প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৩ ২:২৮ পিএম

মুকুল কান্তি দাশ, চকরিয়া:
তীব্র তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরমে চকরিয়ায় আশংকাজনক হারে রেড়ে যাচ্ছে ডায়রিয়া রোগি। গরম থেকে বাঁচতে মানুষ ছুটছে শীতল আশ্রয়ের খোঁজে আর কেউ খাচ্ছে ঠান্ডা জাতীয় খাবার। ফলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সরকারি ও বেসবরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে ডায়রিয়া রোগির সংখ্যা।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আমির হামজা বলেন, গত ১৫দিন অর্থাৎ এপ্রিলের ১৫ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬’শ ১জন রোগি ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ রয়েছে ১’শ ৬৭ জন, মহিলা রয়েছে ২’শ ৭২ জন এবং শিশু রয়েছে ১’শ ৬২জন।

এসব রোগি অধিকাংশ রোগি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও নতুন করে প্রতিদিন ৪০-৫০ করে ডায়রিয়া রোগি ভর্তি হচ্ছে। এসব ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা।

তবে, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও ডায়রিয়া রোগির সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়েছে। প্রতিটি হাসপাতালে দিনে ৩০-৪০জন করে ডায়রিয়া রোগি ভর্তি হচ্ছে।

চকরিয়া মা, শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের এমডি মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, তীব্র গরমের কারণে হঠাৎ করে ডায়রিয়া রোগি বেড়ে গেছে। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কও রয়েছে। এছাড়াও প্রাইভেট ডাক্তারদের চেম্বারেও ডায়ারিয়া ও পেট ব্যথা নিয়ে রোগি চিকিৎসা নিচ্ছে বলে খবর নিয়ে জানা গেছে।

এদিকে, অতিরিক্ত ডায়রিয়া রোগির কারণে চকরিয়ায় কলেরা স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ দিতে পারছেনা কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। যা দিচ্ছে প্রয়োজনীয়তার তুলনায় খুব কম বলে জানিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব কামাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, যেভাবে গরম পড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে ডায়রিয়া রোগির সংখ্যা আরও বাড়বে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে কলেরা স্যালাইন সরবরাহ করা জরুরী।

সরজমির ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিকরা গরম থেকে বাঁচতে কাজ ছেড়ে দিয়ে শীতল স্থান খুঁজে বেড়াচ্ছে। কাজ বাদ দিয়ে ওইসব শীতল স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন শ্রমিকরা। ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা গরম থেকে বাঁচতে পুকুরে ও নদীতে ডুবে রয়েছেন।

শ্রমিক মোজাম্মেল বলেন, তীব্র গরমের কারণে কাজ করতে পারছিনা। বিশেষ করে কাজের সময় গরমটা বেশি। আমাদের কাজের সময় হচ্ছে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এসময়টাতে গরমের তীব্রতা বেশি। যার কারণে কাজ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এই তীব্র গরমের কারণে অনেক অনেক শ্রমিক ডায়রিয়া ও পেটব্যাথায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত ভর্তি হতে হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন বদরখালীর বাসিন্দা মরিয়ম খাতুন। তিনি বলেন, দুইদিন ধরে প্রচন্ড পেট ব্যথা ও সাথে ডায়রিয়া শুরু হয়। স্থানীয় ডাক্তার থেকে ওষুধ নিয়ে খেয়েছি। তারপরও কোন পরিবর্তন হয়নি। তারপর ছেলেরা আমাকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। শরীরে স্যালাইন পুশ করেছে এবং খাবার স্যালাইনও খাচ্ছি। এখন মোটামুটি ভালো লাগছে।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা.শোভন দত্ত বলেন, তীব্র গরমের কারণে গত ১৫দিন ডায়রিয়া রোগি এসেছে প্রচুর। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় খুব বেশি। এসব ডারিয়া আক্রান্ত রোগিদের সেবা দিতে গিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গরমের কারণে মানুষ রাস্তার পাশে বিক্রিত বিভিন্ন ধরনের ঠান্ডা শরবত খাচ্ছেন। এর ফলে ডায়রিয়া হচ্ছে। এসব খাবার ছাড়াও পঁচা-বাসি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যতটুকু সম্ভব গরম এড়িয়ে চলতে হবে। বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হলে প্রচুর পরিমাণে খাবার স্যালাইন খেতে হবে। যদি ডায়রিয়া ও পেট ব্যাথা বেশি হয় তাহলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে।

পাঠকের মতামত

সেন্টমার্টিন চ্যানেলে ট্রলার ডুবি, দুই উদ্ধারকারীসহ এখনও নিখোঁজ তিন

           আব্দুস সালাম,টেকনাফ (কক্সবাজার) কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনদ্বীপ যাওয়ার পথে বঙ্গোপসাগরের শাহপরীরদ্বীপ গোলারচরের মোহনায় এফবি ...