প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২২ ১০:৫৭ এএম

 

মোঃ হাবিবুর রহমান, নওগাঁ::
নওগাঁ সদর থানাসহ ১১টি উপজেলায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ১৬৮টি বেসরকারি এতিমখানা অধিকাংশ ভুয়া এতিম শিশু দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ ছাত্রদের মা-বাবা থাকলেও অনেক মাদ্রাসা ছাত্রদের এতিম পরিচয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্তাদের যোগসাজশে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা হরিলুট করছে।

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যে কয়েকটি এতিমখানার বরাদ্দ বন্ধ ও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানায় জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর। নওগাঁয় এতিমখানাগুলোতে বছরে সরকারি বরাদ্দ ৮ কোটি ২৫ লাখ ৬ হাজার টাকা।

নওগাঁ জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তাদের তালিকা অনুযায়ী জেলার ১১টি উপজেলায় ১৬৮টি বেসরকারি এতিমখানা রয়েছে। প্রতিটি অসহায় দুস্থ্য এতিম শিশুর জন্য দেওয়া হয় প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা। এসব এতিমখানায় বছরে সরকারি বরাদ্দ ৮ কোটি ২৫ লাখ ৬ হাজার টাকা। এসব এতিমখানার অধিকাংশই মাদ্রাসাভিত্তিক লিল্লাহ বোর্ডিং। আর এসব এতিমখানায় সরকারি ভাতাভোগী এতিম রয়েছে ৩ হাজার ৪শ ৪০ জন। প্রতি মাসে তাদের ২ হাজার টাকা করে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়।

জেলার সব থেকে বেশি এতিম ও এতিমখানা রয়েছে মহাদেবপুর উপজেলায়। কাগজে-কলমে এতিমের সংখ্যা ও সরকারি বরাদ্দ এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি। তবে বাস্তব চিত্র একেবারেই উল্টো। এ উপজেলায় কাগজে-কলমে ৩৪টি বে-সরকারি এতিমখানা রয়েছে। যাতে এতিম শিশুর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১ হাজার ১শ ৫৪ জন।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ভাতাভোগী প্রতিটি এতিম শিশুর মহাদেবপুর উপজেলার বাশবারিয়া বে-সরকারি শিশু সদন ও মাদ্রাসায় ২০ জন এতিমের জন্য মাসিক বরাদ্দ ৪০ হাজার টাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এতিমখানার সাইনবোর্ড টাঙানো প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ। ঘরটির মধ্যে কিছুই নেই। জানালা-দরজা ভাঙা।

মোবাইলে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ ইউসুফ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরীক্ষা শেষে ছাত্রদের ১০দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে।

ছাত্র সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠানটি নতুন তাই তেমন ছাত্র এখনও ভর্তি করাতে পারেননি। তবে ৩৭ জন ছাত্র আছে। প্রতিষ্ঠানটিতে ২০ জন ভাতাভোগী এতিম থাকলেও বাস্তবে তা পাওয়া যায়নি।

সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতি একজন ভাতাভোগী এতিম শিশুর বিপরীতে থাকতে হবে ২ জন। অর্থাৎ ২০ জন ভাতাভোগী থাকলে সেখানে থাকতে হবে ৪০ জন এতিমশিশু। কিন্তু তার প্রতিষ্ঠানে সর্বমোট ৩৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যদিও এই ৩৭ জন শিক্ষার্থীর সঠিক কোন তথ্য দিতে পারেননি তিনি।

তিনি বলেন, উপজেলা কর্মকর্তা ও স্থানীয় এমপি মহোদয়ের সুপারিশক্রমে এসব বরাদ্দ পেয়েছেন।

এ উপজেলার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের তালিকায় রয়েছে সফাপুর আখতার হামিদ সিদ্দিকী বেসরকারি শিশু সদন মাদ্রাসা। এ মাদ্রাসায় ৯০ জন এতিম পান সরকারি ভাতা। এ মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসার কাগজে কলমে সর্বমোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১০ জন। তবে ব্যস্তবচিত্র ভিন্ন। উপস্থিত শিক্ষার্থী রয়েছে ৫০ থেকে ৬০ জন। কাগজ কলমের সাথে উপস্থিতির এত পার্থক্য হওয়ার কারণ প্রতিষ্ঠান প্রধান আব্দুল ওয়াহেদ সাহেবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাদ্রাসায় আবাসিক অনাবাসিক ছাত্র রয়েছে। আবার অনেক ছাত্র ছুটিতে আছে। তাই উপস্থিতি কম।

