প্রকাশিত: ২০/০৬/২০২১ ৭:২১ অপরাহ্ণ
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর জোরদার তৎপরতা বাড়াতে হবে

 

ঢাকা, ২০ জুন, ২০২১: রোহিঙ্গা সঙ্কটের চূড়ান্ত সমাধান হলো মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়িত্বশীল প্রত্যাবাসন এবং তা নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ প্রয়োগে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর তৎপরতা আরও বহুগুণে বৃদ্ধি করতে হবে।

আজ কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) আয়োজিত একটি ওয়েবিনারে বক্তাগণ এ অভিমত প্রকাশ করেন। তাঁরা প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক মর্যাদা, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সামাজিক সংহতি নিশ্চিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবেশ পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করাও আবশ্যক বলেও অভিমত প্রকাশ করেন।

বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে, কক্সবাজারে কর্মরত ৫০টি স্থানীয় ও জাতীয় এনজিওর নেটওয়ার্ক সিসিএনএফ ‘ওয়ার্ল্ড রিফিউজি ডে: টুগেদার উই হিল, লার্ন অ্যান্ড শাইন’ শীর্ষক এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন সিসিএনএফের দুই কো-চেয়ার রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক কোস্ট ফাউন্ডেশন এবং আবু মোর্শেদ চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক-পালস। আয়োজকদের পক্ষে এতে বক্তৃতা করেন আরিফুর রহমান (প্রধান নির্বাহী, ইপসা), বিমল চন্দ্র দে সরকার (প্রধান নির্বাহী, মুক্তি কক্সবাজার), আবুল কাশেম (নির্বাহী পরিচালক, হেল্প কক্সবাজার), জাহাঙ্গীর আলম (সিসিএনএফের সদস্য সচিব এবং কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক)।

ওয়েবিনারে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নারীপক্ষের শিরীন হক, দুর্যোগ ফোরামের গওহর নঈম ওয়াহরা, কক্সবাজারে আইওএমের প্রতিনিধি মানুয়েল মনিজ পেরেরা, এনজিও প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়কারী পিয়াস মুলনজ্যা, বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর-এর উপ-প্রতিনিধি সু চিন রি।

আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব মিয়ানমারের। শুধু মানবিক সহায়তাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মায়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করা উচিত। জাতিসংঘের উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারী ক‚টনীতি, বিকল্প কূটনীতি তথা’ট্র্যাক টু’ কূটনীতি এবং সুশীল সমাজেরও কূটনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।

আবুল কাশেম বলেছেন, ক্যাম্পগুলিতে পানি সরবরাহ করতে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে পানি তোলা হচ্ছে, এর ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কৃষকসহ স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এটি স্থানীয় মানুষের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভ তৈরি করছে। নাফ নদী এবং রেজু খালের পানি সংশোধন করে তা ক্যাম্পে এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সরবরাহ করা যেতে পারে। ক্যাম্পগুলিতে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। গওহর নঈম ওয়াহরা বলেন, ভূগর্ভস্থ পনির ব্যবহার এখনি বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ, বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা ব্যবহার এক্ষেত্রে একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে। এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের পরিবর্তে ধানের তুষ ভিত্তিক চুলা চালু করা প্রয়োজন। স্থানীয় পর্যায় থেকে শুটকি মাছ ও লবণ ক্রয় করা গেলে তা অর্থনৈতিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে।

শিরীন হক বলেন, স্থানীয় মানুষ এবং স্থানীয় সংস্থাগুলি প্রথম রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়ায়, সে কারণেই সহায়তার স্থানীয়করণ একটি যৌক্তিক দাবি। দুর্ভাগ্যক্রমে, আমরা স্থানীয়করণ নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে খুব কম অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি। বিমল দে সরকার বলেন, যুবকদের দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার সাথে জড়িত হওয়া উচিত যাতে তারা ফিরে গিয়ে টেকসই কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারে। রোহিঙ্গা শিবিরের প্রদত্ত শিক্ষার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করা জরুরি।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রত্যাবাসন অবধি সামাজিক সংহতি আবশ্যক। আরিফুর রহমান বলেন, পাচার একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ। প্রভাবশালীসহ অনেক মানুষ রোহিঙ্গা মানুষকে পাচারের শিকার হতে নানা প্রলোভন দেখাচ্ছে। এ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।

