মোশতাক আহমেদ |
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের টানা হরতাল-অবরোধের কারণে শুক্র ও শনিবার পরীক্ষা নিয়ে এসএসসি পরীক্ষা শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসা হলেও আসন্ন এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস কোর্সের পরীক্ষা এক ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠেয় ডিগ্রি পরীক্ষা পেছানো হতে পারে। তবে হরতাল থাকলেও উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ২৮ মার্চ ডিগ্রি ও ১ এপ্রিল এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। এতে ওই দুই পরীক্ষার প্রায় ১৭ লাখ পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। এর মধ্যে এইচএসসি ও সমমানে মোট পরীক্ষার্থী প্রায় ১২ লাখ ও তিনটি বর্ষ মিলিয়ে ডিগ্রি পাস কোর্সে মোট পরীক্ষার্থী প্রায় পাঁচ লাখ। এর মধ্যে চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার্থী প্রায় দেড় লাখ।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান হরতাল অবরোধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। পুরো শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলো হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়ে ১০ মার্চ লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী এখন পর্যন্ত একটি পরীক্ষাও হয়নি। যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে, তা-ও শুক্র ও শনিবার। তাতে আরও দুদিনের লিখিত পরীক্ষা বাকি আছে। এগুলো আগামী ২৭ ও ২৮ মার্চ নেওয়ার কথা। এর পর ২৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে।
এমন পরিস্থিতিতে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস কোর্সের পরীক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে। এ নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উদ্বেগের মধ্যে আছেন। পরীক্ষার ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ডিগ্রি পাস কোর্সের পরীক্ষা ২৮ মার্চ শুরু হয়ে ৩০ মে শেষ হওয়ার কথা। এখন এই সময়ে পরীক্ষা হবে কি না, তা কেউ বলতে পারছে না। এ কারণে পরীক্ষার্থীদের মধ্যেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গতকাল নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলা থেকে একজন অভিভাবক ফোন করে তাঁর উদ্বেগের কথা জানান এবং এই পরীক্ষা ঘোষিত সময়ে হবে কি না, জানতে চান।
পরে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন ও দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, যদি এ রকম হরতাল-অবরোধ চলতে থাকে, তাহলে পরীক্ষা পিছিয়ে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু করা হতে পারে। এ বিষয়ে আজকালের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, এ নিয়ে তাঁরা খুবই সমস্যার মধ্যে পড়বেন। কারণ তাঁরা কিছুদিন আগে একটি ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ ঘোষণা করেছেন। যাতে কখন কোন পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ হবে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট মুক্ত করা। কিন্তু এভাবে পরীক্ষা পেছাতে বাধ্য হলে সেশনজট মুক্ত করা কঠিন হবে।
এইচএসসি পরীক্ষা: ১ এপ্রিল শুরু হয়ে ১১ জুন এইচএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন এখন পর্যন্ত ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ীই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় আছেন তাঁরা। ওই কর্মকর্তাদের মতে, বর্তমানে সারা দেশেই হরতাল-অবরোধ ডাকলেও সেটা পালিত হচ্ছে না। এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও তুলনামূলকভাবে পরিণত। এ জন্য চলমান হরতালের মধ্যেও পরীক্ষা নিতে খুব অসুবিধা হবে না। আগামী ২৯ মার্চ আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা থেকে এই ঘোষণা আসতে পারে।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ১ এপ্রিল থেকেই পরীক্ষা নেওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এ জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’
তবে এসএসসি পরীক্ষার সময়ও পরীক্ষার আগে এ রকম কথা বলেছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার আগের দিন এসে পরীক্ষা পেছানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।
সিটি নির্বাচনে পেছাবে পরীক্ষা: সময়সূচি অনুযায়ী ২৮ এপ্রিল এইচএসসির মনোবিজ্ঞান এবং চারু ও কারুকলা পরীক্ষা আছে। একই দিন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথা অনুযায়ী এ জাতীয় নির্বাচনের দিন যেসব এলাকায় নির্বাচন হয়, সেখানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এতে ওই দিন পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। ঢাকা শিক্ষাবোর্ড একজন কর্মকর্তা বলেন, এই দিনের পরীক্ষা তাঁরা সমন্বয় করে নেবেন।
পাঠকের মতামত