ভাতাভোগী এতিমদের বিষয়ে তিনি বলেন, তার মাদ্রাসায় ৯০ জন ভাতাভোগী শিক্ষার্থী রয়েছে। নিয়ম অনুসারে ৯০ জনের বিপরিতে এতিম শিক্ষার্থী থাকার কথা ১৮০ জন। কিন্তু তা তিনি দেখাতে পারেননি।

এছাড়াও এ উপজেলার আরেকটি প্রতিষ্ঠান ঈশ্বর লক্ষীপুর মবেজ উদ্দীন বে-সরকারি শিশু সদন। এখানে ভাতাভোগী এতিমের সংখ্যা ৬৫ জন। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কাগজে কলমে ১০৭ জন। যদিও এ প্রতিষ্ঠানে এতিম থাকর কথা ১৩০ জন। বাস্তবচিত্র আরও ভায়াবহ। এমন চিত্রের সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেননি প্রতিষ্ঠান প্রধান। এ সময় এতিমখানার কয়েকজন শিশুছাত্রের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, তাদের সবার মা-বাবা আছেন।

এদিকে বদলগাছী উপজেলার খোজাগাড়ী এতিমখানা শিশু সনদ ও নূরানী মাদ্রাসায় ১৯ জন এতিমের জন্য মাসিক বরাদ্দ ৩৮ হাজার টাকা। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, এতিমখানাতে ৩৮ জন এতিম থাকার কথা থাকলেও সেখানে ৬-৭জন এতিম ছাত্র দেখতে পাওয়া গেছে। এতিমদের সঠিক তথ্য দেখতে চাইলে প্রতিষ্ঠান প্রধান আতোয়ার হোসেন বলেন, এতিমখানার তালিকা ও কাগজপত্র কমিটির সাধারণ সম্পাদকের কাছে। তার সামনেই এতিম হিসেবে দেখানো এক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাবা ও মা জীবিত আছেন।

অপর এক শিশু ছাত্রও তার বাবা থাকার কথা জানিয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাদের এখানে অনেক এতিম আছে। সরকারি বরাদ্দ টাকায় তাদের কিছু হয় না। তবে তারা প্রচুর ব্যক্তিগত সাহায্য পান। তাদের প্রতিষ্ঠান ভালো চলছে বলে দাবি করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এসব মাদ্রাসা ও এতিমখানার অধিকাংশ ছাত্ররা গ্রামের লোকজনের বাড়িতে লজিং থাকে। এতিমদের খাবারের বরাদ্দকৃত টাকা শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ভাগাভাগি করে খায়। সমাজসেবা অধিদফতরের নিয়মানুযায়ী যেসব শর্তে বরাদ্দ আসে তার ছিটেফোটাও নেই বেশির ভাগ এতিমখানায়। তারপরও বিভিন্ন তদবিরে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে এতিমখানাগুলোতে। সংশ্লিষ্টদের কর্তাদের যোগসাজশে সরকারি বরাদ্দের টাকা লুটপাট করছে মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষকবৃন্দরা। এতিমদের টাকা যাতে নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় হয় সে জন্যে সঠিক তালিকা তৈরি করতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

মহদেবপুর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান জানান, আমি এ উপজেলায় নতুন। আগের কর্মকর্তা সব কিছু করে গেছেন। আমি শুধু ভাতা প্রদান করেছি।

এ বিষয়ে কোনো অনিয়ম হলে তা আমি বলতে পারবো না। তবে এবার আমি তদন্ত সাপক্ষে সঠিক প্রতিবেদন প্রেরণ করবো। ইতিমধ্যে কয়েকটি এতিমখানা পরিদর্শন করেছি। কিছু অনিয়মও পেয়েছি। তা আমি উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

পাঠকের মতামত

ঘটনাপ্রবাহঃ এতিমখানা

টেকনাফ পৌরসভার সহযোগিতায় মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান সপ্তাহ শুরু

           আব্দুস সালাম,টেকনাফ(কক্সবাজার) টেকনাফে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মোঃ আদনান চৌধুরীর সার্বিক সহযোগিতায় ...

র‍্যাব সিপিসি-২ আড়াই বছরে ৪৫ লাখ ইয়াবা ৩৬ কেজি আইস ৭৬ টি অস্ত্র উদ্ধার

         জাহাঙ্গীর আলম টেকনাফ। কক্সবাজার র‍্যাব -১৫ সিপিসি-২ টেকনাফের হোয়াইক্যং ক্যাম্প গত আড়াই বছরের ৪৫ লাখ ...