
আমার মা ” শোভা”। পিতা সত্য। তাই পিতার জীবন জুড়ে শোভা। আজকের গল্পের নামটা “সত্য শোভা ”
যারা শিক্ষার সনদ নিয়েই শিক্ষিত তাদের জন্য এ গল্প নয়। গল্পটি শুধুই মা ভক্ত মানুষদের জন্য। যারা মা কে ভালবাসেন। যারা মা কে সম্মান করেন। যারা মায়ের মুল্য বোঝেন।
🌺আমার জন্ম আশি দশকে। শ্রাবন মাসে । মাতামুহুরি নদীর সাথে রয়েছে মায়ের সখ্যতা আর বাবার বন্ধুত্ব। তাই সেটা আমার মায়ের মতন। সারাদিন মুষলধারে বৃস্টি। এর আগে মা ছয়জন সন্তান প্রসব করেছেন। তাই বাবার কাছে এটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু মায়ের কাছে নিজের জীবন নয় বরং সন্তানের জীবন।
সে দিন শনিবার। সারাদিন বিলে ঝিলে কাজ করে মা ঘুমালো। আমি মায়ের শরীরে যন্ত্রণা শুরু করে দিলাম। সারারাত কি যন্ত্রণা দিলাম। হায়রে মা! সহ্য করলেন। ভোর রাতে মায়ের যন্ত্রণায় খোদার আরস কেপে উটলো। মা কে রক্তাক্ত করে আমি বেরিয়ে আসলাম দুনিয়ায়। কাঁদলাম । কিন্তু মা হাসলেন। নাভি কাটলো অভিজ্ঞ ধাত্রী। তারপর মরিচের তরকারি দিয়ে ভাত খেলো মা।
গ্যালনে গ্যালনে রক্ত গিয়ে মা দুর্বল। বুঝবে কে। দুর্গম এই পাহাড়ের ভিতর। বিকাল ৪ টায় মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলেন। আশে পাশে নেই ঘরবাড়ি। নেই অভিজ্ঞ ডাক্তার। কেউ বলে মাথায় রক্ত উঠেছে। কেউ বলে অপদেবতা ধরেছে। বাবা সেই মুহুর্তে অসহায়। হয় নি হাসপাতাল। সহায় সম্বল নেই। অর্থ কস্ট। ভাত জুটে তো তরকারি নেই।
খালে বিলে পানি। বাবা বুদ্ধি করে ডলু বাঁশ বুকে জড়িয়ে নদী পাড়ে এক কিলোমিটার উপর থেকে সাতার দিলেন পাহাড়ি ঢলে উপচে পড়া খরস্রোতা মাতামুহুরি। কি যে স্রোত। বাবার ভরসা রোহিনী ডাক্তার। আসলে তিনি ছিলেন কবিরাজ। মেরাখোলা হিন্দু পাড়ায় ভর সন্ধ্যায় বাবা পৌছলেন। রোহিনী ডাক্তারকে নমস্কার জানাতেই বললেন মাস্টার কি সমস্যা। বাবা বললেন ” আপনার বোন কে বাঁচান”।
রোহিনী ডাক্তার বিস্তারিত শুনলেন। তার পর বললেন, কবুতরের রক্ত কেটে মাথায় দেন। মাথায় রক্ত উঠেছে। বাবা এক জোড়া কবুতর জোগাড় করলেন। তাও বাকীতে। সেই কবুতর পিঠে বেধে আবার সাতার দিলেন মাতামুহুরি। এসেই মায়ের মাথায় কবুতরের রক্ত দিলেন। মায়ের জ্ঞান ফিরলো। আমিও আমার মা কে ফিরে পেলাম।
সন্তান জন্মদিতে গিয়ে মায়েরা মরতে মরতে বেঁচে যায়। আর আমরা সেই মা কে অবজ্ঞা, অশ্রদ্ধা করি। যার মা নেই সে বুঝে মা কি। মা এর চেয়ে পৃথিবীতে মধুর শব্দ দ্বিতীয়টি আর নেই। মা পৃথিবী সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ এক দান। শ্রেষ্ঠ উপহার।
‘বিশ্ব মা দিবস’ এ সকল মায়ের প্রতি বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধা। গায়ের চামড়া দিয়েও মা বাবার ঋন শোধ করা যায় না।
লেখক; নিবারণ বড়ুয়া।
anthronibu@yahoo.com
01728 959076
পাঠকের মতামত