সিএসবি ২৪ ডটকম ॥
১৯৭৮ সালে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ থামেনি এখনও। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে এই দেশে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো কথা বলা হলেও বর্তমানে এ দেশের অভ্যান্তরে রয়েছে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা। আর এসব রোহিঙ্গাদের নিয়েই সংকটে রয়েছে সরকার।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে আজ (২০ জুন) পালিত হচ্ছে বিশ্ব শরণার্থী দিবস। জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৬ কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে রয়েছে। এটি বিশ্বের ইতিহাসে শরণার্থী সংখ্যার সর্বোচ্চ রেকর্ড। মূলত যুদ্ধ, জাতিগত সন্ত্রাসই সাম্প্রতিক সময়ে শরণার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ। অবশ্য, কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি শুধু প্রতিবছর রোহিঙ্গা দিবস পালন নয়, তারা ফিরতে চান নিজ দেশে। তারা এই দেশের বোঝা হয়ে থাকতে চান না।
যুগ যুগ ধরে নানা প্রচেষ্টা করেও বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মিয়ানমারে ফেরার সম্ভাবনা গিয়ে ঠেকেছে শুন্যের কোটায়। অন্যদিকে সে দেশে জনসংখ্যা জরিপে রোহিঙ্গাদের বাঙালি হিসেবে অর্ন্তভূক্তি করার বিষটি কোন ভাবে মেনে নিতে পারছে না বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গারা। সবমিলিয়ে এদের ফেরাতে গিয়েও নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এসব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক একটি চক্রের কারণে বার বার বাঁধার সম্মুখিন হয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয় বলছে, কক্সবাজারে বসবাসরত অনিয়ন্ত্রিত রোহিঙ্গা বসবাস ও নানা অবৈধ কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব। ফলে এসব রোহিঙ্গাদের কারণে এক সময় বাংলাদেশকে এর মাশুল দিতে হবে। একইভাবে কক্সবাজারে স্থানীয়রাও চায় কুটনৈতিকভাবে রোহিঙ্গাদের একটি স্থায়ী সমাধান। তা নাহলে কক্সবাজারের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মো. ইউনুচ আরমান, আবদুর রহমান মাঝি, সুফিয়া বেগম টেকনাফ লেদা ক্যাম্পের দুদুমিয়া ও নয়াপাড়া ক্যাম্পের শফিউল্লাহ সহ সচেতন অনেক রোহিঙ্গারা বলেছেন, শুধু, শরণার্থী দিবস পালন করলেই হবে না। তার চান একটি স্থায়ী সমাধান। যাতে করে একটি সম্মানজনক পরিস্থিতি তৈরী করা গেলে নিজ দেশে ফিরে যেতে। তারা আর বাংলাদেশে বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। শুধু তারা নয়, কক্সবাজারের বসবাসরত অধিকাংশ রোহিঙ্গা স্বদেশে ফিরতে আগ্রহী। তার জন্য চায়, আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার চাপ প্রয়োগ করে বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটি তৈরী করতে হবে।
স্থানীয় বাংলাদেশীরাও চান, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়ে এই দেশকে একটি আন্তর্জাতিক চক্রের হাত থেকে রক্ষা করতে। কারণ ওই চক্রটি রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ ঝিইয়ে রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে কুতুপালং বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কিছু সংগঠন তাদের নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ তাদের সুযোগ-সুবিধার কারণে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করছে।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যবাসন কমিটি সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন. সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়াতেই আটকে আছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবন। দীর্ঘ সময় ধরে নানা কারণে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরার বিষয়টি ঝুলে আছে।
আর্ন্তজাতিক অভিবাসন সংস্থার ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার তারেক মাহমুদ বলেন, ‘বিশ^ শরণার্থী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের সকল সংস্থা কেন্দ্রীয় ও ক্যাম্প পর্যায়ে নানা কর্মসূচী পালন হবে। তবে ‘আইওএম’ যতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে থাকবে, ততদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবে এবং তাদের সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাবে’।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, বর্তমানে রোহিঙ্গাদের বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিকভাবে কুটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। আমাদের যে ঐতিহাসিক ভিত্তি, ঐতিহাসিক সম্পর্ক সেসব বিষয়গুলো নিয়ে মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, ‘বিশ্ব শরণার্থী দিবস আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। কারণ, আমাদের দেশে ১১ লাখের বেশী রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এটি আমাদের দেশের জন্য একটি বিশাল বোঝা হিসাবে রয়েছে। এটি আমাদের জন্য পাথরের মত সমস্যা হয়ে আছে। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছি না। আমরা চাই যে বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সমস্যার সমাধান হউক। তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন মিয়ানমারের উপর বলেও মন্তব্য করেন।
পাঠকের মতামত