ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সাম্প্রতিক কালে দেদারছে সোনা ও মাদক পাচার হচ্ছে। চোরাকারবারীরা জেলার কালীগঞ্জ, কোটচাদপুর, মহেশপুর, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা মাদক ও সোনা পাচারের গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহার করছে।আন্তদেশীয় সোনা চোরাকারবারীদের কাছে ঝিনাইদহ নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারে ভারতে সোনা ও ফেনসিডিল পাচার হলেও উদ্ধারের চিত্র ব্যাপক হতাশা জনক। আবার দেখাযাচ্ছে উদ্ধারকৃত সোনা ও মাদকের সঠিক জব্দ তালিকা হচ্ছে না। গায়েব হয়ে যাচ্ছে আটকৃত মালামাল। ধরা পড়ছেনা গডফাদাররা। সীমান্তে প্রতিদিন বিজিবি সদস্যরা লাখ লাখ টাকার ইয়াবা, মদ ও ফেনসিডিল উদ্ধার করছে। তারপরও মাদকের ভয়াল থাবা কমছে না। ঝিনাইদহের বারবাজার ও কালীগঞ্জের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট মাদকের এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করছে। জানা গেছে, কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ গত ৪ ও ১০ মার্চ দু’দফা সোনার চালান আটক করে। এ সময় ধরা পড়ে তিন চোরাকারবারী। আটককৃতারা হলো মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইল থানার গোবিদার গ্রামের হাজী নুর মোহাম্মদের ছেলে জসিম উদ্দিন, চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার বাজারপাড়ার ষষ্ঠি কর্মকারের ছেলে সুনিল কর্মকার এবং একই গ্রামের ফরজুল্লাহ মোল্লার ছেলে ওবাইদুল্লাহ মোল্লা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়। এ দুই মামলার আসামীদের মধ্যে সুনিল কর্মকার ও ওবাইদুল্লাহ মোল্লাকে দুই দিনের পুলিশ রিমান্ড শেষে গত ২০মার্চ আদালতে পাঠায়। অপরজন জসিম উদ্দিনকে গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহ জেলা কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে তাদের কাছ থেকে বড় ধরনের কোন তথ্য আদায় করা যায়নি বলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এদিকে প্রকাশ হওয়া এ দুইটি ঘটনার আড়ালে দুই দফায় আরো অন্তত ৮ কেজি সোনা আটকের গুজব রয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে গত ৪ মার্চ ভোরে পৃথক ভাবে স্বর্ণের দুইটি চালান ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটি চালানের ১১৫০ গ্রাম উদ্ধার দেখানো হয়। অপর চালানের ৪ কোটি টাকার স্বর্ণের কোন হদিস আজো পাওয়া যায়নি। সুত্র মতে গায়েব করা এ স্বর্ণ বহণকারী ছিল দর্শনার মঞ্জু ও তৈল ইউসুফ নামের দুই ব্যক্তি। ৯০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে স্বর্ণসহ গোপনে ছেড়ে দেয়া হয় তাদের। এছাড়াও ১০ মার্চ উদ্ধার করা হয় আরো ৮৯৩ গ্রাম সোনা। সব শেষ ২০ মার্চ শুক্রবার ভোর রাতে ৪ কেজি স্বর্ণ নিয়ে টয়েটা একটি প্রাইভেট কার কোটচাঁদপুর-জীবননগর সড়কে পুলিশ সোর্সে পাতা ফাঁদে ধরা দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সুত্র জানিয়েছে কোটচাঁদপুরের এক পুলিশ সোর্সের বাড়িতে ওই দিন সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত দেনদরবার করা হয় এবং ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয় মালামালসহ ঢাকালে দুই চোরাকারবারিকে। মধ্যস্থতাকারীকে দেয়া হয় দুই লাখ টাকা। বিকেলে এ খবর জানাজানি হয়ে পড়ে। এরপর তোলপাড় শুরু হয় । চিহ্নিতরা ঘটনা ধামা চাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠে। বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কথা হয় কোটচাঁদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সাইদুল ইসলাম শাহিনের সাথে। তিনি খবর নাকচ করে দিয়ে বলেন, চলতি মাসে সোনার বড় দুইটি চালান সহ ৩ জনকে আটক করার কারনে পাচারকারী চক্র তার বিরুদ্ধে রিউমার ছড়িয়ে দিতে পারে। তিনি আরো বলেন আটক করা সোনা গায়েব করার কোন সুযোগ নেই। কারন হিসেবে তিনি জানান, আগে দুই দফায় আটক করা সোনা স্থানীয় সাংবাদিকদের সামনে জব্দ করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন পুলিশ সোর্স পরিচয়ে কেও সোনা আটক করে পাচারকারীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এ খবর খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও দাবী করেন তিনি। সোনা আটক করা সংক্রান্তে কোন তথ্য পাওয়া গেলে তাকে জানানোর অনুরোধ করেছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। বিশেষ সুত্র আরো জানায় এলাকার একজন চিহ্নিত সোর্স সাদা পোষাকধারী পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে সোনা ও মাদক পাচারকারীদের পিছু ধাওয়া করে থাকে। কেও ধরা পড়লে টাকা আদায় করে মালামালসহ ছেড়ে দেয়া হয়। দাবী করা অর্থ যারা দিতে ব্যর্থ হয় তাদের কেবল থানায় হাজির করা হয় এবং মামলা দেয় পুলিশ। চোরাকারবারীদের ধরার জন্য একটি পরিচিত মাইক্রো ব্যবহার করা হয়ে থাকে বলে স্থানীয় ভাবে জানা গেছে। বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক ওই পুলিশ সোর্সের নাম স্থানীয় কেও উচ্চারণ করার সাহস রাখেনা। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন সেই দলের পক্ষে থাকে ওই সোর্স। সোনা ও মাদক নিয়ে বানিজ্য করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সোনা পাচারকারী এবং মাদক ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ দিন ধরে কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, জীবননগর সীমান্ত ব্যবহার করে আ্সছে। শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সোনা পাচারের কাজটি করে থাকে তারা। অন্যদিকে ঝিনাইদহের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বেপরোয়া ভাবে ইয়াবা, মদ ও ফেনসিডিল পাচার হচ্ছে। গত বছরে শেষ দিকে পুলিশ ও ডিবি পুলিশ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল পরিমান ফেনসিডিল ও ইয়াবা আটক করতে সমর্থ হলেও নতুন বছরে মাদক উদ্ধারের চিত্র হতাশা জনক বলে মনে হচ্ছে। তবে পুলিশের একটি সুত্র জানায় মাদক বিরোধী অভিযানের কারণে চোরাকারবারীরা আপতত তাদের কৌশল পাল্টেছে।
প্রকাশিত: ২২/০৩/২০১৫ ৬:৫১ অপরাহ্ণ
উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের গহীন পাহাড়ি এলাকা তেলখোলাতে এক চাকমা ...
পাঠকের মতামত