
বিশেষ প্রতিনিধি:
রোববার (১৮ জুলাই) কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে বিজিবি চেকপোস্টে আটক হন আবুল কাসেম নামে নামে এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে যুগান্তরের গাজীপুর স্টাফ রিপোর্টার পরিচয় দিয়ে দিয়ে বিজিবি সদস্যদের গাড়ীতে তল্লাশী চালাতে বাঁধা দেন।
এসময় বিজিবি সদস্যরা সন্দেহ হলে তাকে আটক করে। পরে বিজিবি খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ব্যক্তি গাজীপুরে একটি নারী নির্যাতন মামলার আসামী। বিজিবি তাকে টেকনাফ থানায় সোপর্দ করলে পুলিশে সেই মামলায় কারাগারে প্রেরন করেন। টেকনাফ থানার (ওসি) হাফিজুর রহমান তাকে কারাগারে প্রেরনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে প্রাইভেট কারে দাপিয়ে বেড়ানো, বিজিবি সদস্যদের সাথে ঔদ্ধত্বপূর্ন আচরনের কারনে আটক হওয়ার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে অনুসন্ধানে উঠে আসে অপরাধ জগতের সাথে কাসেমের সম্পৃক্ততার নানা কাহিনী।
নানা অপকর্ম করে মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে পালিয়ে ছিলেন দীর্ঘ দিন, আর এসব অপকর্ম থেকে নিজেকে আড়াল করতে নাম লিখান আন্ডারগ্রাউন্ড একটি দৈনিক পত্রিকায়। সাংবাদিক পরিচয় ধারণ করে একে একে জন্ম দিতে থাকে চাঁদাবাজি, ধর্ষন, নারী নির্যাতন, ভূমি দস্যুতার মতো বড় বড় অপরাধের।
অলৌকিক ভাবে রাতারাতি হাতে পেয়ে যান আলাদিনের চেরাগ। প্রাইভেট কার চড়ে হাকিয়ে বেড়ানো এখন তার লাইফ স্টাইল। অপরাধ সম্রাজ্যের পরিধি বাড়াতে আন্ডার গ্রাউন্ড পত্রিকা থেকে অতিসম্প্রতি হয়ে উঠেন যুগান্তর পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার।
পুলিশের দাবী তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অন্তত ডজন খানেক মামলার রেকর্ড রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ঝিমংখালীর আবু শামার ছেলে আবুল কাশেম উরুফে রোহিঙ্গা কাইশ্যা। নেহায়েত দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম এবং বেড়ে উঠা। অভাবের সংসারে প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে।
একপর্যায়ে এলাকায় ধর্ষন, মারামারি ও মাদক মামলার আসামী হয়ে ঢাকায় পালিয়ে এসে গাজীপুর জয়দেবপুর এলাকায় আশ্রয় নেয়। কিছু সময় মুক্ত বলাকা নামক একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম শুরু করে। কয়েক বছরের মাথায় ভবানীপুর এলাকার মঈনুদ্দীনের মেয়েকে বিয়ে করে স্থায়ী ভাবে সংসারপাতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জয়দেবপুর এলাকার সাংবাদিক ও স্থানীয়রা জানায়, গোটা জয়দেব পুর এলাকায় এক নারী এমপির পালিত পুত্র পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে প্রথমে স্থানীয় সাংবাদিকদের কোনঠাসা করে। পরে যুগান্তর গাজীপুর প্রতিনিধি নিয়োগ পেয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
চাঁদাবাজি, শ্লীলতাহানী, পাহাড় দখল থেকে শুরু করে এমন কোন অপরাধ নেই যেখানে কাসেমের হাত ছিলোনা। তার বিরুদ্ধে কেউ অবস্থান নিলেই অবৈধ টাকার জোরে লোকাল গোন্ডা লেলিয়ে দিয়ে ঘায়েল করে ছাড়তো।
এদিকে, তার নিজ এলাকার বাসিন্দারা জানান, উখিয়া-টেকনাফের মাদক কারবারী ও রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারেটিজ অর্গনাইজেশন (আরএসও) এর একজন নেতার সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক।
তাছাড়া ঢাকা থেকে কক্সবাজার পালিয়ে যাওয়ার পর উখিয়া এলাকার পালংখালী ইউনিয়নের চিহ্নিত ইয়াবাকারবারী ডেকুরেশন জাফরের ছেলে নুরুল বশরের সাথে ছিলো নিয়মিত উঠাবসা। তার ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটিও বশরের দেয়া বলে জনশ্রুতি রয়েছে এমনটি জানান স্থানীয়রা। কিন্তু আশ্চর্য জনক বিষয় হলো তার সাংবাদিক হয়ে উঠার গল্প ও দামী গাড়ী হাকানো দেখে অবাক খুদ তার প্রতিবেশীরা।
কক্সবাজারে সাংবাদিকরা জানান, গত ৫ জুলাই প্রাইভেট কার যোগে দুই জন রোহিঙ্গা নারী পাচার কালে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক হয়। পরে নিজেকে যুগান্তরের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে স্থানীয় এক সাংবাদিকের অনুরোধে ছাড়া পেয়ে যায়।
তারা আরো জানান, বিগত এক মাস আগে ঢাকা থেকে টেকনাফ গিয়ে কক্সবাজার জেলায় অন্তত ৯ জন যুগান্তরের প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে মাদক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মোটা অংকের অর্থের বিনিমিয়ে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে সমালোচনার জন্ম দেয়।
তার বিরুদ্ধে, দেশের বিভিন্ন থানায় ভিন্ন সময়ে দায়েরকৃত ডজন খানেক মামলার তথ্য উঠে এসেছে বার্তা বাজারের অনুসন্ধানে। কক্সবাজার সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা নং জি আর- ২২৬/০৯, রামু থানা মাদক মামলা জি আর নং ১৬৬/১৫ ও জি আর নং-৪৯/১১। এছাড়াও রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিট মামলা (বন) সিআর-৮৪/২০১০, গাজীপুর সিআর চাঁদাবাজি মামলা নং-৮১২/১৭, গাজীপুর তথ্য প্রযুক্তি সিআর মামলা নং-৮১৩/১৭, গাজীপুর কোর্ট- ১৯০/১৭, চাঁদাবাজি দন্ডবিধি মামলা ৩৮৫/৫০০, তিতাস গ্যাস মামলা নং- ৪০-১১/০৫/১৪, জয়দেবপুর থানা নারী ও শিশু নির্যাতন (ধর্ষণ) মামলা নং ১৮/২১।
তার জন্ম স্থান এবং গ্রামের বাড়ি টেকনাফ হলেও সে এনআইডি কার্ডে ঠিকানা ব্যবহার করেছে কক্সবাজার পৌরসভার বৈদ্যগোনা এলাকার। এছাড়াও কক্সবাজারের যেসব মামলা গুলো রয়েছে সেসব মামলায় তার স্থায়ী ঠিকানার ভিন্নতা রয়েছে।
পাঠকের মতামত