
বিশেষ প্রতিবেদক ॥
কক্সবাজারের উখিয়ায় এক অডিও বার্তায় মুখোশধারী ইয়াবাকারবারীদের গোমর ফাঁস হয়েছে। এদের অনেকে কয়েক বছরের ব্যবধানে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছে। আবার কেউ কেউ সময়ে-অসময়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জামিনে বেরিয়ে এলেও নিয়ন্ত্রণটা ঠিকই তাদের হাতে থেকে যাচ্ছে। ফলে মাদক গডফাদাররা এখনো বহাল তবিয়তে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযান না হওয়ায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে চিহ্নিত মাদক কারবারিরা।
এদিকে গতকাল গণমাধ্যমকর্মী পলাশ বড়ুয়া তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে ‘ফার্মেসী ব্যবসার আড়ালে মুখোশধারী ইয়াবা সাম্রাজ্যের সংশ্লিষ্ট অধিপতিদের এক অডিও বার্তা ফাঁস’ বিষয়ক একটি স্ট্যাটাসে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
মাদকের বিরুদ্ধে শফিকুল ইসলাম নামে একজন কমেন্টস করেছেন, ট্রাকের হেলপারও আজ ৫টি ট্রাকের মালিক হয়ে গেছে। এসব খতিয়ে দেখা দরকার।
মেহের আলী নামে একজন লিখেছেন ‘শুধু ফার্মেসি ব্যবসা নয় প্রতিটি গ্রামের চিহ্নিত বাবা ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং মুখোশ উন্মোচনের অনুরোধ রইল।’
জে.বি সরকার নামে একজন বলেছেন, ‘প্রজন্মকে রক্ষার তাগিদে সামাজিক অবক্ষয় রোধে সকলকে ইয়াবা কারবারীদের বিরুদ্ধে রুঁখে দাড়ানোর আহবান জানান’।
আবার কেউ কেউ বলছে তাদের আয়ের উৎস কি ? যথা নিয়মে আয়কর দিচ্ছে কিনা ? নানা প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মনে।
৩৬ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের এক অডিও বার্তায় জানা গেছে, ডা: জামাল উদ্দিন নামে এক পল্লী চিকিৎসক তার মামা শাহ আলমের সাথে কয়েক বৎসর পূর্বে শেয়ারে একটি ট্রাকের মালিক হয়। এরপর থেকে নির্বিঘেœ তাদের ইয়াবা বহন করে কয়েক বৎসরের ব্যবধানে ২টি টিআরএইচ (মাইক্রোবাস) ও ১টি ট্রাক গাড়ী, কক্সবাজার শহরে ২টি জায়গা, বিশাল রাবার প্লটসহ কোটবাজারের পার্শ্ববর্তী কয়েকটি জমির মালিক বনে গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে জামাল উদ্দিনের ব্যক্তিগত (০১৮১৭৬০৬৫৬২) এই নাম্বারে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অডিও বার্তায় আরো জানা গেছে কোটবাজারের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী নুরুল আলম আলম কোম্পানীর ভাগ্নে থাইংখালী এলাকার কুরবান আলীর কিস্তিতে নেয়া গাড়ীতে করে বড় ইয়াবার চালান নিয়ে টেকনাফ থেকে কোটবাজার পৌঁছালে তার মামার সাথে যোগসাজসে বেশিরভাগ ইয়াবা নিজেরা আত্নসাৎ করে সামান্য কিছু দিয়ে সোর্সের মাধ্যমে প্রশাসনের হাতে গাড়ী আটক করিয়ে দেয়। পরে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে গাড়ীটি নিয়ে আসে বলে জানা যায়। আবার কখনো কখনো ইয়াবার পুরো চালান ঢাকা পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজারে ফেন্সিডেল নিয়ে আসে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
এভাবে ৫টি মিনি ট্রাক, ১টি ডাম্পার গাড়ী ও প্রায় কোটি টাকার মালামালসহ কোটবাজার দক্ষিণ স্টেশনে হার্ডওয়্যার দোকানের মালিক বনে গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, আজকের নুরুল আলম কোম্পানী গত কয়েক বৎসর পূর্বেও গাড়ীর হেলপার ছিল। এতো অল্প সময়ে তার অর্থনৈতিক উন্নতি দেখে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে নুরুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে একটি দোকান পরিচালনা করছে। আগে গাড়ীর মালিক ছিল। এখন নেই। তার ভাগিনা চক্রান্তের শিকার হয়ে জেল কাটছে। শ্যালক নুরুল আমিন ইয়াবাসহ আটক হলেও তা অস্বীকার করেন। তিনি কোন ভাবে ইয়াবাকারবারের সাথে সংশ্লিষ্ট নেই বলে দাবী করেন।
জানা গেছে, ডা: জামাল উদ্দিন ও নুরুল আলম সিন্ডিকেটের কেউ আইনী জটিলতায় পড়লে নুরুল আলম নিজেকে শ্রমিক নেতা পরিচয়ে সহযোগিতা করে থাকে। সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে যাদের নাম উঠে এসেছে রত্নাপালং তেলীপাড়া এলাকার ড্রাইভার শাহ আলম, বেলাল উদ্দিনের ছেলে ফুরকান উদ্দিন, নুরুল আলমের শ্যালক নুরুল আমিন, ভগ্নিপতি শাহ আলম প্রকাশ মুইচ্ছা শাহ আলম ও তার ছেলে মানিক (কারান্তরীণ), শামশু খলিবার ছেলে বাহাদুর ড্রাইভার, চাকবৈঠা করইবনিয়ার আলী আহমদের ছেলে নুরুল আমিন, চাকৈবঠা গ্রামের আবদু ছালামের ছেলে হারুন, আবুল হোসেনের ছেলে সাদ্দাম, ছৈয়দ কাশেম সিকদারের ছেলে জাহাঙ্গীর, মোজাহের মিয়ার ছেলে সিরাজ, আজিজুর রহমানের ছেলে সিরাজ, আজিজুর রহমানের ছেলে মঞ্জুর, ছৈয়দ আলমের ছেলে মাহমুদুল হক, রসিদ আহমদের ছেলে ইউনুছ, আমির হামজা ফকিরের ছেলে আবদুল কাদের, আবুল খায়েরের ছেলে বদিউল আলম।
এ প্রসঙ্গে ‘মাদককে না বলুন’ এর আহবায়ক ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য অধ্যাপক আদিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মূলত: কড়ইবনিয়া এলাকা দিয়ে দেশে ইয়াবা ডুকছে। তবে রতœাপালং তেলীপাড়া এলাকায় ৫জন চিহ্নিত ইয়াবাকারবারী রয়েছে।
এদিকে অডিও বার্তায় ডা: জামাল উদ্দিন ও নুরুল আলম কোম্পানী সংশ্লিষ্টতার তথ্য থাকলেও আদিল চৌধুরী বলেন ভিন্ন কথা। এই দুইজনকে স্থানীয় ইউ.পি নির্বাচন ইস্যূকে কেন্দ্র করে ইয়াবা কারবারী বানানোর অপচেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, র্যাব ও পুলিশের সাথে সহযোগিতাকারী নামধারী কতিপয় সোর্স নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিরোধকে কেন্দ্র করে ইয়াবার চালান নিয়ে নিরহ ব্যক্তিদের আটক ও নাম দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে থানা পুলিশ ও র্যাব সদস্যদেরকে সতর্কতা অবলম্বনের আহবান জানিয়েছেন সমাজের দায়িত্বশীল মহল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, করোনা দূর্যোগেও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মুখোশধারী হউক বা চিহ্নিত যে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঠকের মতামত