
আমাদের সময়: অপসাংবাদিকতা রোধে সারা দেশের সব সাংবাদিককে অনলাইন ডেটাবেসে যুক্ত করতে নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল। গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে ভুয়া সাংবাদিকের দৌরাত্ম্য কমবে; প্রকৃত সাংবাদিকরা কাউন্সিলের কার্ড পাবেন এবং এর ভিত্তিতে তারা বিশেষ মর্যাদা ও সুবিধা ভোগ করবেন।
সূত্রমতে, গত ৮ জানুয়ারি প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালার চূড়ান্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শিগগিরই সাংবাদিকদের ডেটাবেস তৈরির কাজ শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক আমাদের সময়কে বলেন, সাংবাদিকতার মতো এত বড় একটি খাতে এতদিন সাংবাদিকদের কোনো ডেটাবেস ছিল না। যে সে সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণা করে মহান এ পেশাটিকে কলঙ্কিত করছে। এসব বন্ধে প্রেস কাউন্সিলের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
এ ছাড়া ডেটাবেস থাকলে দেশে কি পরিমাণ সাংবাদিক আছেন, তারা কে, কোথায় কাজ করেন ইত্যাদি বিষয়ও সহজেই জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, প্রেস কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে সাংবাদিকদের তালিকা থাকলে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কেউ আর প্রতারণা করতে পারবে না।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আইনের ১১ ধারা অনুযায়ী ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিক অনলাইন ডেটাবেস’ নামে এ নীতিমালা হচ্ছে। ডেটাবেসে অন্তর্ভুক্তদের ‘প্রেস কাউন্সিল কার্ড’ অর্থাৎ বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল কর্তৃক পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। এক বছর মেয়াদি এ পরিচয়পত্র হবে নবায়নযোগ্য। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন অর্থাৎ পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো সাংবাদিক মামলার শিকার হলে তিনি প্রেস কাউন্সিলে আইনি সহায়তাও চাইতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তিনি যদি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের কারণে মামলা বা হয়রানির শিকার হন, তা হলে তাকে আইনি সহায়তা দেবে প্রেস কাউন্সিল। এ ছাড়া প্রেস কাউন্সিলের কার্ডধারী সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার সুযোগ পাবেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, নিবন্ধিত সাংবাদিক সংগঠন, সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক বা প্রেসক্লাব, পৌরসভার মেয়র বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রত্যয়নকৃতদের ডেটাবেসে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করার পর প্রকৃত সাংবাদিকদের তথ্য বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে। এ তালিকা প্রতি তিন মাসে একবার হালনাগাদ করা হবে।
কোনো সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করলে নির্দিষ্ট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার নাম তালিকা থেকে বাতিল করা হবে। প্রেস কাউন্সিলের মামলায় বা দেশের যে কোনো আদালতে ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হলেও তার নাম তালিকা থেকে বাতিল করা হবে।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, দেশব্যাপী সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নানা সময় প্রতারণা ও চাঁদাবাজির খবর আমরা শুনি। মাঠ প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা আমাদের জানিয়েছেন, তারা ‘তথাকথিত’ সাংবাদিকদের হুমকি-ধমকিতে সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন না। তারা ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা-পয়সাও দাবি করেন। আমরা মনে করি সারাদেশের সাংবাদিকদের একটি ডেটাবেস থাকা দরকার, যাতে এমন অপকর্ম না হয়। তিনি বলেন, শিগগিরই নীতিমালা অনুযায়ী ডেটাবেস তৈরির কাজ শুরু হবে।
পাঠকের মতামত