
কথা বলার জন্য যে শক্তি ও যোগ্যতার প্রয়োজন,চুপ থাকার জন্য অনেক বেশি শক্তি ও যোগ্যতার প্রয়োজন হয়।” কারণ নিয়তি সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়।
আমাদের সমাজের মানুষ কোন ধরনের তা জানা দরকার? একেক মানুষের মানসিকতা একেক ধরণের।
পৃথিবীতে দুই ধরণের মানুষ আছে এক ধরণের মানুষ আপনাকে ব্যাথা দেবে, অন্য ধরনের মানুষ আপনাকে বদলে দেবে। বদলানোটা নির্ভর করবে আপনার উপর। তাঁদের দেওয়া উপদেশ, আঘাত কিংবা ব্যাথা নিয়ে আপনি নিজেকে কিভাবে বদলাবেন! সব সময় নিজের যোগ্যতার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। কে, কি বলল তাতে আপনি কান দেবেন কেনো? মনে রাখবেন, হার মেনে নেওয়ার নাম জীবন নয়, লড়াই করে বেঁচে থাকার নাম জীবন।
একটি সংগৃহীত গল্প দিয়ে আসল কথা শুরু করছি।
একদিন এক বাপ তার দুই ছেলে একটা গাধা নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল।তারা তিন জনেই গাধার পিটে বসে ছিল।কিছুদুর গিয়ে একটা লোক তা দেখল এবং বলল,তোমাদের কি দয়া মায়া নেই।একটা জন্তুর উপর তিনজন বসে আছো।তোমরা কি মানুষ না কি জানোয়ার।তোরা তো গাধার চেয়েও গাধা।
এই কথা শুনার পর বাপটা বলল হে,তাইতো!
তখন ছেলেরা বলল, বাবা তুমি গুরুজন। তুমি গাধার উপরে বস আমরা হাটি।তখন ছেলেরা হাটতে লাগল।কিছুদুর যাওয়ার পর আর কিছু লোক বলল,দেখ বাপটা কি পাষাণ! সে গাধার উপরে বসে আছে আর ওদের হাটাচ্ছে।তখন বাপটা নেমে গেল,ছেলেদের গাধার উপরে বসাল।যেতে যেতে কিচুক্ষণ পর চায়ের দোকানের পাশে কিছুলোক বলল,দেখ ছেলেগুলো কি বেয়াদব বুড়াটাকে রাস্তায় হাটাচ্ছে ছেলেগুলো উপরে বসে আছে।এই কথা শুনার পরে দুইজনেই গাধার পিট হতে নেমে গেল এবং গাধাকে খালি হাটাচ্ছে।তিনজনেই হাটছে।কিছুদুর যাওয়ার পর আর কিছুলোক দেখল এবং বলল দেখ ওরা কি রকম মানুষ গাধা থাকতে ওরা হেটে আসছে।ওরা গাধার চেয়েও গাধা।
এখন আমার কথা হচ্ছে? প্রথমের লোকগুলো বলেছিল গাধার চেয়েও গাধা।
শেষের লোকগুলো বলল গাধার চেয়েও গাধা।
কোনো একটা কাজ করতে গেলে অনেকে অনেক কিছু বলবে? অনেকে ভাল বলে, অনেকে খারাপ বলে।সেদিকে কর্ণপাত করে নিজের কাজকে অবহেলা করা বুদ্ধি মানের কাজ নয়। ধৈর্য্য রাখুন, অপরের কথায় নিরাশ হবেন না, মনে রাখবেন, সময় কখনো প্রতারণা করেনা। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারাটাই বড় চ্যালেঞ্জ, সবাই তা পারেনা। যারা পারেনা তারা ইতিহাসের পাতায় ঠাই পাইনা, পরাজিত জীবন নিয়ে ধুকে ধুকে মরে। আর যারা পারে, তারা ইতিহাসের করতলগত হয়। সমাজে মাথা উচু করে বাঁচে। সমাজ তাদের স্বীকৃতি দেয়।
তবে জীবনে সামান্য হোঁচট খেয়ে ও অনেকে হতাশ বা নিরাশ হয়ে পড়ে। ভাবে আমাকে দিয়ে কিছু হবেনা, আমি আর কিছুই করতে পারবনা, আমি এখানেই শেষ। তাঁদের উদ্দেশ্যে বলছি, নিরাশ হবেন না, জীবনের রাস্তা কখনো শেষ হয় না, একটা রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে আরেকটা খুলবেই, এটাই বাস্তবতা। তাই বাস্তবকে মেনে নিন আর সামনের দিকে সব কিছু ঝেড়ে ফেলে অগ্রসর হউন, সোনালী সকাল আপনার প্রত্যাশা করছে।