ম্যানুয়েল মনিজ পেরেইরা বলেন, মানবিক সহায়তার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরতা টেকসই সমাধান নয়। রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে চাহিদা ভিত্তিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। বনায়নের উপর যথাসম্ভব জোর দেওয়া উচিত।

পিয়াস মুলোনজ্যা বলেন, কার্যকরভাবে রোহিঙ্গা প্রতিক্রিয়া পরিচালনার জন্য স্থানীয়-জাতীয় এনজিও এবং আইএনজিওগুলির একে অপরের সাথে সুসম্পর্ক এবং আস্থা থাকতে হবে।

সু জিন রে বলেছেন, এটি দুর্ভাগ্যজনক যে, গত দশ বছরে শরণার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশ এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য দরজা উন্মুক্ত করেছে, যা সত্যই প্রশংসিত। স্থানীয় জনগণের ত্যাগ প্রশংসনীয়, এখন আমাদের প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গা জনগণের মর্যাদা নিশ্চিত করা দরকার।

রেজাউল করিম চৌধুরী, রোহিঙ্গা প্রতিক্রিয়ার জন্য যেহেতু তহবিল হ্রাস পাচ্ছে, তাই আমাদের ন্যূনতম খরচেই সর্বাধিক পরিষেবা নিশ্চিত করার কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে। সহায়তার স্বচ্ছতা এবং সহায়তার স্থানীয়করণের পাশাপাশি আমাদের তৃতীয় দেশ প্রত্যাবাসন নিয়েই উদ্যোগ নিতে হবেএবং প্রতিবেশি দেশগুলির সমর্থন নিশ্চিত করতে কূটনৈতিক যোগাযোগ প্রয়োজন।

পাঠকের মতামত

  • উখিয়ায় অবৈধভাবে পাহাড় কাটার দায়ে ডাম্পট্রাক জব্দ
  • অনলাইন জুয়ায় অংশ নেওয়ায় ১৫ দিনের কারাদণ্ড
  • কক্সবাজারে ৩২ জন কনস্টেবল নিয়োগ, আবেগাপ্লুত নিয়োগপ্রাপ্তরা
  • চকরিয়ায় ব্যবসার বিরোধ নিয়ে ছুরিকাঘাতে আবারও যুবক নিহত
  • রোহিঙ্গা যুবকদের মাঝে সুরক্ষা বার্তা প্রচারের লক্ষ্যে ‘মুক্তি’র ফুটবল ম্যাচ আয়োজন
  • কক্সবাজারে দিনব্যাপী সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
  • কক্সবাজার সৈকতে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিলো আমেরিকান সেনা ও বিমানবাহিনী
  • রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেন নরওয়ের প্রতিনিধিদল
  • টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই ডাকাত গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি, একজন গুলিবিদ্ধ
  • চকরিয়ায় টমটমের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত
  • রোহিঙ্গা যুবকদের মাঝে সুরক্ষা বার্তা প্রচারের লক্ষ্যে 'মুক্তি'র ফুটবল ম্যাচ আয়োজন

    রোহিঙ্গা যুবকদের মাঝে সুরক্ষা বার্তা প্রচারের লক্ষ্যে ‘মুক্তি’র ফুটবল ম্যাচ আয়োজন

      নিজস্ব প্রতিবেদক : বেসরকারি সংস্থা মুক্তি কক্সবাজারের উদ্যোগে ‘অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড ইয়ুথ প্রজেক্ট’-এর আওতায় উখিয়ার ...
    কক্সবাজারে দিনব্যাপী সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

    দেশটাকে সুন্দর ভাবে সাজাতে হলে আমাদের সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে : সামছুদ্দৌজা নয়নকক্সবাজারে দিনব্যাপী সাংবাদিক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

      পলাশ বড়ুয়া:: উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও চ্যালেঞ্জ এবং ফ্যাক্ট চেকিং, স্টোরিটেলিং, প্রান্তিক ও ...
    কক্সবাজার সৈকতে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিলো আমেরিকান সেনা ও বিমানবাহিনী

    কক্সবাজার সৈকতে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিলো আমেরিকান সেনা ও বিমানবাহিনী

      নিজস্ব প্রতিবেদক,কক্সবাজার : কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে আমেরিকান সেনা ও ...