ইসরাইলের টনক নেড়ে দিয়েছেন স্টিফেন হকিং

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বর্তমান বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ইসরাইলের জেরুজালেম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কনফারেন্সে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসী ও জবর-দখলমূলক নীতির কারণেই এ কনফারেন্স প্রত্যাখ্যান করেন বলে তিনি জানান। সম্প্রতি এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান।

স্টিফেন হকিংয়ের এ সিদ্ধান্ত ইসরাইলের জন্য এক বড় ধরনের আঘাত বলে গার্ডিয়ানের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা স্টিফেন হকিংয়ের পথ ধরে আরো অনেক বিজ্ঞানী এ কনফারেন্সে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি হকিংয়ের মত একই মতাদর্শের সংগীতশিল্পী, চিত্রকর ও লেখকরাও কনফারেন্সে যোগ দেননি।

ইসরাইলের অর্থনীতি ও সামরিক শক্তি মূলত বিজ্ঞাননির্ভর। আর ইসরাইলের বিজ্ঞান ও গবেষণার প্রায় সবই জড়িত ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে।

স্টিফেন হকিংয়ের এ প্রত্যাখ্যানের ঘটনা ইউরোপ ও আমেরিকার বিজ্ঞানীরা ব্যাপকভাবে অনুসরণ করতে পারেন। ইসরাইলের জন্য এখন এ হুমকিটা অপেক্ষা করছে বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। ইসরাইলকে একটি অবৈধ রাষ্ট্র ভেবে এর সঙ্গে সব ধরনের সহায়তা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন তারা।

রোববার গার্ডিয়ানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার দিন কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এটি ফেসবুকে ১ লাখ বারের বেশি শেয়ার হয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতি ইসরাইলের আগ্রাসী নীতির কারণে হকিং স্পষ্টভাবে কনফারেন্স প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেন। তার এ প্রত্যাখ্যান বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।

স্টিফেন হকিং ছিলেন এ কনফারেন্সের মূল আকর্ষণ। সাংবাদিকরা তাকে ‘দি পোস্টার বয় অব দি একাডেমিক বয়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ ইসরাইলের একাডেমিক বিষয় প্রত্যাখ্যানের জন্য এখন হকিং আদর্শ হয়ে গেলেন। তারই পথ ধরে ইউরোপ-আমেরিকার অন্য বিজ্ঞানীরাও হাঁটবেন বলে ভাবা হচ্ছে।

হকিংয়ের এ প্রত্যাখ্যানকে উদযাপন করেছেন ‘বয়কট, ডিভেস্টম্যান্ট অ্যান্ড স্যাঙ্কশন’ (বিডিএস) এর সমর্থকরা। বিডিএসের সমর্থকরা ইসরাইলকে বয়কট ও নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী।

বিডিএসের সমর্থকদের অশ্রাব্য ভাষায় কটূক্তি করেছে ইসরাইলি ওই কনফারেন্সের আয়োজকরা। তাদের এ অশ্রাব্য ভাষার কটূক্তির বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছে ইসরাইলেরই বহুল প্রচারিত পত্রিকা ‘হারেৎজ’।

স্টিফেন হকিং ফিলিস্তিনিদের ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তার এ অবস্থান বিডিএসের ক্যাম্পেইনের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। বিডিএসের ক্যাম্পেইনের পক্ষে অর্থাৎ ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরাইলের আগ্রাসী নীতি, জোর-জবরদস্তি ও আরব ভূমি আগ্রাসের বিরুদ্ধে এখন জনমত তৈরি হয়েছে।

গার্ডিয়ানের এক জরিপে দেখা যায়, স্টিফেন হকিংয়ের বয়কটের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ।

ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থিত হলেও এটি ইউরোপিয়ান রিসার্চ অ্যারিয়া (ইআরএ)-এর সদস্য। এ সদস্যপদের সুবাদে ইউরোপের গবেষণাগারগুলোর সঙ্গে ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রয়েছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্ট সদস্যরা ইসরাইলের এ সদস্যপদের বিরোধিতা করে আসছে। কারণ জাতিসংঘ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মানবাধিকার নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে ইসরাইল। ইউরোপিয়ান কমিশনও তাদের এ দাবির পক্ষে সাড়া দিয়েছে।

তারা বলছেন, গবেষণাগারের গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবাধিকার তথা মানব কল্যাণ- যা ইসরাইলের আচরণের পরিপন্থী।

ইসরাইলের গবেষণাগারগুলোর সঙ্গে দেশের সামরিক শক্তি, অর্থনীতি ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। ইসরায়েল তার প্রতিরক্ষা বাহিনীর সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও প্রযুক্তিগত শক্তির উৎস গবেষণাগার ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই নিয়ে থাকে। ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে যদি একাডেমিক, গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে ইসরাইল নিশ্চিত দুর্বল হয়ে পড়বে।

উপরিউক্ত বিষয় যদি সত্যি হয়, তাহলে নির্দ্বিধায় বলা যায়- স্টিফেন হকিং অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্রটির বুকে কাঁপন লাগিয়ে দিয়েছেন।