
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
কক্সবাজারের উখিয়ায় অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে চলছে বন ও পাহাড় নিধন। এতে করে পরিবেশের ভারসাম্য দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে। এসব যেন দেখার কেউ নেই। প্রতিদিন উপজেলা জুড়ে চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটার মহৌৎসব চলছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ের পর যে টুকু বনের জায়গা ও পাহাড় ছিল তাতেও চলছে প্রভাবশালীদের নিধনযজ্ঞ, বহুতল ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় হতে বেশিদিন সময় লাগবে না।
সরেজমিনে জানা গেছে, অসাধু বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে রাতদিন পাহাড় কাটছে একটি শক্তিশালী ডাম্পার মালিক সিন্ডিকেট। অবৈধ মাটি, বালিবাহী এসব অবৈধ ডাম্পার বেপরোয়া গতির কারণে প্রায় সময় সড়কে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও টনক নড়ে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের।
এভাবে চলতে থাকলে পুরো বনাঞ্চল ও পাহাড় নিধন হতে বেশিদিন লাগবে না এমনটি অভিযোগ পরিবেশবাদী সচেতন মহলের।
পৃথিবীর খুঁটি খ্যাত এসব পাহাড়সহ বনাঞ্চল ধংসের পিছনে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের দোষারূপ করছেন পরিবেশবাদী শরীফ আজাদ।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) সরেজমিনে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা, বাগানের পাহাড়, যন্দ্রুর জুম, ভুট্টুোর কাটা, ছোট খাল, বড় খাল, তুতুরবিল, কুতুপালং হলদিয়াপালং বালুচরা, খেওয়াছড়িসহ সব এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কাটার দৃশ্য কুতুপালং হাজমের রাস্তার মাথায় প্রধান সড়কের উভয় পাশে বহুতল ভবন নির্মাণের দৃশ্য দেখা গেছে দেখা গেছে।
এছাড়াও বনবিভাগ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একেরপর এক পাহাড় কর্তন, মাটি পাচার, ইজারা ব্যতিরেখে খাল থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন করছে এসব সিন্ডিকেট সদস্যরা।
রাজাপালংয়ের হরিণমারা এবং হলদিয়াপালং খেওয়াছড়ি এলাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, প্রভাবশালী অবৈধ মাটি ও বালি পাচারকারি এবং ডাম্পার মালিক সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে পুরো উখিয়া। এদের রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক ডাম্পার। এদের ব্যাপারে কেউ মুখ খুললে প্রাণে মেরে ফেলবে।
হরিণমারা এলাকায় রফিক নামে একজন জানিয়েছেন পাহাড়ে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাহাড়ী মাটিকে শরবত বানিয়ে কৃত্রিম ভাবে বালি তৈরি করছে সিন্ডিকেট সদস্যরা।
এসব সিন্ডিকেটের সদস্যদের একজন রাজাপালং হরিণমারা এলাকার হেলাল উদ্দিন। ওই দিন সাংবাদিকদের একটি অনুসন্ধানী টীমকে দেখে হেলালের মাটিবর্তি একটি ডাম্পার গাড়ী পালাতে গিয়ে উল্টে যায়।
স্থানীয়দের তথ্যমতে, এসব পাহাড় খেকোদের রয়েছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এদের মধ্যে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণ মারা ও বাগানের পাহাড় এলাকার মোহাম্মদ কোম্পানি, বদিউল আলম, গফুর কোম্পানি, জহির কোম্পানী, দুছুড়ি এলাকার বিকাশ মাহমুদুল হক, ছৈয়দ করিম, মাস্টার কবির আহমেদ, বাগানের পাহাড় এলাকার বদু প্রকাশ ফিটিং বদু, শাহ আলম, খালখাছা পাড়ার মোঃ মুস্তাফিজ, মুফিজ, জাদিমোরা এলাকার সাইফুল কবির, আলিমুরার জামাল, হিজলিয়া মাজর পাড়া এলাকার মৌলভী রেজা, হলদিয়াপালং ৫নং ওয়ার্ডের মোকতার মিয়ার ছেলে মকছুদুল করিম।
তাদের সহযোগি হিসেবে রয়েছে হিজলিয়ার আব্দুল্লাহ, হেলাল, রশিদ, উত্তর পুকুরিয়ার, প্রফেসর বেলাল, তুতুরবিলের সালাহ উদ্দিন, কুতুপালং এলাকার মংচানু বড়ুয়া। এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৫ শতাধিক অবৈধ ডাম্পার।
তাদের মধ্যে বনবিভাগ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করার দায়িত্বে সিন্ডিকেটের কয়েকজন লিয়াজো সদস্য। এলাকা ভিত্তিক যারা দায়িত্বে আছেন তাদের মধ্যে তুতুরবিল বনবিভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন মোঃ নুরু ও মোঃ জামাল উদ্দিন, বাগানের পাহাড় নিয়ন্ত্রণ করেন, বদু ও মাহম্মদ, হরিণ মারা এলাকার নিয়ন্ত্রণ করেন গফুর কোম্পানি ও আক্তার। প্রশাসনের দিকটা দেখেন মৌলভী রেজা।
এ ব্যাপারে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী মো: শফিউল আলম বলেন, আমাদের লোকবল সংকট। আমরা খবর পেলেই অভিযান পরিচালনা করছি। আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি সত্য নয়। উখিয়ায় ৮৫% ঘরবাড়ি সরকারি বনভুমিতে আমাদের করার কিছু নাই।
এ বিষয়ে জানতে সহকারী কমিশনার (ভুমি) তাজ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অফিসে গিয়ে চা পানের আমন্ত্রন জানিয়ে ফোন কেটে দেন।
পাঠকের মতামত