পলাশ বড়ুয়া, শহীদুল ইসলাম:
ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে কক্সবাজারের উখিয়ার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এবারের ইউপি নির্বাচনের প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটার স্ব-স্ব ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেখা গেছে। একই দিন রাত ১১টার দিকে হলদিয়াপালং একটি ইউনিয়ন ছাড়া বাকী ৪ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারি ভাবে ফলাফল ঘোষণা করে উখিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিস।
বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সারাদেশের দ্বিতীয় ধাপের এই নির্বাচনে পাঁচ ইউনিয়নের ৪৫টি ওয়ার্ডের ৫০টি ভোট কেন্দ্রে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
এবারের নির্বাচনে জালিয়াপালং ইউপিতে- এস.এম ছৈয়দ আলম, রত্নাপালং ইউপিতে- নূরুল হুদা এবং রাজাপালং ইউপিতে তৃতীয় বারের মতো জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী সরকার দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও পালংখালীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তৃতীয় বারের মতো ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী।
উখিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজাপালং ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী নৌকা প্রতীকে ১৭৮১০ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিটকতম প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী সাদমান জামী চৌধুরী ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ১১৭৭৫ ভোট। আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান পেয়েছে ১২৬ ভোট। ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত হাতপাখা প্রতীকে হোছাইন আলি পেয়েছে ৩৪৫ ভোট।
পালংখালী ইউনিয়নে এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী ঘোড়া প্রতীক ৪৭২৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় বারের মতো বেসরকারি ফলাফলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে হ্যাট্টিক করেছেন। তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী এড. এম.এ মালেক চশমা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৯৯৯ ভোট। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে আবুল মঞ্জুর পেয়েছে ১৩০২ ভোট। মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ পেয়েছে ২৭৮৭ ভোট। সে ইতোপূর্বেও নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ হাতপাখা প্রতীক নিয়ে রাশেদুল আমিন পেয়েছেন ২৯১ ভোট। আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদত হোসেন পেয়েছে ৩০৭১ ভোট। সে গত দুই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিল।
রত্নাপালং ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত নুরুল হুদা নৌকা প্রতীকে ৭২৮৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী নুরুল কবির চৌধুরী ঘোড়া প্রতীক পেয়েছে ৬১৪০ ভোট। টেলিফোন প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজ উদ্দিন বাবু পেয়েছে ৫৪ ভোট। ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত হাত পাখা প্রতীক নিয়ে মোরশেদ আলম পেয়েছে ২৬৬ ভোট। আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: আব্বাস উদ্দিন পেয়েছে ১৭ ভোট।
জালিয়াপালং ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত এসএম ছৈয়দ আলম নৌকা প্রতীকে ৬৩৯৬ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী চশমা প্রতীক নিয়ে নুরুল আমিন চৌধুরী পেয়েছে ৫৯৩২ ভোট। ঘোড়া প্রতীকের বিএনপি ঘরানার আনোয়ার হোছাইন পেয়েছে ৪৯৮৯ ভোট। টেবিল ফ্যান প্রতীকে ছৈয়দ মোহাম্মদ সাদ্দাম হোছাইন পেয়েছে ৬২ ভোট। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত হাতপাখা প্রতীক নিয়ে নুরুল আমিন পেয়েছে ২০২ ভোট। মোটর সাইকেল প্রতীকের মো: মনিরুল আলম পেয়েছে ১৫১৯ ভোট। আনারস প্রতীক নিয়ে শফিকুল হুদা পেয়েছে ৩৫৫৭ ভোট। রজনী গন্ধা প্রতীক নিয়ে রফিকুল হুদা পেয়েছে ২৩ ভোট। অটোরিক্সা প্রতীক নিয়ে শাহ আমিন চৌধুরী পেয়েছে ১৭ ভোট।
হলদিয়াপালং ইউনিয়নে একটি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত থাকায় ফলাফল চুড়ান্ত হয়নি এমনটি জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ। তবে স্থগিত হওয়ার আগের কাস্টিং ভোট দিয়ে ফলাফল হবেনা, এটা নিশ্চিত।
হলদিয়াপালংয়ের ৮টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে অধ্যক্ষ শাহ আলম এর নৌকা প্রতীকের চেয়ে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমরুল কায়েস চৌধুরী কয়েকশ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
পুরো উপজেলার ৪৯টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ৩নং হলদিয়াপালং ইউনিয়নের নলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় ফলাফল স্থগিত করা হয় এমনটি জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন অফিসার শাহাদাত হোসেন। স্থগিত ওই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা- ৩৩০৫।
দ্বিতীয় ধাপে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য উখিয়ায় মাঠে ছিলেন অতিরিক্ত ১৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়াও বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে ২৫টি মোবাইল টীম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। এছাড়াও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী রোহিঙ্গারা যাতে কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রভাবিত হয়ে ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেই লক্ষ্যে রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের ২৫টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের গমনাগমণ নিয়ন্ত্রণে ছিল।
উখিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৫ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা করেছেন ৩৪জন। সংরক্ষিত মহিলা সদস্যপদে প্রার্থীতা করছে ৫৪জন। সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থীতা করছে ২৮০।এবারের ইউপি নির্বাচনে মোট ৩৬৮জন প্রার্থীতা করছে। উখিয়ার পাঁচটি ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৬১৩জন। তৎমধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৭ হাজার ২১৯জন। মহিলা ভোটার ৬৩ হাজার ৩৯৪জন। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৫০টি।
পাঠকের মতামত