
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালীতে ২৭টি স্বর্ণেরবার লুটের ঘটনা ঘটেছে। এসব স্বর্ণের বাজারমূল্য ৩কোটি টাকা। এসব স্বর্ণ লুটের ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের এক ডজন নেতাকর্মী জড়িত রয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে কয়েক লাখ টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে ।
এ নিয়ে গত কদিন ধরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে এলাকা জুড়ে। ইতিমধ্যে স্বর্ণেরবার লুটেরা গা ঢাকা দিয়েছে বলেও জানা গেছে।
জানা গেছে, গত ২১ জুন বিকাল পাঁচটার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পালংখালী গোলামবারীর রাস্তার মাথা এলাকায় স্বর্ণেরবার লুটের ঘটনাটি ঘটেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং কাটাখালী এলাকার শীর্ষ ইয়াবা ও স্বর্ণ চোরাচালানকারী জনৈক কায়সার দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তে ইয়াবা ও স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। লুট হওয়া স্বর্ণের মালিক ওই কায়সার বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও এলাকায় সে ইয়াবা কায়সার নামে পরিচিত।
অনুসন্ধানে মিয়ানমারের বাসিন্দা জনৈক কালা আহমদের সাথে গভীর সু-সম্পর্ক তার। সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সীমান্তের ওপার মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণেরবার নিয়ে আসে কায়সার। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শহর গুলোতে পাচার করে এসব স্বর্ণ। তাছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক স্বর্ণ চোরাচালান ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে সে।
ঘটনার দিন স্বর্ণের একটি বড় চালান কক্সবাজারের উদ্দেশ্য নিয়ে যাওয়ার সময় উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি পশ্চিম পালংখালী এলাকার বাসিন্দা সাবেক বিএনপি নেতা (নব্য আওয়ামী লীগ নেতা) আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. জুনাইদ এবং গয়ালমারা এলাকার নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ ২৭টি স্বর্ণেরবার লুট করে নিয়ে যায়।
স্বর্ণেরবার লুটের ঘটনায় যাদের নাম উঠে এসেছে তারা হলো, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের পালংখালী বাজার এলাকার কালু ড্রাইভার ছেলে আলম শাহ, পশ্চিম পালংখালী এলাকার আজিম উদ্দিনের ছেলে কাশেম আলী, আইয়ুব ইসলামের ছেলে নুরুল ইসলাম, ও নলবনিয়া এলাকার মরহুম সিরাজুল ইসলাম (মেম্বার) এর ছেলে মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামী ফয়েজুল ইসলাম।
অভিযুক্ত জুনাইদের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ষড়যন্ত্র করছে। আসন্ন সম্মেলনে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতির প্রার্থী হওয়ার পর থেকে আমার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করে আসতেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ইউপি সদস্য বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ সত্য। ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার ইন্ধনে স্বর্ণের গুলো লুট করা হয়েছে। স্বর্ণেরবার লুটের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে।
যুবলীগ নেতা জাহেদ আলম বলেন, সীমান্তের ওপার থেকে আসা স্বর্ণ ও ইয়াবা লুটের ঘটনা কোন নতুন বিষয় নয়। এরকম অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী আমরা। একটি ক্ষমতাশালী গ্রুপ এসব নিয়ন্ত্রণ করে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদত হোসেন জুয়েল বলেন, স্বর্ণেরবার লুটকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। এঘটনা আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পালংখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি এম. এ মঞ্জুর, স্বর্ণেরবার লুটকারীদের খোঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার আহব্বান জানান । তাদের কারণে প্রতিনিয়ত দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ বলেন, আপনারা খোঁজ খবর নেন। কারা এ ঘটনায় জড়িত। জড়িতদের খোঁজে বের করা হউক।
এদিকে স্বর্ণের বার লুটের ঘটনায় জড়িতদের আটক করতে বিজিবি সদস্যরা কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে বলেও সূত্রে জানা গেছে।
উখিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ আহমেদ সনজুর মোর্শেদ বলেন, এধরনের কোন খবর পায়নি। কেউ থানায় অভিযোগও করেনি। খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বর্ণেরবার লুটের ঘটনাটি লোকমুখে শুনছি। বিস্তারিত খবর পায়নি।
পাঠকের মতামত