
এম. ফজলুল করিম, প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, উখিয়া কলেজ
উখিয়া কলেজের ইতিকথা পর্ব ১১ কলেজের জমি সংক্রান্ত বিষয় সমূহ বলতে গিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে গিয়েছিলাম। অর্থাৎ বর্তমানে যেখানে মসজিদ, নূরানী মাদ্রাসা ও হেফজ খানা উত্তর পাশের্^ ৮০ শতক পরিমাণ যে বনভূমিটি রয়েছে সেটি ১৯৯১ সন থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত উখিয়া কলেজের দখলে ছিল।
২০০০ সালে সামাজিক বনায়নের জন্য বনভূমি বরাদ্দ দিচ্ছেন। সেই সময় কলেজের একজন স্টাফ প্রয়াত আবদুল হাকিম অথবা আমার নিজের নামে সাড়ে ১২কানি বনভূমি বরাদ্দ দেয়ার জন্য বলে ছিলাম। হেডম্যান আনু মিয়া আমার নামে বরাদ্দ দেয়ার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু বিধি বাম প্রয়াত নুরুল ইসলাম চৌধুরী (ঠান্ডা মিয়া), আলী চাঁন মেম্বার, মোহাম্মদ হোছন খান মিলে আমার স্টাফ কিংবা আমার নামে বরাদ্দ না দিয়ে আমার একটা আজন্ম শত্রু আলী চাঁন মেম্বার কে বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কলেজের সাথে শত্রুতা করার জন্য যাতে সুবিধা হয়।
বিষয়টি উখিয়ার রেঞ্জার ও বিট অফিসারকে বুঝালে উনারা দুজন এসে মসজিদ, মাদ্রাসা ও কলেজের জমি বাদ দিয়ে আলী চাঁন মেম্বারকে সাড়ে ১২কানি জমি বরাদ্দ দিয়েছেন। ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত উখিয়া কলেজের আওতাধীন ছিল।
২০১৪ সালে এসে যুবলীগের মুজিবুল হক আজাদ, রুহুল আমিন মেম্বারের ছেলে মাসুদ আমিন শাকিলসহ আরো কয়েকজন এসে ৮০ শতক জমি দখল করে ফেলেছেন এবং কোন রকমে ইট দিয়ে ঘেরা দিয়েছেন। দখল করার সময় আমি কিছু বলতে চাইলে মুজিব বলেছেন বহুত কিছু করেছেন, আর করতে দেব না, তাঁকে নাকি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী পাঠিয়েছেন দখল করার জন্য। বিষয়টি পরের দিন আলহাজ¦ আবদুর রহমান বদি, এম.পি মহোদয়কে বললাম। এম.পি মহোদয় আমাকে বললেন আপনার কাগজ আছে কিনা ? আমি বলাম তাদেরও তো কাগজ নাই। কারণ ২০০০ সালে বরাদ্দ দেয়ার সময় মসজিদ মাদ্রাসা ও কলেজের দখলকৃত বনভূমি ২ একরের ছেড়ে দিয়ে একটি ড্রেন করে দিয়ে ডিমার কেসন করে দিয়েছিলেন রেঞ্জ অফিসার ধীরেন্দ্র নাথ অধিকারী ও বিট অফিসার আবদুর রব সাহেব। যাতে মসজিদ, মাদ্রাসা ও কলেজের সাথে যেন কোন বিরোধ না হয়। সেজন্য ড্রেন দিয়ে ডিমার কেশন করে দিয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে এসে মুজিব ও শাকিল কলেজের দখলীয় ভূমিটুকু দখল করে নিল।
আলহাজ¦ আবদুর রহমান বদি, এম.পি মহোদয় নাকি মুজিবকে বলেছেন ২ কানি দখল করছ কেন? ৬ (ছয়) কানি কেন দখল কর নাই। এ রকম আওঁয়াজ পাওয়াতে বিষয়টি নিয়ে আর কথা বলিনি। কলেজের শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারী ফরিদুল আলম চৌধুরী ও অন্যান্য শিক্ষকের সাথেও আলাপ করেছিলাম। তারাও আমাকে নিষেধ করেছেন। যেখানে এমপি সাহেব মুজিবকে প্রশ্রয় দিয়েছেন সেখানে আর কথা বলে লাভ নেই। আওয়ামীলীগের উপজেলা সেক্রেটারীও নাকি মুজিব কে দখল করার জন্য পাঠিয়েছিল। সেখানে বেশী কথা বলে লাভ নেই।