অপরে যা বলুক।সেটা বাদ দিয়ে নিজের কাজকে নিজের মত করে করতে হবে। তাতেই সফলতা বয়ে আনবে।। এ সমাজে সমালোচনাকারীর অভাব নেই। যারা আপনাকে পছন্দ করবেনা, তাঁরা আপনার দোষ খোঁজাখুঁজি করবেই। আপনার হাসিতে দোষ, কথাতে দোষ, কথা না বললে দোষ, ইত্যাদি বিষয়ে দোষ ধরায় ব্যাস্ত থাকবে। মনে রাখবেন, কিছু মানুষের স্বভাবই হলো অন্যের ছোট দোষকে বড় করে দেখা, কারণ তাঁরা আপনাকে হিংসা করে, আপনার গুণ তাদের অসহ্য লাগে। সুতরাং তাঁদের এড়িয়ে চলুন। তাঁদের কাজ তাঁদেরকে করতে দিয়ে আমাদের কাজ আমাদের করতে হবে। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
হিন্দীতে একটি প্রবাদ বাক্য আছে ” #হাতি চলে রাস্তা মে কুত্তা বুকে হাজার, সার্ধুং কো দূর্ভাব নেহি জব নিন্দা সংসার।” আপনি যদি আপনার কলিজাটাও রান্না করে খাওয়ান তবু ও এক শ্রেণির লোক আছে তারা আপনার আড়ালে বলবে লবণ একটু কম হয়েছে। এটাই স্বাভাবিক। কেউ আপনার সফলতাকে বা উন্নতিকে সহজে মেনে নিতে চাইবেনা, বারবার আঘাত হানবে, বিপদের সম্মুখীন করতে চাইবে, মিস গাইড করবে, যাতে আপনি ব্যর্থ হন কারণ এ সমাজে এমন এক ধরণের মানুষ আছে যারা আপনার ব্যর্থতা দেখে মজা পাই। তাই তারা সেগুলো করে। তাই বলে আমি বা আপনি হতাশ হবেন কেনো!
গুণীজনদের একটা কথা উপলব্দি করুন, জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া খুব সহজ, কিন্ত কঠিন হলো জীবনের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকা। যে বা যারা জীবনের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছেন বা থেকেছেন,তাঁরাই সমাজের প্রথম কাতারে আসীন হয়েছেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তারা স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।
হতাশ হবেন না, কোনো এক মুহূর্তে আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় কস্টটাই আপনার সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে দাঁড়াবে। আপনাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সহায়তা করবে। হযতো আপনাকে আপনার চুড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছাতে প্রেরণা যোগাবে।
মনে রাখবেন, মাদার তেরেসার একটি উক্তি – যদি ব্যর্থ হও, হতাশার কিছুই নেই,শুধু মনে রেখো, অন্ধকার যত গভীর হয়,সূর্য তত দ্রুত উদিত হয়।
কখনো কখনো হেরে গিয়ে একটুখানি সুখ খুঁজে নিতে হয়, মেনে নিতে হয়, আমি হেরে যাওয়াতে অন্য একজন অনেক বেশি খুশি হয়েছে। হতে পারে সেটা অনাহুত উদারতা।
আপনার কি আছে তা আপনার গায়ে লেখা নেই। কিন্তু আপনার ব্যবহারে দেখা যাবে আপনার পরিবার কোথায় আছে। তাই যে যাই বলুক, চুপ খাকুন। কম কথা বলুন। গুনুন বেশি। যে যাই করুক, কেউ পার পাবেনা। #কারণ নিযতি, সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়।
লেখকঃ শিক্ষক মেধু কুমার বড়ুয়া
সাধারণ সম্পাদক
উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি
উখিয়া, কক্সবাজার।
পাঠকের মতামত