মান্দা (নওগাঁ) সংবাদদাতা ॥ নওগাঁর মান্দায় জেলহাজত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র। গত বৃহস্পতিবার প্রতারনার ফাঁদে ফেলে চক্রের সদস্যরা একব্যক্তির নিকট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে সাড়ে ১২ লাখ টাকা।
এই চক্রের সদস্যরা ডলার, মূর্তি ও তক্ষকসহ বিভিন্ন প্রলোভনে লোকজনদের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। তাদের বিরুদ্ধে মান্দা থানায় এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলার মৈনম ইউনিয়নের মংলাপাড়া গ্রামে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র। এ চক্রের মূলহোতা গ্রামের মৃত আক্কাস আলীর ছেলে এনামুল হক। তাঁর নিকটতম প্রতিবেশি আব্দুস সালাম, এরসাদ আলী ও মাজেদুল হক এবং ভদ্রসেনা গ্রামের দুলাল হোসেন চক্রটির অন্যতম সদস্য। সংঘবদ্ধরা ডলার, তক্ষক ও মূর্তি দেওয়ার কথা বলে ফাঁদে ফেলে লোকজনদের নিকট থেকে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। চক্রের সদস্যরা একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাস করে। জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারো শুরু করেন প্রতারণার কারবার।
স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার জেলার ধামইরহাট উপজেলার আব্দুল জব্বার নামে একব্যক্তিকে মূর্তি দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন চক্রের সদস্য আব্দুস সালাম, তাঁর ছেলে এরসাদ আলী ও দুলাল হোসেন। মৈনম উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটিয়ে ভূক্তভোগীকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা। এরপর ভুক্তভোগী আব্দুল জব্বার খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধারে বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়ে ব্যর্থ হন।
মান্দা থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত বছরের ২৫ জুলাই তক্ষক (পেকোনিডি গোত্রের গিরগিটি প্রজাতির) দেওয়ার কথা বলে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার ইঁটানি গ্রামের সবুজ হোসেনের নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন চক্রটি। ঘটনায় থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে চক্রের অন্যতম সদস্য আব্দুস সালাম (৫৫) ও কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার কুদুটি গ্রামের ইয়াছিন মিয়ার ছেলে এরশাদুল্লাহকে (৪৮) গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত শেষে আব্দুস সালাম, তাঁর ছেলে এরশাদ আলী, প্রতারক চক্রের মূলহোতা এনামুল হক ও এরশাদুল্লাহর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
সূত্রটি আরো জানায়, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চকখোড়া পাখিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী শামীম হোসেনকে ডলার দেওয়ার কথা বলে ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন প্রতারক চক্রটি। এ ঘটনায় মৈনম মংলাপাড়া গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে এরশাদ আলীকে (৩৮) গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্ত শেষে এ মামলায় প্রতারক চক্রের মূলহোতা এনামুল হক, এরসাদ আলী ও মাজেদুল হকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।
মৈনম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইয়াচিন আলী রাজা বলেন, ‘প্রতারকরা একব্যক্তির নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে শুনেছি। তবে ভুক্তভোগীদের পক্ষে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমাকে অবহিত করা হয়নি।’
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, উপজেলার মৈনম ইউনিয়নের মংলাপাড়া গ্রামের এনামুল হক, আব্দুল সালাম, এরসাদ আলী প্রতারক চক্রের চিহ্নিত সদস্য। এদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, গত বৃহস্পতিবার এ চক্রের সদস্যরা একব্যক্তির নিকট থেকে আবারো টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠকের মতামত