
# শাহ রেজাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে এমনটি দাবী অনেকের।
সিএসবি২৪ রিপোর্ট:
ওরা ১৩ জনের অবৈধ মাটি ও বালি পাচারকারি এবং ডাম্পার মালিক সিন্ডিকেটের জিম্মিদশায় পড়েছে পুরো উখিয়াবাসী। ওদের রয়েছে শতাধিক ডাম্পার। বনবিভাগ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একেরপর এক পাহাড় কর্তন, মাটি পাচার, ইজারা ব্যতিরেখে খাল থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে সিন্ডিকেট সদস্যরা।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের তুতুরবিল ও হরিণমারা ঘুরে বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলে এমন তথ্য উঠে আসে৷
এমন কি অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে উপজেলা পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর শাহ রেজাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘাতক ডাম্পার গাড়ীটির মালিক হরিণমারা এলাকার শমশের আলমের ছেলে সালাহ উদ্দিন। দূর্ঘটনাস্থল ঘুরে এসে কেউ কেউ এটা সম্পূর্ণ প্রি প্ল্যান মার্ডার বলে দাবী করছে।
শাহী কামরান নামে একজন বলেন, উখিয়ামুখী ডাম্পারটির অবস্থান পূর্ব পাশে হওয়ার কথা। অথচ যেভাবে স্পীডে পশ্চিম পাশে ব্রিজের সাথে ধাক্কা দিছে এতে স্পষ্ট এটা পরিকল্পিত ঘটনা। যার নমুনা ভাঙ্গা ব্রিজ, রাস্তায় চাকার দাগসহ বেশ কিছু ক্লু রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে একদল সাংবাদিক সালাহ উদ্দিনের বাড়িতে গেলেও তার হদিস মেলেনি। একাধিকবার ফোনে চেষ্টা করেও রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে ১৩ জনের সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে যাদের নাম একাধিক সূত্রে আসে তারা হলো-রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা ও বাগানের পাহাড় এলাকার মাহম্মদ কোম্পানি, সালাহ উদ্দিন, গফুর কোম্পানি, বিকাশ মাহমুদুল হক, ছৈয়দ করিম, মাস্টার কবির আহমেদ, বদু প্রকাশ ফিটিং বদু, শাহ আলম, খালখাছা পাড়ার মোঃ মুস্তাফিজ, মুফিজ, জাদিমোরা এলাকার সাইফুল কবির, আলিমুরার জামাল, হিজলিয়া মাঝের পাড়া এলাকার হাফেজ রেজা।
এছাড়াও তাদের সহযোগী হিসেবে রয়েছে হিজলিয়ার আব্দুল্লাহ, হেলাল, রশিদ, উত্তর পুকুরিয়ার, প্রফেসর বেলাল, তুতুরবিলের সালাহ উদ্দিন, রত্নাপালং এলাকার তাসহীদ চৌধুরী, পাইন্যাশিয়ার জয়নাল উদ্দীন, কুতুপালং এলাকার মংচানু বড়ুয়া। এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শতাধিক অবৈধ ডাম্পার (মিনি ট্রাক)।
এদের মধ্যে বনবিভাগ ও প্রশাসন ম্যানেজ করার জন্য রয়েছে সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য।
তাদের একজন হাফেজ রেজা। কথা হয় তার সাথে। সে নিজের কোন ডাম্পার নেই বলে জানালেও খোদ তার বোন মোমেনা জানায় হাফেজ রেজার দুটি ডাম্পার আছে যা বৈধ কাগজপত্র অাছে।
এদিকে গত বুধবার হাফেজ রেজার একটি গাড়ী আটক হলে মেম্বার শাহজাহানসহ বিট অফিসারকে ম্যানেজ করে গাড়ীটি ছাড়িয়ে নেয় বলে সুত্রে জানা যায়।
এছাড়াও এলাকা ভিত্তিক দায়িত্বে আছেন তুতুরবিলের মোঃ নুরু ও মোঃ জামাল উদ্দিন, বাগানের পাহাড় নিয়ন্ত্রণ করেন, বদু ও মাহম্মদ, হরিণ মারা এলাকার নিয়ন্ত্রণ করেন গফুর কোম্পানি ও আক্তার।
এর আগে বুধবার হিজলিয়া (পালং গার্ডেন) এলাকায় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বেপরোয়া ডাম্পারের ধাক্কায় নিহত হন উখিয়া উপজেলা পরিষদের কম্পিউটার অপারেটর মো. শাহ রেজা।
এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবৈধ ডাম্পার মালিক ও মাটি ও বালি পাচারকারি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখা গেছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
গণমাধ্যমকর্মী জসিম আজাদ তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন ১৩ জনের অবৈধ মাটি ও বালি পাচারকারি এবং ডাম্পার মালিক সিন্ডিকেটের তথ্য অনুসন্ধানে উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাব এর সংবাদকর্মীরা এখন মাঠে। সাদা পোষাকে তোলে নেওয়া ও ডাম্পারের চাকায় পিষ্ট করার হুমকিতে কাজ হবে মশাই।
উখিয়া অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পলাশ বড়ুয়া লিখেছেন, উখিয়ায় অবৈধ ডাম্পার মালিক হাফেজ রেজার নেতৃত্বে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট এবং থানা ম্যানেজ হয় বলে সূত্রে জানা গেছে। যার ফলে প্রতিদিন প্রাণহানিতেও নিয়ন্ত্রনহীন ডাম্পার।
এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ডাম্পার গাড়ী জব্দ এবং জরিমানা আদায় করা হয়। হরিণমারা ও তুতুরবিল এলাকার অবৈধ ডাম্পার মালিক ও মাটি পাচারকারি এবং বালি উত্তোলনকারিদের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য-উপাত্ত নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
পাঠকের মতামত