
আটোয়ারী (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ নানান জীব বৈচিত্র্য, অফুরন্ত ফুল ফসল আর শত শত মসজিদে ভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী। উপজেলা সদর হতে ৯ কিঃ মিঃ উত্তর- পূর্বে মির্জাপুর ইউনিয়নে বার আউলিয়া মাজার শরীফ। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে প্রতি বছর বাংলা সনের বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার এখানে ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় বার আউলিয়া মাজারে দিনব্যাপী বার্ষিক ওরশ মোবারক অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ বৈশাখ) সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ওরশ মোবারকের কার্যক্রম শুরু হয়ে রাত ১০টায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। ওরশ উপলক্ষে দিনব্যাপী চলবে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, মাজার জিয়ারত, মিলাদ মাহফিল ও তবারক বিতরণ। সকাল থেকেই জেলার প্রত্যন্ত এলাকা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানতের নগদ টাকা-পয়সা, ধান-চাল, মুরগি, কবুতর ও গরু-ছাগল ভক্তজনরা দান করবেন এবং সমবেত হবেন- ঐতিহাসিক বার আউলিয়া মাজার প্রাঙ্গণে।
এ উপলক্ষে বার আউলিয়া মাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মুসফিকুল আলম হালিম জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং নিরাপত্তা জোরদারের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ, আনসার, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ও গ্রাম পুলিশ সহ সকল আনুষ্ঠানিকতার মূল তদারকিতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ দায়িত্বে থাকবেন। রাত ১০টার মধ্যে ওরশ মোবারক এর সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে বলে জানান তিনি।
বার আউলিয়াদের আগমনের ইতিহাস বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেলেও ওলীদের ইতিহাস রহস্যাবৃত। তাঁদের লিখিত কোনো ইতিহাস আজও পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এই বার জন আউলিয়া সুদূর পারস্য ইয়েমেন ও আরবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে চট্টগ্রাম সহ পূর্ব বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থান গড়ে তুলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। পরে স্থল পথে রওয়ানা হয়ে ইসলাম প্রচার করতে করতে উত্তর বঙ্গের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছান এবং পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে স্থায়ীভাবে আস্তানা গড়ে তুলে ইসলাম প্রচার করেন। আটোয়ারীর মাটিকে পূণ্য ভূমিতে পরিণত করার পর সময়ের বিবর্তনে ওলীদের ওখানে সমাহিত করা হয়। গড়ে উঠে বার আউলিয়া মাজার শরীফ। উল্লেখ্য, হযরত হেমায়েত আলী শাহ্ (রঃ) ও হযরত নিয়ামত উল্লাহ শাহ্ (রঃ) একসঙ্গে রয়েছেন, যা জোড়া করব বলে পরিচিত বা মূল মাজার। অবশিষ্ট ১০ জন ওলীর কবরের প্রতিটি চারপাশে দেওয়াল নির্মাণ করে রাখা হয়েছে। কয়েকশ বছর আগে মূল মাজারের চারদিকে বিশাল এলাকা জুড়ে ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। সে জঙ্গলে বাঘ, ভাল্লুক ও বুনো শুকরসহ হিংস্র জীবজন্তু বাস করতো। বর্তমানে সেই গভীর জঙ্গল আর নেই। ওলীগণ আধ্যাত্মিক ক্ষমতা সম্পন্ন ছিলেন।
এই বারজন আউলিয়ার নাম তাম্রপদে খোদিত ছিল। স্থানীয় জনশ্রুতি মতে জানা গেছে, জমিদার কানাইলাল দলুইগং মাজারের জমি দান করার সময় তা সকলের নামে তাম্রপদে দানপত্রটি খোদিত করেন। সেই তাম্রপদটি হারিয়ে গেলেও ওলীদের নাম হারিয়ে যায়নি। বার জন আউলিয়া হলেন, (১) হযরত হেমায়েত আলী শাহ্ (রঃ), (২) হযরত নিয়ামত উল্লাহ শাহ্ (রঃ), (৩) হযরত কেরামত আলী শাহ্ (রঃ), (৪) হযরত আজহার আলী শাহ্ (রঃ), (৫) হযরত হাকিম আলী শাহ্ (রঃ), (৬) হযরত মনসুর আলী শাহ্ (রঃ), (৭) হযরত মমিনুল শাহ্ (রঃ), (৮) হযরত শেখ গরীবুল্লাহ্ (রঃ), (৯) হযরত আমজাদ আলী মোল্লা (রঃ), (১০) হযরত ফরিজ উদ্দীন আখতার (রঃ), (১১) হযরত শাহ্ মোক্তার আলী (রঃ), (১২) হযরত শাহ্ অলিউল্লাহ (রঃ)
লক্ষনীয় বিষয় যে, ওরশ মোবারক এর দিন সব ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই মাজারে আসেন। উৎসবে পরিণত হয় বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার। সে উৎসব যেন সৃষ্টিকর্তার কাছে চাওয়ার উৎসব। সকল স্তরের নারী-পুরুষ পূণ্য ভূমিতে এসে মানত করেন।পরিশেষে এখানকার ইতিহাস শুধু মাজার উন্নয়নের ইতিহাস।
পাঠকের মতামত