পলাশ বড়ুয়া:
কক্সবাজারের উখিয়ায় স্থানীয়দের জোত জমি দখল করে রোহিঙ্গা বসতি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৯নং ক্যাম্পের সিআইসির বিরুদ্ধে। যার ফলে জমির ভোগদখল হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে কয়েকটি পরিবার। এমন ঘটনা ঘটেছে উখিয়া বালুখালী ৯নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।
স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ মোস্তাক আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মানবিক চিন্তা করে রোহিঙ্গাদেরকে জায়গা দিয়েছিলাম। কিন্তু বনবিভাগের জায়গা সংলগ্ন আমার বিএস খতিয়ান নং-১৯, সৃজিত খতিয়ান নং-২৫৮, বিএস ২৫৬, ২৫৮ দাগের ১০ শতক খতিয়ানী জমি গুলো দখল করে নিয়েছে রোহিঙ্গারা।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা সরকারি বনভূমিতে বসবাস করলেও স্থানীয়দের নিজস্ব জায়গাতে বসতি গড়ে তোলার কোনো এখতিয়ার নেই। অথচ রোহিঙ্গারা এখন স্থানীয়দের জায়গায় বসবাস করতে শুরু করেছে ক্যাম্প ৯এর সিআইসি সহযোগীতায়।
তিনি আরো বলেন, আমি প্রবাস জীবন শেষ করে পৈত্রিক ভিটেমাটি বালুখালীতে স্বপরিবারে বসবাস করছি। আমার জায়গায় সিআইসির প্রভাবে রোহিঙ্গারা ৫টি ঘর তুলেছেন আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সিআইসির উপর সরল বিশ্বাস করে সমস্ত কাগজপত্র দেখিয়েছি। আমার খতিয়ানভুক্ত সকল কাগজ ঠিক থাকার পরও আমার জায়গা
আমি ভোগ দখল করতে পারতেছিনা। আমি স্থানীয় এনিয়ে জেলা প্রশাসক, আরআরআরসি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সকল দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি।
একই কথা মৌলভী গফুর উল্লাহ’র। তিনি বলেন, বালুখালী বলীবাজারস্থ মার্কেটে তার ৫ শতাধিক দোকান ছিল, কৌশলে রোহিঙ্গা পুড়িয়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে আমার জায়গায় কোন দোকান নির্মাণ করতে দেয়নি ক্যাম্প ৯এর সিআইসি। এছাড়াও
স্থানীয়দের জোত জায়গার উপর ৫শতাধিক রোহিঙ্গা ঝুপড়ি স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়াও কাটাতারের ঘেরার ভিতরে স্থানীয়দের জোত প্রায় ২০ একর জমির ক্ষতিপূরণ অথবা রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ পূর্বক ঘেরার বাহির করে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখিত আবেদন করেছে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামবাসীরা।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বালুখালীস্থ ৯নং ক্যাম্প সহ আরো ৭টি ক্যাম্পে প্রায় ১৫০ একর জোত রেকর্ডিয়
জমি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কাটাতারের ভিতরে ডুকে গেছে। এসব জমি গুলোতে রোহিঙ্গা বসতি গড়ে উঠেছে। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের বর্জ্যরে কারণে চাষাবাদ করা যাচ্ছে না।
তিনি এও বলেন, ক্যাম্প প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসন রোহিঙ্গাদের প্রতি অতি প্রীতিভাজন হওয়ার কারণে স্থানীয় জনগোষ্টির মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির চেয়ারম্যান ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য নিযুক্ত বাংলাদেশীরাও প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের চরম অযত্ন, অবহেলা করছে। হয়ত: তারা মনে করছে, দেশের চেয়ে তাদের চাকরিটা অনেক বড়। যার কারণে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে স্থানীয়রা।
তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য উচ্চ পদে স্থানীয়দের চাকরি না দিয়ে তাদের নিকটাত্নীয়দের দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মানবতার
খাতিরে তাদের আশ্রয় দিয়েছে বলে এতোদিন চুপ থেকেছি।
তিনি এও বলেন, স্থানীয়দের জোত জমি কাটাতারের ভিতরে ডুকানো সম্পূর্ণ অবৈধ।
যেহেতু কাটাতারে ভিতরে স্থানীয়দের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। তাই এর প্রতিকারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ চাই। অবিলম্বে এসব জোত জমি
দখলমুক্ত করতে হবে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালুখালী ৯নং ক্যাম্পের ইনচার্জ (সিনিয়র সহকারী সচিব) মো: তানজীম বলেন, ক্যাম্পের কাটাতারের ভিতরে স্থানীয় জায়গা আছে। তবে সেখানে রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করা হয়নি। বিস্তারিত জানার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত এর মুঠোফোনে (০১৮৪৭৪৬৬৮০০) একাধিকবার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করা হয় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
পাঠকের মতামত