
মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি :
নওগাঁর মান্দায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচার-প্রচারণায় জমজমাট হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে চলছে জমজমাট প্রচারণা। অনেক ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছেন ভোটাররা।
এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভোটের মাঠ। এরই মধ্যে সংঘর্ষ ও একাধিক হামলার ঘটনায় ১৪ জন আহত হয়েছে।
বুধবার দুপুরে নির্বাচনী প্রচারণার সময় পরানপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইলিয়াস খানের স্ত্রী বিলকিস সুলতানা রাজিয়াসহ তাঁর সঙ্গীদের বান্দাইপুর এলাকায় আটকে রেখে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থীর ভাই উত্তমসহ কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এনিয়ে এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এ উপজেলার নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে সর্বত্র। প্রতিটি ইউনিয়নের মোড় ও রাস্তার ধারে পোষ্টারে ছেয়ে গেছে। পাশাপশি প্রার্থীদের প্রচারণা ও পথসভা চলছে। আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। সন্ধ্যার পর প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হিড়িক বাড়ছে পাড়া-মহল্লা ও বাাজরের চায়ের দোকানে। একই সঙ্গে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৯৩ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৭৩ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৫৪৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবগুলো ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি রয়েছেন একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। বাঁকিরা জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্রদের অধিকাংশ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনী প্রচারে নৌকার প্রার্থীরা সভা-সমাবেশ করে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন। পাশাপাশি কর্মী সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করছেন। অপরদিকে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রাথীরা সভা-সমাবেশ করছেন না। বিরোধ এড়াতে সভা-সমাবেশ না করে কৌশল পাল্টিয়ে ভোটারদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
অন্যদিকে নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, প্রার্থীদের বাহাসে নির্বাচনী মাঠ ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে গনেশপুর ইউনিয়নে গত ১২ নভেম্বর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হানিফ উদ্দিন মন্ডলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শফিকুল ইসলাম বাবুল চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় প্রার্থীর আটজন কর্মী-সমর্থক আহত হন।
এছাড়া গত ৭ নভেম্বর ভারশোঁ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের কর্মীরা বিদ্রোহী প্রার্থী আলতাজ উদ্দিনের দুই কর্মীকে পিটিয়ে জখম করে। নৌকা প্রতীকে ভোট দিকে রাজী না হওয়ায় গত রোববার রাতে নৌকার প্রার্থী সুমনের হাতে মারধরের শিকার হন ইউনিয়নের সগুনিয়া মৎস্যজীবী পল্লির দুই নারীসহ চারজন ভোটার।
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকার মনোনীত প্রার্থীদের গলার কাঁটা হতে পারেন। বেশকিছু ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শক্তিশালী অবস্থানে আছেন। জমজমাট মাঠে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ দাবি করেন ভোটাররা।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সবধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কোন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
পাঠকের মতামত