
পলাশ বড়ুয়া ॥
সারাদেশের ন্যায় দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে উখিয়ার ৫ ইউনিয়নের ৪৫টি ওয়ার্ডের প্রত্যন্ত জনপদ। তবে সাধারণ ভোটারদের মাঝে উৎসবমূখর নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করলেও বহুমূখী চ্যালেঞ্জ সরকার দল আওয়ামীলীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের। নির্বাচনী এলাকায় দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে মাইকিং, মোটরসাইকেল শোডাউন, মিছিল-মিটিং।
এবারের নির্বাচনে পাঁচ ইউনিয়নের সবটিতে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রার্থীদের পাশাপাশি মনোনয়ন বঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী পরিবেশকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। অপরদিকে বিএনপি অফিসিয়ালি প্রকাশ্যে নির্বাচনে তবে তাদের সমর্থিত প্রার্থী রয়েছে প্রায় ইউনিয়নে। একই সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা করছে প্রতিটি ইউনিয়নে ।
রাজাপালং ইউনিয়ন ব্যতীত উখিয়ায় নৌকার প্রার্থীদের বিপরীতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়িয়েছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। সাথে নিজ দলের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে ঐক্য না থাকায় টেকনাফের মতো উখিয়াও নৌকার ভরাডুবি হতে পারে এমনটি আশংকা করছে আ’লীগের ত্যাগী ও প্রবীণ নেতাকর্মীরা।
তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করে চলেছে। প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ ও পুলিশ সুপার ভারপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
নির্বাচনী মাঠ ঘুরে জানা গেছে, উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী এমএ মনজুরের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে রয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী ও এমএ মালেক । সেখানে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোট হলে বর্তমান চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন আবারো জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন জুয়েল এবং আলী আহমদ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে চষে বেড়াচ্ছে।
রাজাপালং ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। এখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদমান জামী চৌধুরী। বর্তমানে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চলছে সমানে সমানে। জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীর পক্ষে সবসময় মাঠে দেখা যাচ্ছে ভগ্নিপতি সাবেক দুইবারের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে।
সাবেক চেয়ারম্যান শাহ কামাল চৌধুরীর ছেলে সাদমান জামী চৌধুরীর পক্ষে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী এবং উখিয়া উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরওয়ার জাহান চৌধুরী নির্বাচনী মাঠে না থাকলেও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরীকে মাঠে দেখা যাচ্ছে। রাজাপালংয়ের দুইজন প্রার্থীই হেভিওয়েট বলে সাধারণ ভােটারদের অভিমত।
রত্মাপালং ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হুদা। তার বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল কবির চৌধুরী, আব্বাস উদ্দিন ও মাহফুজ উদ্দিন বাবু রয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী নৌকার প্রার্থী নুরুল হুদার পক্ষে প্রচারণা করলেও দলের সিনিয়র নেতাকর্মীরা তার পাশে নেই। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত ঘরানার নুরুল কবির চৌধুরী সুবিধাজনক অবস্থান ভালো রয়েছে বলে জানা গেছে।
হলদিয়াপালংয়ে ভোটের মাঠে নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ আলমের বিপরীতে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী ইমরুল কায়েস চৌধুরী। মনোনয়ন বঞ্চিত ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, আমি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশী। জনগণ যদি স্ব-স্ব ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাহলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো ইনশাল্লাহ। তিনি আরো বলেন, নৌকার প্রার্থী শাহ আলম বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিবের ছোট ভাই হওয়ায় এবারও নৌকার টিকেট পেয়েছেন। তবে ভোটের মাঠে তিনি পিছিয়ে রয়েছেন।
নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ আলম ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলছেন, গত ৫ বছরে হলদিয়াপালংয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। কিছু কাজ অসম্পন্ন রয়ে গেছে। আমাকে এবারও সুযোগ দিলে তা সম্পন্ন করতে সহজ হবে। তাছাড়া আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষাণ্বিত হয়ে প্রতিনিয়ত আমার নামে অপ-প্রচার করে যাচ্ছে একটি মহল। এ নিয়ে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। ওই ইউনিয়নে একই ভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ও আমিনুল হক আমিন।
জালিয়াপালংয়ে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী এস.এম সৈয়দ আলমের বিপরীতে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে চশমা প্রতীকের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী, ঘোড়া প্রতীকের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোছাইন চৌধুরী। নতুন হিসেবে বেশ আলোচনায় রয়েছেন মনিরুল আলম মনির।
বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার যুক্তি তুলে ধরে আওয়ামী লীগের অনেকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নৌকা সঠিক জায়গায় যায়নি। নৌকার টিকিট পেয়েছে অজনপ্রিয় ব্যক্তিরা। আওয়ামী লীগ মনোনীত একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় নির্বাচনে তাদের বিজয় কঠিন হয়ে পড়েছে। দলীয় প্রধানসহ আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতারা হুঁশিয়ার করলেও তাতে বিদ্রোহী প্রার্থীরা তা আমলেই নিচ্ছে না।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ মুজিবুর রহমান বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের নাম, পদবী ও মোবাইল ফোন নম্বর উল্লেখ করে জেলা কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে বহিস্কারের সুপারিশসহ পত্র পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদ্রোহীদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়েছে। তারপরেও না হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রার্থীদের প্রচার ততই বাড়ছে। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন প্রার্থীরা। প্রার্থী ভোট নেওয়ার জন্য নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সাধারণ ভোটাররা প্রার্থীদের নিয়ে চুলছেড়া বিশ্লেষণ করছেন। তবে অধিকাংশ ভোটার দলীয় প্রার্থীর চেয়ে তাদের সুখে-দুঃখে যে পাশে থাকবেন, তাকেই ভোট দেবেন বলে চায়ের দোকানে আলাপ আলোচনা চলছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্ণিং অফিসার মো: ইরফান উদ্দিন জানান, আসন্ন ইউপি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তিনি উৎসবমূখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্টানে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সব ধরণের প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, উখিয়ায় আসন্ন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা করছে ৩৪জন। সংরক্ষিত মহিলা সদস্যপদে প্রার্থীতা করছে ৫৪জন। সাধারণ সদস্য পদে প্রার্থীতা করছে ২৮০। এবারের ইউপি নির্বাচনে মোট ৩৬৮জন প্রার্থীতা করছে। উখিয়ার পাঁচটি ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৬১৩জন। তৎমধ্যে পুরুষ ভোটার ৬৭ হাজার ২১৯জন। মহিলা ভোটার ৬৩ হাজার ৩৯৪জন। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৫০টি। ভোট কক্ষের সংখ্যা ৩৩১টি।
পাঠকের মতামত