুবা মায়ের সাথে বসে টিভি দেখছে বা গল্পের বই পড়ছে। ইচ্ছে করলে অনায়াসে তার দশ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে দিতে পারি। তবে আমার অন্য কিছু করতে ইচ্ছে হলো।
সদ্য সহযাত্রীটি আমার পাশে বসে পড়ার পর দেখলাম অনেক জায়গা খালি।
ইচ্ছে করলে অনায়াসে সামনের শিশু সহযাত্রীকে আমাদের দুজনের মাঝখানে বসাতে পারি। সহযাত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম শিশুটিকে আমাদের মাঝখানে বসালে তার কোনো আপত্তি আছে কিনা? অনায়াসে সম্মতি দিলো তাকে বসাতে। শিশুটিকে আমাদের মাঝখানে বসতে বলাতে বিনা সঙ্কোচে আমাদের মাঝখানে সে এসে বসলো।
ড্রাইভারকে বললাম এই শিশুর কাছ থেকে ভাড়া নিতে পারবে না। ড্রাইভার সম্মতি দিলো ভাড়া নেবে না। মনটা আমার ভালো হয়ে গেলো এই ভেবে মানুষত্ব এখনো কাজ করে মানুষের ভেতরে।
আর কয়েক দিন পরে ষোলই ডিসেম্বর। আমাদের স্বাধীনতা দিবস। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পঞ্চাশ বৎসর। খুব উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। সকলের মনে ও প্রাণে সেদিন উড়বে আমাদের জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত। আমার শিশু সন্তানের মতো টমটমের শিশু সহযাত্রীটি কি উড়াবে বাংলাদেশের পতাকা? আমি জানি না। তবে মনে প্রাণে চাইবো বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু আমাদের জাতীয় পতাকা উড়াক। প্রাণ খুলে গেয়ে উঠুক “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি” গাইতে গাইতে শ্বাস নিক।
তেরো ডিসেম্বর দু’হাজার একুশ।
সিএসবি-টুয়েন্টিফোর, ১৪/১২-ড
পাঠকের মতামত