
সোয়েব সাঈদ:
কক্সবাজারের রামুতে নির্মাণাধীন রেলওয়ে সড়কের কারণে রামু লম্বরীপাড়া থেকে সিপাহীর পাড়া হয়ে চৌমুহনীর সাথে সংযুক্ত আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল সড়ক অচল হয়ে পড়ায় আন্ডারপাস নির্মাণের দাবিতে বিশাল মানববন্ধন করেছে বৃহত্তর রামু লম্বরীপাড়াবাসী।
বৃহস্পতিবার (১২মে) বেলা ১১ টায় রামু উপজেলা গেইটে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে শতশত মানুষ প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।
এর পূর্বে সকাল ১০ টায় বৃহত্তর লম্বরীপাড়ার ভুক্তভোগী সর্বস্তরের জনসাধারণ নির্মাণাধীন রেলওয়ে সড়কে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে প্রচন্ড রোদের মধ্যে অচল হয়ে পড়া সড়ক দিয়েই এলাকাবাসী পায়ে হেঁটে রামু উপজেলা পরিষদ গেইটে এসে মানববন্ধনে শরীক হন।
সড়ক বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হাজী নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচির শুরুতে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করেন, লম্বরীপাড়া ইমাম পরিষদের প্রচার সম্পাদক হাফেজ জয়নুল আবেদীন।
লম্বরীপাড়া আলোর দিশারী যুবপরিষদের সভাপতি ও দারুল কুরআন নূরানী একাডেমীর পরিচালক হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুরের স্বাগত বক্তব্য ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে এলাকাবাসীর যৌক্তিক দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে বক্তব্য রাখেন, রামু ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম ভূট্টো, রামু উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক তপন মল্লিক।
এতে এলাকাবাসীর পক্ষে বক্তব্য রাখেন, ফতেখাঁরকুল ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি মামুনুর রশিদ, লম্বরীপাড়া সমাজ কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব দিদারুল আলম।
বিশাল এ মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এ সড়ক দিয়ে বৃহত্তর রামু লম্বরীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার মানুষ ও শতশত ছাত্র-ছাত্রীরা যাতায়াত করে আসছেন শত শত বছর ধরে। সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে বহুদিনের দূর্ভোগের অবসানে, জনদাবির বাস্তবায়নে এতদঞ্চলের মাটি ও মানুষের প্রিয়জন, বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমলের ঐকান্তিক প্রয়াসে ২০১২ সালের জানুয়ারিতে স্বেচ্ছাশ্রমে সম্প্রসারিতরূপে সড়কটি পূনঃনির্মিত হয়। তখন এমপি না হয়েও আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল নিজ উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কটি সম্প্রসারিতরূপে নির্মাণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন বলেই এলাকাবাসী নিজেরাই সড়কটিকে “সাইমুম সরওয়ার কমল সড়ক” হিসেবে নামকরণ করেন। কিন্তু ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত প্রস্ত ২০ ফুট ও প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘসড়কটি সচল রাখার স্বার্থে আন্ডারপাস নির্মাণের অনিবার্য প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের কাজ অব্যাহত রাখে । ফলে সুফল পেয়ে উঠার আগেই সড়কটি সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ায়
নিত্যনৈমিত্তিক যাতায়াতকারীদের দূর্ভোগ তো বাড়ছেই; সেই সাথে রেলওয়ের জমি অধিগ্রহণের ফলে ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়ে সড়কটির উভয় পাশে নতুন বসতি গড়ে তোলা পরিবারসমূহসহ অসংখ্য পরিবারের শিশু সন্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয়, মক্তব, মাদ্রাসায় যাতায়াতও অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে পুরো এলাকাবাসীর মাঝে চাপা ক্ষোভ ও চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
এমতাবস্থায় এলাকাবাসী গত ২২ সেপ্টেম্বর মাননীয় রেলমন্ত্রী ও এমপি মহোদয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি যথাযথভাবে সচল করার স্বার্থে আন্ডারপাস নির্মাণের দাবি জানালেও এখনো তার কোন সুফল মিলেনি। তাই বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আন্ডারপাস নির্মাণ করে সড়কটি সচল করার দাবিতে মাঠে নেমেছেন।
তারা এ বিষয়ে মাননীয় রেলমন্ত্রী ও এমপি মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তারা দাবি আদায় না হলে ভুক্তভোগী জনসাধারণকে সাথে নিয়ে আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারী দেন। সেই সাথে দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত সেখানে রেলপথের কাজ বন্ধ রাখার আহবান জানান।
এসময় বক্তারা আরও বলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে আমরা স্বাগত জানাই। রেলপথ নির্মাণে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। তবে রেলপথ যেমন জনস্বার্থে নির্মিত হচ্ছে তেমনিভাবে জনস্বার্থে সাধারণ সড়কও যেন সচল রাখা হয় সে ব্যাপারেই আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি । আমরা আশাবাদী জনবান্ধব সরকার জনকল্যাণেই সড়কটিতে একটি আন্ডারপাস নির্মাণ করে জনচলাচলের নাগরিক সুবিধা সুনিশ্চিত করবে।
এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে এলাকার মুরুব্বী নুরুল ইসলাম, আবছার মিয়া, নুরুল আমিন, ছফর মিয়া, হাজী ইলিয়াছ, ফয়েজ আহমদ মিস্ত্রী, মুহাম্মদ হানিফ, আব্দুচ্ছালাম, সিরাজুল মোস্তফা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহজাহান কোম্পানী, সমাজকর্মী মুজিবুর রহমান, তাজুল হক, আলাউদ্দিন, ফরিদুল আলম, হারুনুর রশিদ, রাশেদুল ইসলাম আনছারী, মোজাফফর আহমদ, জয়নাল আবেদীন, এহসানুল হক, নবী হোসাইন ( এ কে খান), ছাত্রলীগ নেতা ইমরানুল হক রিদওয়ান, মাসুদ পারভেজ রুবেলসহ এলাকার সর্বস্তরের অসংখ্য বিক্ষুব্ধ জনতা অংশ নেন।
পাঠকের মতামত