আমার প্রিয় মানুষ হামিদুল হক সাহেব তো একটি কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন তখন, তিনি অন্য একটি কলেজের ভূমি দখল করার জন্য সন্ত্রাসীদেরকে সুযোগ করে দিয়েছেন? তাহলে কি বুঝতে পারি? আমি অন্য মানুষ দিয়ে চৌধুরীকে ফোন করে খবর নিয়েছি, তিনি তাকে বলেছেন ঐ বনভূমির জন্য যা করতে হয় করব, যেখানে যেতে হয় যাব। আমি ৩ মাস পূর্বে বিষয়টি হামিদুল হক চৌধুরীর সাথে আলাপ করেছিলাম। উনি বিষয়টি স্বীকার করেননি। ১৯৯২ সনে বাবু বিধু ভূষন বড়–য়া উখিয়া কলেজের পক্ষে ৩.২০ একর জমি দান পত্র করে দিয়েছেন।
২০১০ সালে (আমি তখন সাস্পেন্ড অবস্থায় ছিলাম) আব্দুল হক সাহেবকে বড়–য়া সমাজের লোকেরা আতাত করে তাঁদের ধর্মীয় সভা করার জন্য ৮০ শতক ভূমিতে অনুমতি নিয়েছিল। তারা তাদের বিশেষ অতিথি হিসেবে তাঁদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত করেছিল। তাঁদের অনুষ্ঠান স্থলে আমি যে ৪/৫টি সিমেন্টের খুঁটি পুতে দিয়েছিলাম ঐ গুলি সরিয়ে ফেলেছে। সভা শেষ করে ঐ খুটি গুলি আর পুতে দেয়নি। আস্তে আস্তে বাবু বিধু ভূষণ বড়ুয়ার বড় ছেলে সতিন্দ্র বড়ুয়া দখল করে নিয়েছে। যাকে কলেজে চাকুরী দিয়েছি মনিন্দ্র বড়ুয়াকে সেও তাঁকে বড় ভাইয়ের সাথে মিলে গেছে। কলেজের স্বার্থ দেখেনি। বিষয়টি আমি আলহাজ¦ আবদুর রহমান বদি মহোদয়কে বলে ছিলাম। উনি আমাকে জবাব দিলেন- তাদের আরো টাকা দেয়া দরকার আমি বললাম শাহজাহান চৌধুরী, এমপি একটি টাকাও দেয়নি। আপনি কিছু টাকা দিলেও দিতে পারেন। কলেজের দানপত্র করা জমি যে কোন সময় সেটা তাঁদের থেকে কলেজের পক্ষে নিয়ে আসতে পারে। যেহেতু বিষয়টি কলেজের সম্পতি, সে কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো দরকার বলে জানিয়েছিলাম। উনি নেগেটিভ কথা বলাতে আমি আর বেশী আগাইনি দখলমুক্ত করার জন্য।
বিষয়টি পুলিশের সাথেও অর্থাৎ ওসি সাহেবের সাথেও আলাপ করেছিলাম। ওসি আব্দুল হামিদ বলেছিল আপনাদের জায়গা আপনারা নিয়ে নেন। কাগজ পত্র ঠিক থাকলে নিয়ে নিতে অসুবিধে কোথায়। এমপি সাহেব একটু নেগেটিভ কথা বলাতে আমি প্রচেষ্টা থেকে সরে এসেছি। অধ্যক্ষ হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। বাকী বিষয় সমূহ কলেজের গভর্ণিং বডির সভাপতি মহোদয় বুঝবেন। গভর্নিং বডির সভাপতি মহোদয়ের গ্রিন সিগনাল পেলে ১ দিনের মধ্যে কলেজের পক্ষে দখলে নিয়ে আসতাম। এখন বিষয়টি কলেজ গভর্ণিং সভাপতি বুঝবেন।
শৈলের ঢেবা অঞ্চলে কলেজ করার পক্ষে ছিলাম আমি, বিএনপির সাবেক সভাপতি বাদশাহ মিয়া চৌধুরী (কুতুপালং), জালাল আহমদ চৌধুরী, ছব্বির মেম্বারের ছোট ভাই, শাহজাহান চৌধুরী, এমপি ও এড. শাহ জালাল চৌধুরী। বাজে লোকেরা সমালোনা করে বলতো শুকর থাকার এলাকাতে কলেজ করতেছে, কলেজ হবে নাকি? ভালো ভালো লোকেরা কথা গুলি বলেছেন। বিয়ষটি সত্য, বর্তমান যেস্থানে বিজ্ঞান ভবন অবস্থিত, সে স্থানে বাঘ স্বীকারের জন্য ‘কল বসাই ছিল গরু দিয়ে’।
আসলেই এক সময়ের বাঘ-হাতি থাকার এরিয়া ১৯৭৮ সালে টিএন্ডটি অফিস হওয়াতে এলাকাটি জানুয়ার মুক্ত হয়েছে। আমি নিজেও দেখেছি বিকেলে মদখোর ব্যক্তিরা বর্তমান প্রশাসনিক ভবনের স্থলে বসে বসে মদ টানতো। আমার নিজের কাছেও বিষয়গুলো রূপকথার মতো মনে হচ্ছে। রাত্রে কলেজ ফিল্ড স্থানে সুন্দরী পরীর ঝাক থাকতো সব সময়। কেহ আগুনের কুন্ত দেখতো, কেহ গরু মহিষের ঝাক দেখত, জীন পরীদের স্থান নাকি বর্তমান উখিয়া কলেজের মাঠ। বিল্ডিং যেখানে আছে, সেখানে দরগাহবিল ও টাইপালং নিবাসীদের গরু মহিষের বিচরণ ভূমি ছিল। ১৯৩৫ সনে বাবু বিধু ভূষণ বড়ুয়া (দাদা) ৮০টাকা দিয়ে ৮০ শতক জমি কিনেছিল প্রথমে, পরের গুলো হয়ত আর একটু বেশী দিয়ে কিনেছে।
চলবে…
পাঠকের মতামত