
ডেস্ক রিপোর্ট।। ব্যবসা পদ্ধতি ও গ্রাহক ভোগান্তির কারণে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি’র বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এর কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নোটিশে ইভ্যালি’র আর্থিক ত্রুটির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আগামী ১ আগস্টের মধ্যে এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার (১৯ জুলাই) গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সুরক্ষা এবং ই-কমার্স খাতে নেতিবাচক প্রভাব রোধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিওটিও সেল এই নোটিশ পাঠায়।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ১৬ জুনের প্রতিবেদনে গ্রাহকদের কাছে ইভ্যালির ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫০ টাকা দায় থাকার তথ্য উঠে আসে। এই পরিমাণ অর্থ গ্রাহকদের থেকে অগ্রিম নিয়েও তার বিনিময়ে অর্ডার করা পণ্য বা কোনো রিফান্ড দেয়নি কম্পানিটি। একই সময় পণ্য সরবরাহকারী মার্চেন্টের কাছে প্রতিষ্ঠানের দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা বলা হয়। বিপুল এ দায়ের বিপরীতে কম্পানিটির মোট সম্পদ মাত্র ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা। আর চলতি মূলধন মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা।
এর ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়েও তাদের প্রত্যাশিত পণ্য সময়মতো না দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। একই সংগে মার্চেন্টদেরও পণ্যের অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে না। আশঙ্কা করা হয়, ঘাটতি থাকা অর্থ কম্পানিটি পাচার করেছে অথবা আত্মসাৎ করেছে।
নোটিশে কারণ দর্শানোর সংগে প্রতিষ্ঠানটিকে বাধ্যতামূলকভাবে আরো যেসব তথ্য দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে সেগুলো হলো :
ক. চলতি বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে মোট ৪০৭ কোটি টাকার বেশি দায়ের বিপরীতে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা চলতি সম্পদ থাকার কারণ কী? অবশিষ্ট টাকা ইভ্যালি’র কাছে আছে কি না—থাকলে সে বিষয়ে তথ্য এবং না থাকলে তার পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা।
খ. ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছে মোট দায়ের পরিমাণ কতো? গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া অগ্রিম অর্থের বিপরীতে প্রতিশ্রুত পণ্য প্রদানের বর্তমান অবস্থা এবং এ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
গ. ১৫ জুলাই পর্যন্ত মার্চেন্টদের কাছে দায়ের পরিমাণ, তা পরিশোধের বর্তমান অবস্থা এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ঘ. ব্যবসা শুরুর পর থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ইভ্যালি কী পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেছে, মার্চেন্টদের কী পরিমাণ অর্থ শোধ করেছে এবং প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতে কী পরিমাণ অর্থ খরচ করা হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ
ঙ. ইভ্যালির ব্যবসা পদ্ধতি ও বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা
চ. এ ছাড়া ডিজিটাল কমার্স পলিসি (সংশোধিত) এবং ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন কোনো ব্যবসায় পদ্ধতি, কার্যক্রম ইভ্যালিতে এখনো আছে কি না? থাকলে কী এবং সে বিষয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা।
এর আগে গত রবিবার এক বৈঠকের পর বাণিজ্যসচিব সাংবাদিকদের জানান, ইভ্যালি কিভাবে তার গ্রাহক ও মার্চেন্টদের বকেয়া পরিশোধ করবে, তার ব্যাখ্যা তলব করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে কম্পানি অবসায়ন করতে লিকুইডেটর কিংবা কম্পানির সব সম্পদ জব্দ করতে আদালতে মামলা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
পাঠকের মতামত