রাশিয়ার পারমাণবিক আক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই। যে কোনো মুহূর্তে আমেরিকা গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম মস্কো। যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম এমন সহস্রাধিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত করে রেখেছে ক্রেমলিন। দেশের নিরাপত্তায় পেন্টাগন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলেও প্রকৃতপক্ষে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিনের শনিবারের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
রাশিয়ার পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সত্যিই কোনো ব্যবস্থা নেই’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘চলতি বছরের পয়লা অক্টোবর থেকে প্রতি অর্থবছরে আফগানিস্তান, ইরাকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা হুমকি মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র প্রতি সপ্তাহে এক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে বলে ওবামা প্রশাসন প্রস্তাব করেছে।
স্বভাবই প্রশ্ন ওঠে- যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার পারমাণবিক ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে নিজ দেশকে বাঁচাতে কত টাকা খরচ করছে? রাশিয়ার কাছে অন্তত ১৬০০ এ রকম ক্ষেপণাস্ত্র আছে যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে সক্ষম। এগুলোর মধ্যে থেকে মাত্র কয়েকটি নিক্ষেপ করলেই যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, আর্থিক নেটওয়ার্ক এমনকি পুরো দেশের অর্থনীতিকে অচল করে দেয়া সম্ভব।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘মার্কিন প্রশাসন এজন্য এক পয়সাও খরচের চিন্তা করছে না। অথচ, সবাই জানে, রাশিয়ার বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র আমেরিকার দিকে তাক করে রাখা। বর্তমানে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপতর হচ্ছে। সম্প্রতি ভাদিমির পুতিন তার দেশের আশপাশের এলাকা, যেমন- ইউক্রেনে প্রসারণবাদী আচরণে পশ্চিমারা বাধা দিলে পারমাণবিক উপায়ে জবাব দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।’
গত সপ্তাহেই পুতিন একটি ডকুমেন্টারিতে ক্রিমিয়া দখলের ঘটনা স্মরণ করে বলেছেন তিনি তখন পশ্চিমা দেশগুলোকে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত রাখতে পারমাণবিক অস্ত্র ‘অ্যালার্ট’ রাখার কথাও চিন্তা করেছিলেন। তার কাছে মনে হয়েছিল, সবচেয়ে খারাপ পরিণতির জন্য তিনি প্রস্তুত আছেন। পুতিনের এ কথা অতটা পরিষ্কার বোঝা যেত না যদি না সামরিক কর্মকর্তারা এ কথা স্পষ্ট না করতেন যে, শান্তিপূর্ণ সময়েও রাশিয়ার বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকে।
প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রেসিডেন্টের সময়ে দেশটির নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থার ইতিহাস ও তাতে নানা ত্রুটির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
এদিকে, ইউক্রেন নিয়ে এমনিতেই পশ্চিমা জোটের সঙ্গে তীব্র কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছে রাশিয়ার। যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্ররা রাশিয়ার ওপর কয়েক দফা অবরোধও আরোপ করেছে। এতকিছুর পরও থামানো যাচ্ছে না রাশিয়াকে। হঠাৎ হঠাৎ গর্জে উঠছে রুশ ভাল্লুক। ইউক্রেনে তো চলছেই, এবার ন্যাটো জোটের ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থায় যোগ দিলে ডেনমার্কের জাহাজে পরমাণু হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে মস্কো।
শনিবার ডেনমার্কে রুশ রাষ্ট্রদূত মিখায়েল ভেনিন সরাসরিই এই হুমকি দেন। স্থানীয় একটি পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ভেনিন বলেন, ‘আমি মনে করি না ডেনমার্ক মার্কিনিদের নিয়ন্ত্রিত এই ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থায় যোগ দেয় তাহলে কী পরিণতি হবে তারা তা বুঝতে পারছে। যদি সত্যিই তেমন কিছু ঘটে তাহলে ডেনমার্কের যুদ্ধ জাহাজগুলোকে রুশ পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু হতে হবে।’
গত বছরের আগস্টে ডেনমার্ক জানিয়েছিল, তারা ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থায় অন্তত একটি ফ্রিগেট যুদ্ধজাহাজ নিয়ে হলেও অংশ গ্রহণ করবে।
তবে সেসময় দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিকোলাই ওয়ামিন বলেছিলেন, রাশিয়ার কথা মাথায় রেখে তারা এই ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থায় যোগ দিচ্ছেন না। তাই রাশিয়া এর মধ্যে হস্তক্ষেপ করবে না বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। দ্য টেলিগ্রাফ।
পাঠকের মতামত