নিজস্ব প্রতিবেদক:
নিজ দেশে ফেরার আকুতি বিশ্বকে জানাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা।
রোববার ‘গো হোম – বাড়ি যাবো’ শিরোনামে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে স্ব-উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে এ আকুতি জানায় বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের নাগরিক।
এ সময় নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানিয়ে ৭ দফা দাবিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পৃথক সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। এদিন সকালের দিকে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে সমাবেশে যোগ দেয় রোহিঙ্গারা।
উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প-৯ এ গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যাবাসনসহ সাত দফা দাবিতে রোহিঙ্গারা জোরালোভাবে মানববন্ধন করছে। এ সময় তারা বার্মিজ, ইংরেজি ও রোহিঙ্গা ভাষায় তাদের দাবি তুলে ধরেন ব্যানার-ফেস্টুনের মাধ্যমে।
রোহিঙ্গাদের সাত দফা দাবি হলো- রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসন, ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল, অবিলম্বে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ গ্রামে পুনর্বাসন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, আইডিপি ক্যাম্প বন্ধ করে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা গ্রামগুলোকে পুনর্বাসন করা এবং সবশেষ মিয়ানমারে নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানায় তারা।
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন,”আমরা আমাদের দেশে চলে যেতে চাই। মিয়ানমার সরকারের কাছে আমাদের সাত দফা দাবি মেনে নিতে হবে। মেনে নিলে আমরা সবাই নিজ দেশে ফিরে যেতে রাজি হবো।”
এর আগে ‘গো হোম’ অর্থাৎ ‘বাড়ি যাবো’ ক্যাম্পেইন নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে অনলাইন-অফলাইনে রোহিঙ্গারা ব্যাপক প্রচারণা চালায়।
উখিয়ার বালুখালী, লম্বাশিয়াসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে বৃষ্টি উপেক্ষা করে রোহিঙ্গাদের এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টেকনাফের উনছিপ্রাং, চাকমারকুল, লেদা, ও শালবাগানে কর্মসূচি পালন করা হয় বলে জানা গেছে। একই সময়ে টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পের নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ করে রোহিঙ্গারা। ক্যাম্পগুলোর পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গারা এখানে অংশ নেয়।
একই দাবিতে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর নেতৃত্বে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দুর্বৃত্তের গুলি নিহত হন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন স্বপ্ন দেখানো নেতা মুহিবুল্লাহ।
তবে, এবারের সমাবেশের একক কোন আয়োজক কিংবা নেতৃত্ব পর্যায়ের কেউ সামনে না এলেও প্রচারপত্রে আয়োজক হিসেবে ‘নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী’ লেখা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গা বলেই ডাকা, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে আরাকানের গ্রামে গ্রামে প্রত্যাবাসন, প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত প্রত্যেক চুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশ, এনজিও, সংশ্লিষ্ট সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা, বার্মার ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল, সম্পত্তি ফেরত, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকারসহ নানা দাবী উত্থাপন করা হয় সমাবেশে।
সমাবেশ শেষে রোহিঙ্গারা স্ব স্ব ব্লকে ফিরে যায়। সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যদের কঠোর নজরদারি লক্ষ্য করা যায়।
ক্যাম্পেইন চলাকালীন সময়ে ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক মো: নাঈমুল হক জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এছাড়া উখিয়া থানা পুলিশের একটি দল নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে টহল দিতে দেখা যায়।
পাঠকের মতামত