উখিয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের উখিয়ায় একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষ থেকে এক রোহিঙ্গা তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত তরুণীর নাম ইয়াসমিন আক্তার (১৮)। সে কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি ব্লিকের আব্দুল গফুরের মেয়ে।
মঙ্গলবার সকালে উখিয়া সদরের জলিল প্লাজার আরাফাত হোটেল নামক আবাসিক হোটেলের চতুর্থ তলার ৩০৪ নম্বর কক্ষ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ও পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)এর একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
এব্যাপারে হোটেল ম্যানেজার শাকুর মাহমুদ বলছে তার অনুপস্থিতিতে বোনের জন্য অপেক্ষার করার কথা বলে ৩ ঘন্টার জন্য রুম ভাড়া নেয়। সময় শেষে বেরিয়ে না এলে দরজায় নক করি সাড়া শব্দ না পেয়ে পুলিশে খবর দেই। দরজার ভিতর থেকে আটকানো ছিল বলে তিনি জানায়।
এ ঘটনায় হোটেল বয়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
উখিয়া থানা পুলিশ বলছে, সোমবার গভীররাতে ঘটনার খবর পেয়ে সকালে কালো বোরকা ও সাদা শার্ট পরিহিত ওড়না পেছানো ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা হিসেবে বিবেচনা করছে পুলিশ। নিহত তরুণী একাই ওই কক্ষটি ভাড়া নিয়েছিলেন।
ওই হোটেলের নিবন্ধনে লিপিবদ্ধ তথ্য বিবরণী বলছে, ৩০৪ নম্বর কক্ষটি গত সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় ৩০০ টাকার বিনিময়ে ভাড়া নেন ওই তরুণী। তবে সেখানে তরুণীর আসল পরিচয় গোপন রাখেন তিনি। নুসরাজাহান লিজা (২৩) নামের পরিচয় দিয়ে ঠিকানা উল্লেখ করা হয় টেকনাফের হ্নীলা।
এ ছাড়াও বিবরণীতে পিতার নাম জিসান মিয়া, মাতা রোজিনা, একটি ফোন নাম্বার এবং পেশা চাকরি উল্লেখ করা হয়।
কুতুপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি ব্লকের ক্যাম্প সেক্রেটারি মাজেদ আব্দুল্লাহ জানান, নিহত ইয়াসমিন ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও ফোরাম নামক একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে।
নিহত তরুণীর মাতা জুহুরা খাতুন এটি হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করে জানান, সোমবার সকালে বাড়ি থেকে যথারীতি বের হন তার মেয়ে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেও বাড়ি না ফেরায় মেয়েকে ফোন করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাওয়া যায়। পরদিন সকালে ( মঙ্গলবার) হোটেল থেকে তরুণীর মরদেহ উদ্ধারের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে খবর পান তারা। পরে চেহেরা দেখে নিশ্চিত হন মরদেহটি তাদের মেয়ের।
জুহুরা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) একজন সদস্যের সঙ্গে তার মেয়ের সম্পর্ক ছিল। তার মেয়ের সঙ্গে ওই এপিবিএন পুলিশের মেলামেশার ব্যাপারটি একপর্যায়ে পরিবারের চোখে পড়লে, তাকে (পুলিশ সদস্য) পারিবারিকভাবে প্রস্তাব দেওয়ারও অনুরোধ করেছিলেন বলে নিহত তরুণীর মাতা জুহুরা খাতুন দাবি করেন।
নিহত তরুণীর স্বজন ও প্রতিবেশীরাও একই কথা জানিয়েছেন। তারা জানান, সোমবার মাসের ১ তারিখ হওয়ায় কর্মস্থল থেকে নিহত ইয়াসমিন তার মাসিক বেতন উত্তোলন করেন। সেই বেতন নিয়ে ঘুরতে যাবার কথা তার প্রতিবেশীদের জানিয়েছেন ওই তরুণী এমনটাই দাবি করছেন তারা।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মুহাম্মদ আলী বলেন, মধ্যরাতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হয়। ভেতর থেকে কক্ষটি বন্ধ ছিল। সকালে সিআইডির প্রাথমিক তদন্ত শেষে বেলা ১২টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু ফ্যানের সাথে ঝুলানো অবস্থায় মরদেহটি পাওয়া যায়, তাই অপমৃত্যু মামলা রুজু করে ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার মর্গে প্রেরণের প্রস্তুতি চলছে। ময়নার তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
পাঠকের মতামত